ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের ৫২তম প্রধান বিচারপতি নির্বাচিত হতে চলেছেন। বর্তমান প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার অবসরের একদিন আগে, কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রণালয় তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে বিচারপতি বি. আর. গাভাইয়ের নাম প্রস্তাব করেছে।
বিচারপতি বি. আর. গাভাই: ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না ১৬ এপ্রিল ২০২৫ কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রণালয়কে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছেন। তিনি বিচারপতি বি. আর. গাভাইকে পরবর্তী সিজেআই (Chief Justice of India) নিযুক্ত করার সুপারিশ করেছেন। বিচারপতি গাভাই ১৪ মে ২০২৫ ভারতের ৫২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন। এই পরিবর্তনের সাথে সাথে বর্তমান প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না ১৩ মে ২০২৫ অবসর গ্রহণ করবেন।
বিচারপতি গাভাই, যিনি অনুসূচিত জাতি থেকে আসেন, দেশের দ্বিতীয় সিজেআই হবেন যিনি এই সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্কিত। তাঁর পূর্বসূরী, সিজেআই কে. জি. বালকৃষ্ণনও অনুসূচিত জাতি থেকে ছিলেন, এবং তিনি এই পদে নিযুক্ত হওয়া প্রথম ব্যক্তি ছিলেন।
অনুসূচিত জাতি সম্প্রদায় থেকে আগত দ্বিতীয় প্রধান বিচারপতি
বিচারপতি বি. আর. গাভাইয়ের এই নিযুক্তি কেবলমাত্র ন্যায়িক দিক থেকেই নয়, সামাজিক দিক থেকেও ঐতিহাসিক। তিনি ভারতের দ্বিতীয় এমন প্রধান বিচারপতি হবেন, যিনি অনুসূচিত জাতি সম্প্রদায় থেকে আসছেন। এর আগে ন্যায়াধীশ কে. জি. বালকৃষ্ণন এই সম্মান অর্জন করেছিলেন। এই ঘটনা ভারতের সমावेशী গণতন্ত্র এবং ন্যায়বিচার ব্যবস্থায় বৈচিত্র্যের প্রতিনিধিত্বের একটি শক্তিশালী উদাহরণ।
বিচারপতি গাভাইয়ের ন্যায়িক যাত্রা
মহারাষ্ট্রের আমরাওয়তি জেলা থেকে আগত বিচারপতি বি. আর. গাভাই ১৯৮৫ সালে আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। তিনি বিখ্যাত ব্যারিস্টার রাজা ভোঁসলে'র সাথে কাজ করেছেন, যিনি মহারাষ্ট্রের সাবেক মহানির্বাচকও ছিলেন। ১৯৯২ সালে তাকে বোম্বাই হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর নিযুক্ত করা হয়। ২০০৩ সালে গাভাইকে বোম্বাই হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি করা হয়। ২০১৯ সালে তাঁকে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয় এবং এখন তিনি এই ন্যায়িক পদযাত্রার শীর্ষ স্থানে পৌঁছেছেন।
ন্যায়িক চিন্তাধারা এবং সামাজিক উদ্বেগ
বিচারপতি বি. আর. গাভাই ন্যায়িক সক্রিয়তার জন্যও পরিচিত। তিনি সম্প্রতি 'বুলডোজার অ্যাকশন' এর মতো মামলায় ন্যায়িক ভারসাম্য এবং সংবিধান অনুসারে প্রক্রিয়া অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছিলেন। ১৪ এপ্রিল ২০২৫, বাবা সাহেব আম্বেদকরের জন্মদিনে তিনি বলেছিলেন,'সংবিধান রচনার জন্য জাতি সর্বদা ডাঃ আম্বেদকরের কৃতজ্ঞ থাকবে। তাঁর নীতি এবং চিন্তাধারা ভারতকে ঐক্যবদ্ধ এবং অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়েছে।'
বিচারপতি বি. আর. গাভাইয়ের নিযুক্তি কেবলমাত্র ভারতের জন্যই নয়, বিশ্বের গণতন্ত্রের জন্যও একটি অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণ। এই নিযুক্তি দেখায় যে বৈচিত্র্য, অন্তর্ভুক্তি এবং সামাজিক ন্যায়বিচার ভারতীয় গণতন্ত্রের মূলে রয়েছে। বিশ্বব্যাপী মঞ্চে ভারতের এই পদক্ষেপ একটি শক্তিশালী প্রতীক হিসাবে দেখা হবে, বিশেষ করে সেসব দেশের জন্য যারা অন্তর্ভুক্তির দিকে অগ্রসর হচ্ছে।