বিহারের রাজনীতিতে রবিবার একটি চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে, যখন জনতা দল ইউনাইটেড (JDU)-এর প্রাক্তন বিধান পরিষদ সদস্য (MLC) শ্রীরাঁজ প্রতাপ সিংহ হঠাৎ জাতীয় জনতা দল (RJD)-এর সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদবের সাথে দেখা করতে তাঁর পটনায় অবস্থিত বাসভবনে উপস্থিত হন। এই দেখা সভা প্রায় এক ঘন্টা ধরে চলে, যা রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
যদিও প্রাক্তন MLC দাবি করেছেন যে তিনি শুধুমাত্র শিষ্টাচার বশত জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন, কিন্তু বিহারের রাজনৈতিক পরিবেশে এই দেখা সভাকে শুধুমাত্র ‘শুভেচ্ছা’ বলে গণ্য করা হচ্ছে না।
দেখা সভার সময় এবং পরিবেশ
এই দেখা সভা রবিবার সকাল প্রায় ১০:৩০ টায় লালু যাদবের ১০, সার্কুলার রোডস্থিত সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় JDU-এর আর কোনও প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না, RJD-এর অন্যান্য বড় নেতাও ছিলেন না। দেখা সভার পরে যখন শ্রী রণবিজয় সিংহের সাথে গণমাধ্যমের প্রশ্নোত্তর হয়, তখন তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে লালুজির প্রতি অত্যন্ত সম্মান করি। তাঁর স্বাস্থ্য ভালো চলছে, এটা জেনে ভালো লেগেছে। আমি শুধু জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলাম, রাজনীতির কোনও কথা হয়নি।
শুধুমাত্র শিষ্টাচার?
যদিও শ্রীরাঁজ প্রতাপ সিংহ দেখা সভাকে ব্যক্তিগত সম্পর্কের অংশ বলে বর্ণনা করেছেন, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এ ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। কারণ গত কয়েক মাস ধরে বিহারে রাজনৈতিক জোট নিয়ে অনুমান প্রচুর। বিশেষ করে JDU-তে নীতীশ কুমারের NDA-তে ফিরে আসার পর কিছু নেতা অস্বস্তি বোধ করছেন এবং এমন পরিস্থিতিতে কোনও প্রাক্তন নেতার লালু যাদবের সাথে দেখা করা, সাধারণ শিষ্টাচার মনে হয় না।
লালু যাদবের নীরবতা এবং হাসি
দেখা সভার সময় লালু যাদব গণমাধ্যমের সাথে কিছু বলেননি, কিন্তু যখন ক্যামেরা তাঁকে দেখে, তখন তিনি হাসছিলেন। তাঁর এই নীরবতাও অনেক প্রশ্ন তৈরি করেছে:
তিনি কি কোনও রাজনৈতিক ইঙ্গিতের অপেক্ষা করছেন?
তিনি কি আবার পুরোনো নেতাদের নিজের দলে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন?
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বিহারে রাজনৈতিক জোটবদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। নীতীশ কুমারের NDA-তে ফিরে আসার পর JDU-এর অনেক পুরোনো নেতা নিজেদের অযোগ্য বোধ করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডাঃ সৌরভ ঝা বলেন: রাজনীতিতে কোনও দেখা সভা কেবল শিষ্টাচার হয় না, বিশেষ করে যখন তা বড় নেতাদের মধ্যে হয়। প্রাক্তন MLC-এর লালু যাদবের সাথে দেখা করা এমন ইঙ্গিত হতে পারে যে JDU-তে কিছু লোক এখনও মহাজোটের সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকতে চান।
JDU এখনও পর্যন্ত এই দেখা সভার উপর কোনও আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি, কিন্তু দলীয় সূত্রের মতে, শীর্ষ নেতৃত্ব এ ব্যাপারে নজর রাখছে। অন্যদিকে RJD শিবিরও এই বিষয়ে নীরবতা অবলম্বন করেছে, যা সন্দেহ আরও গভীর করে তুলছে। বিহারের রাজনীতিতে এটি প্রথমবার নয় যখন কোনও নেতা বিরোধী শিবিরের दिग्गजের সাথে দেখা করেছেন। এর আগেও অনেকবার নির্বাচনী বছরগুলিতে ‘জন্মদিনের শুভেচ্ছা’ বা ‘স্বাস্থ্যের উদ্বেগ’ এর আড়ালে দেখা সভা হয়েছে, যা পরবর্তীকালে জোট বা দল ত্যাগের ইঙ্গিত হয়েছে।