ভারত পাকিস্তানের ড্রোন-মিসাইল আক্রমণের পরে নিজস্ব বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য QR-SAM, VL-SRSAM এবং আকাশ-এনজি-এর মতো তিনটি স্বদেশী মিসাইল যুক্ত করেছে।
AIR Defense: মে ২০২৫ সালে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ ভারতের বায়ু প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বিশ্বব্যাপী প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এই সংঘর্ষ বিশেষ করে ড্রোন এবং ক্রুজ মিসাইলের মতো নিম্ন-স্তরের আকাশী হুমকির বর্ধিত ঝুঁকির দিকে আলোকপাত করেছে। এই কারণেই ভারত এখন তার বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই উদ্দেশ্যে ভারত তার বহুস্তরীয় বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় তিনটি নতুন স্বদেশী মিসাইল ব্যবস্থা—QR-SAM, VL-SRSAM এবং Akash-NG যুক্ত করতে যাচ্ছে।
ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ এবং বায়ু প্রতিরক্ষার ভূমিকা
৭-৮ মে ২০২৫ রাতে পাকিস্তান ভারতের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন এবং ক্রুজ মিসাইল দিয়ে আক্রমণ করে। এই আক্রমণ ছিল ভারতের অপারেশন সিন্দুরের প্রতিক্রিয়া হিসেবে, যেখানে ভারত পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে নির্ভুল আকাশ আক্রমণ চালিয়েছিল। এই সংঘর্ষে ভারতীয় বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাকিস্তানের ২৫ টিরও বেশি ড্রোন এবং মিসাইল ধ্বংস করে। এর পরে ভারত তার বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করার জন্য QR-SAM, VL-SRSAM এবং আকাশ-এনজি-র মতো স্বদেশী সমাধান স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে।
নতুন স্বদেশী মিসাইল ব্যবস্থার গুরুত্ব
১. QR-SAM (Quick Reaction Surface-to-Air Missile):
QR-SAM একটি দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা, যা DRDO উদ্ভাবন করেছে। এটি ২৫-৩০ কিমি পর্যন্ত পরিসরে ড্রোন, ক্রুজ মিসাইল এবং যুদ্ধবিমানের মতো নিম্ন-স্তরের আকাশী হুমকি মোকাবেলা করতে সক্ষম। এই ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এর ৩৬০-ডিগ্রি কভারেজ, যা যেকোনো দিক থেকে আসা হুমকি দ্রুত সনাক্ত করে। এই ব্যবস্থা ২০২৪ সালে বহু সফল পরীক্ষা করেছে, যাতে ড্রোন-ঝাঁক ধ্বংস করার ক্ষমতা প্রদর্শিত হয়েছে।
২. VL-SRSAM (Vertically Launched Short-Range Surface-to-Air Missile):
VL-SRSAM একটি উল্লম্বভাবে উৎক্ষেপণযোগ্য ব্যবস্থা, যা ভারতীয় বায়ুসেনা এবং নৌবাহিনী উভয়ের জন্য উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর পরিসর ২০-৩০ কিমি এবং এটি বিশেষ করে ড্রোন, হেলিকপ্টার এবং ক্রুজ মিসাইল ধ্বংস করতে সক্ষম। এর উল্লম্ব উৎক্ষেপণ ক্ষমতা এটিকে সকল দিক থেকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া দিতে সক্ষম করে।
৩. Akash-NG (Next Generation):
Akash-NG, আকাশ ব্যবস্থার উন্নত সংস্করণ, যা মধ্যম দূরত্বের আকাশী সুরক্ষা প্রদান করে। এর পরিসর ৭০-৮০ কিমি এবং এটি যুদ্ধবিমান, ক্রুজ মিসাইল এবং ড্রোন ধ্বংস করতে সক্ষম। এর উন্নত রাডার এবং সিকার প্রযুক্তি এটিকে বারাক-৮-এর মতো আমদানি করা ব্যবস্থার সমতুল্য করে তুলেছে। এই ব্যবস্থা ২০২৪ সালে সফল পরীক্ষা করেছে এবং ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে স্থাপনের জন্য প্রস্তুত হবে।
কেন এই নতুন ব্যবস্থাগুলি প্রয়োজন?
ভারতের বায়ু প্রতিরক্ষায় এই ব্যবস্থাগুলির গুরুত্ব এই কারণে যেগুলি নিম্ন-স্তরের আকাশী হুমকি, বিশেষ করে ড্রোন এবং ক্রুজ মিসাইল মোকাবেলা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সংঘর্ষ প্রমাণ করেছে যে পাকিস্তান সস্তা ড্রোন এবং মিসাইল ব্যবহার করে ভারতীয় সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণ করেছে, যা ভবিষ্যতে একটি বড় হুমকি হতে পারে। এই হুমকি বিবেচনায়, QR-SAM, VL-SRSAM এবং আকাশ-এনজি-র মতো স্বদেশী ব্যবস্থা স্থাপনের মাধ্যমে ভারতের বায়ু প্রতিরক্ষা আরও কার্যকর হচ্ছে।
এই ব্যবস্থাগুলির সুবিধা কি কি?
১. তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া: QR-SAM এবং VL-SRSAM-এর মতো ব্যবস্থাগুলি দ্রুত স্থাপন করা যায়, যা সীমান্ত এলাকায় দ্রুত প্রতিক্রিয়ার প্রয়োজন পূরণ করে।
২. স্বদেশীকরণ: এই ব্যবস্থাগুলি সম্পূর্ণরূপে স্বদেশী, যা আমদানি করা ব্যবস্থার উপর নির্ভরতা কমায়। এর ফলে ভারতের আত্মনির্ভর রক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে।
৩. নমনীয়তা এবং গতিশীলতা: এই ব্যবস্থাগুলি মোবাইল প্ল্যাটফর্মে স্থাপন করা যায়, যার ফলে ভারত বিভিন্ন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া করার ক্ষমতা পাবে।
৪. সাশ্রয়ী মূল্য: এই ব্যবস্থাগুলির খরচও তুলনামূলকভাবে কম, যা ব্যাপক স্থাপনের জন্য উপযুক্ত।