অন্ধ্রপ্রদেশে স্থাপিত হচ্ছে ভারতের সর্ববৃহৎ কোয়ান্টাম কম্পিউটার

অন্ধ্রপ্রদেশে স্থাপিত হচ্ছে ভারতের সর্ববৃহৎ কোয়ান্টাম কম্পিউটার
সর্বশেষ আপডেট: 06-05-2025

ভারত এখন কোয়ান্টাম প্রযুক্তির জগতে এক ঐতিহাসিক লাফ দিতে চলেছে। দেশের এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় কোয়ান্টাম কম্পিউটার শীঘ্রই অন্ধ্রপ্রদেশের রাজধানী অমরাবতীতে স্থাপন করা হবে। এই প্রকল্পটি কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ন্যাশনাল কোয়ান্টাম মিশন’ (NQM)-এর অধীনে বিকশিত হচ্ছে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটার: ভারত শীঘ্রই সবচেয়ে বড় কোয়ান্টাম কম্পিউটার চালু করতে চলেছে, যা দেশের প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক সাফল্য হবে। এই উদ্যোগটি ন্যাশনাল কোয়ান্টাম মিশনের অধীনে করা হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য ভারতকে কোয়ান্টাম প্রযুক্তিতে বিশ্ব নেতৃত্ব দান করা। এই উন্নত কম্পিউটারটি IBM এবং টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (TCS)-এর যৌথ উদ্যোগে বিকশিত হচ্ছে।

এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার এতটাই শক্তিশালী হবে যে এটি জাতীয় নিরাপত্তা, ঔষধ আবিষ্কার, সাইবার নিরাপত্তা, AI মডেলিং এবং অন্যান্য জটিল বৈজ্ঞানিক ও গাণিতিক সমস্যা সমাধানে সক্ষম হবে। এটি ঐতিহ্যগত সুপারকম্পিউটারের তুলনায় অনেক গুণ বেশি দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে কাজ করবে।

অমরাবতীতে হবে ভারতের প্রথম কোয়ান্টাম ভ্যালি টেক পার্ক

দূরসংযোগ বিভাগ (DoT) সম্প্রতি তাদের আনুষ্ঠানিক সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে এই প্রকল্পের সাথে সম্পর্কিত তথ্য ভাগ করেছে। পোস্টে একটি প্রতীকী ছবির সাথে বলা হয়েছে যে ভারতের সবচেয়ে বড় কোয়ান্টাম কম্পিউটার শীঘ্রই আসছে এবং এটি কোথায় স্থাপন করা হবে, সে সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের অনুমান করার জন্য বলা হয়েছিল। পরে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে এই প্রযুক্তিগত অলৌকিক ঘটনাটি অমরাবতীর ‘কোয়ান্টাম ভ্যালি টেক পার্কে’ স্থাপন করা হবে।

এই টেক পার্কটি বিশেষ করে কোয়ান্টাম প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং গবেষণার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভারত কোয়ান্টাম গবেষণায় বিশ্বব্যাপী তার উপস্থিতি জানাতে চায়।

IBM-TCS-এর কৌশলগত অংশীদারিত্ব

এই প্রকল্পে হার্ডওয়্যার তৈরির দায়িত্ব IBM-কে দেওয়া হয়েছে, যা বিশ্বের অগ্রণী কোয়ান্টাম কম্পিউটিং কোম্পানিগুলির মধ্যে একটি। IBM এই কম্পিউটারে তাদের নতুনতম IBM Heron প্রসেসর ব্যবহার করবে, যার 156 কিউবিট প্রসেসিং ক্ষমতা থাকবে। এই প্রসেসরটি ঐতিহ্যগত কম্পিউটারের তুলনায় কেবলমাত্র বেশি দ্রুত নয়, বরং জটিল থেকে জটিল সমস্যা সমাধানেও সক্ষম।

অন্যদিকে, এই কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সফ্টওয়্যার তৈরির কাজ ভারতের শীর্ষস্থানীয় IT কোম্পানি TCS-কে দেওয়া হয়েছে। TCS এতে বিশেষ অ্যালগরিদম, অ্যাপ্লিকেশন এবং ইন্টারফেস ডিজাইন করবে, যা ভারতীয় শিল্প এবং শিক্ষা জগতের সামনে থাকা সমস্যা সমাধানে সহায়তা করবে।

কোয়ান্টাম প্রযুক্তি কারা উপকৃত হবে?

এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার অনেক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে। এর ব্যবহারের সম্ভাবনা নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলিতে দেখা যাচ্ছে:

  • ঔষধ আবিষ্কার এবং চিকিৎসা গবেষণা: নতুন ওষুধের দ্রুত পরীক্ষা এবং বিশ্লেষণ সম্ভব হবে।
  • সাইবার নিরাপত্তা: কোয়ান্টাম এনক্রিপশনের মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে।
  • ডেটা বিশ্লেষণ এবং AI: বৃহৎ পরিসরে ডেটা প্রসেসিং এবং মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদম কোয়ান্টাম বুস্ট পাবে।
  • জলবায়ু মডেলিং এবং উপগ্রহ সিমুলেশন: আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং পৃথিবীর সাথে সম্পর্কিত কার্যকলাপের উন্নত বিশ্লেষণ সম্ভব হবে।
  • আর্থিক সেবা এবং ট্রেডিং অ্যালগরিদম: ব্যাংকিং এবং শেয়ার বাজারের জন্য সঠিক এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত সম্ভব হবে।

কোয়ান্টাম মিশন: ভারতের প্রযুক্তিগত আত্মনির্ভরতার দিকে পদক্ষেপ

ভারত সরকার ২০২৩ সালে ‘ন্যাশনাল কোয়ান্টাম মিশন’ শুরু করেছে, যার উদ্দেশ্য ২০৩১ সালের মধ্যে ভারতকে কোয়ান্টাম প্রযুক্তিতে আত্মনির্ভরশীল করে তোলা। এই মিশনের অধীনে কেবল কোয়ান্টাম কম্পিউটারই বিকশিত হবে না, বরং কোয়ান্টাম নেটওয়ার্কিং, কোয়ান্টাম সেন্সর এবং কোয়ান্টাম যোগাযোগের মতো ক্ষেত্রেও গবেষণাকে উৎসাহিত করা হবে।

এই কোয়ান্টাম কম্পিউটারের Qiskit সফ্টওয়্যার এবং IBM-এর কোয়ান্টাম রিসোর্সেস সমৃদ্ধ হওয়া ভারতীয় স্টার্টআপ এবং গবেষণা সম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় সুযোগ হবে। এই কোয়ান্টাম ইকোসিস্টেম ভারতে উচ্চস্তরের কর্মসংস্থান এবং বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে। পাশাপাশি, ভারতের প্রযুক্তিগত নেতৃত্বও শক্তিশালী হবে এবং বিশ্বব্যাপী ‘প্রযুক্তি উদ্ভাবন কেন্দ্র’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।

Leave a comment