ভারতীয় বাজার আজ বিশ্ববাজারের ইঙ্গিত, জিডিপি তথ্য এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কর্মকাণ্ডের উপর নির্ভর করবে। GIFT Nifty ৭৯ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে, কিন্তু অস্থিরতা সম্ভব।
শেয়ার বাজার আজ: ভারতীয় শেয়ার বাজারের চাল সোমবার বিশ্ববাজারের ইঙ্গিত, অর্থনৈতিক তথ্য এবং বিদেশী বিনিয়োগকারী (FII)দের কর্মকাণ্ডের উপর নির্ভর করবে। এই সপ্তাহে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ঘোষিত নতুন শুল্কের প্রতিও বিনিয়োগকারীদের নজর রয়েছে।
GIFT Nifty এবং প্রাথমিক ইঙ্গিত
সোমবার সকাল ৬:৪০ টায়, GIFT Nifty ফিউচার্স ৭৯ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে ২২,৩৫৯ তে লেনদেন করছিল, যা ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ভারতীয় বাজার আজ ইতিবাচক শুরু করতে পারে। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস, শুক্রবার সেনসেক্স ১,৪১৪ পয়েন্ট (-১.৯%) নেমে ৭৩,১৯৮ তে এবং निफ्टी ৫০ ৪২০ পয়েন্ট (-১.৯%) নেমে ২২,১২৫ তে বন্ধ হয়েছিল।
এশিয়ার বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
সোমবার এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বাজারে হালকা উত্থান দেখা গেছে। জাপানের নিক্কেই ইন্ডেক্স ০.৬৭% বেড়েছে, যখন টপিক্স ইন্ডেক্সে ০.৭৫% বৃদ্ধি দেখা গেছে। অস্ট্রেলিয়ার ASX ২০০ ইন্ডেক্স ০.২২% উপরে ছিল। তবে, দক্ষিণ কোরিয়ার বাজার জাতীয় ছুটির কারণে বন্ধ ছিল।
এদিকে, এই সপ্তাহে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ঘোষিত নতুন শুল্কের বিধি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সতর্কতা বজায় রয়েছে। মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক রবিবার বলেছেন যে, মেক্সিকো ও কানাডার উপর প্রস্তাবিত ২৫% শুল্কে সংশোধন সম্ভব, যদিও চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর ১০% অতিরিক্ত শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মার্কিন এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছে এবং প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, যদি মার্কিন তার সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে না যায়, তাহলে চীন তার বৈধ অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
মার্কিন বাজারে উত্থান
গত কার্যদিবসে মার্কিন বাজারে উত্থান দেখা গেছে।
- S&P ৫০০ তে ১.৫৯% বৃদ্ধি
- ডাও জোন্সে ১.৩৯% বৃদ্ধি
- Nasdaq তে ১.৬৩% বৃদ্ধি
তবে, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের কারণে বাজারে সারাদিন হালকা হ্রাস দেখা গেছে, কিন্তু ইন্ডেক্স পুনর্বিবেচনা এবং প্রযুক্তিগত ক্রয়ের কারণে মার্কিন বাজার অবশেষে সবুজে বন্ধ হয়েছে।
ভারতের অর্থনীতি এবং জিডিপি বৃদ্ধি
ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে ভারতীয় অর্থনীতি ৬.২% জিডিপি বৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা গত ত্রৈমাসিকের ৫.৬% এর চেয়ে ভালো। পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন মন্ত্রণালয় (MoSPI) ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের জন্য জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৫% করেছে, যা জানুয়ারির ৬.৪% পূর্বাভাসের চেয়ে কিছুটা বেশি।
তবে, জিডিপি তথ্যের ধারাবাহিক পরিবর্তন এবং গত ত্রৈমাসিকের সংশোধিত তথ্য অর্থনীতিবিদদের বিভ্রান্ত করেছে।
বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সতর্কতা এবং বিক্রয়ের চাপ
ভারতীয় বাজারে সম্প্রতি ব্যাপক বিক্রয় দেখা গেছে।
- BSE সেনসেক্সের P/E অনুপাত ২০.৪x এ নেমে এসেছে, যা ২০২০ সালের মে মাসের পর সর্বনিম্ন।
- কোভিড-১৯ এর সময় এই সংখ্যা ১৯.৫x এ পৌঁছেছিল।
FPI (Foreign Portfolio Investors)রাও বাজারের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। Samco গ্রুপের সিইও জিমিৎ মোদীর মতে, যতক্ষণ না মূল্যায়ন আকর্ষণীয় পর্যায়ে পৌঁছায়, ততক্ষণ FPI ভারতীয় বাজারে অধিক বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকবে।
বাজারে কি উদ্ধার সম্ভব?
ভারতীয় বাজারের চাল এই সপ্তাহে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর নির্ভর করবে:
বিশ্ববাজারের ইঙ্গিত – মার্কিন বাজারের দিক এবং এশিয়ার বাজারের উত্থানের প্রভাব ভারতীয় বাজারে পড়বে।
মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ – যদি মার্কিন চীনের উপর নতুন শুল্ক আরোপ করে, তাহলে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
ফেব্রুয়ারি উৎপাদন PMI তথ্য – ভারত এবং চীনের উৎপাদন খাতের তথ্য বাজারের চালের উপর প্রভাব ফেলবে।
FII কর্মকাণ্ড – বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাজারের প্রবণতা নির্ধারণ করতে পারে।
ভারতীয় কোম্পানির ত্রৈমাসিক ফলাফল – তৃতীয় ত্রৈমাসিকের কর্পোরেট ফলাফল বিনিয়োগকারীদের ধারণাকে প্রভাবিত করতে পারে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য কৌশল
দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারী – হ্রাসের সময় ভালো কোম্পানিগুলিতে কেনার সুযোগ দেখতে পারেন।
স্বল্পমেয়াদী ব্যবসায়ী – বাজারে উত্থান-পতন মাথায় রেখে সতর্কতার সাথে ব্যবসা করুন।
IT এবং FMCG খাতের উপর নজর – এই খাতগুলিতে চাহিদা বজায় থাকার সম্ভাবনা আছে।
মিডক্যাপ এবং স্মলক্যাপে সতর্কতা – সম্প্রতি বিক্রয়ের পর, এই শেয়ারগুলিতে অস্থিরতা বজায় থাকতে পারে।