ভারতের সামরিক ক্ষমতায় আরও একটি ‘গৌরব’ যুক্ত হল। দেশ স্বদেশীভাবে উদ্ভাবিত দীর্ঘপাল্লার গ্লাইড বোমা ‘গৌরব’-এর সফল পরীক্ষা করে বিশ্বকে আরও একবার তার প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির শক্তি প্রদর্শন করেছে।
সুখোই-৩০ এমকে-১ বিমান: প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) দীর্ঘপাল্লার গ্লাইড বোমা (এলআরজিবি) ‘গৌরব’-এর সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। ৮ থেকে ১০ এপ্রিলের মধ্যে এই পরীক্ষা সম্পন্ন হয় এবং এটি সুখোই-৩০ এমকে-১ বিমান থেকে নিক্ষেপ করা হয়। এই পরীক্ষায় বোমাকে বিভিন্ন ওয়ারহেড কনফিগারেশনের সাথে একাধিক স্টেশনে একত্রিত করা হয় এবং এর নির্ভুলতা ও কার্যকারিতার পরীক্ষা করা হয়।
এই গ্লাইড বোমার বিশেষত্ব হল এটি কোন রকেটের সাহায্য ছাড়াই, কেবলমাত্র বায়ুগতিবিদ্যাশক্তির মাধ্যমে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে, যার ফলে এটি শত্রুর ঘাঁটিগুলিকে সঠিক ও কার্যকরভাবে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডিআরডিও-র ব্রহ্মাস্ত্র: শত্রুর একটাও ছাড়বে না
প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) কর্তৃক তৈরি এই বোমার শক্তি কেবলমাত্র এর দূরত্বেই নয়, এর নির্ভুলতা ও ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাতেও লুকিয়ে আছে। ১০০০ কিলোগ্রাম ওজনের এই বোমা শত্রুর ঘাঁটিগুলিকে কোনো সতর্কতার বার্তা ছাড়াই সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে সক্ষম। ৮ থেকে ১০ এপ্রিলের মধ্যে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং তা সম্পূর্ণ সফল ঘোষণা করা হয়।
দেশী প্রযুক্তির কীর্তি, বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্বও গুরুত্বপূর্ণ
‘গৌরব’ বোমার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এটি সম্পূর্ণ স্বদেশী। ডিআরডিওর রিসার্চ সেন্টার ইমারত (আরসিআই), আর্মামেন্ট রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এস্টাবলিশমেন্ট (এআরডিই), এবং ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জ (আইটিআর), চাঁদীপুর মিলে এটি উদ্ভাবন করেছে। এতে অদানি ডিফেন্স সিস্টেমস, ভারত ফোর্জ এবং অনেক এমএসএমই প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব রয়েছে, যার ফলে এই প্রকল্প ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র আদর্শ উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
অম্লীন চিহ্ন রাখতে প্রস্তুত ‘গৌরব’
এই অস্ত্রের একাধিক কনফিগারেশন ট্রায়াল করা হয়েছে—বিভিন্ন ওয়ারহেড এবং লঞ্চ স্টেশনের সাথে। প্রতিটি ট্রায়ালে বোমা অসাধারণ নির্ভুলতা দেখিয়েছে। এখন এটি শীঘ্রই ভারতীয় বিমানবাহিনীর অস্ত্রাগারে যুক্ত হওয়ার আশা করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে সীমান্তবর্তী লক্ষ্যবস্তু এবং সন্ত্রাসবাদী লঞ্চ প্যাডগুলিতে দূর থেকে আঘাত হানার কৌশলকে আরও শক্তিশালী করবে।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ‘গৌরব’ এর মতো অস্ত্র ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’-এর বাইরে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছে—কম ঝুঁকি, উচ্চ নির্ভুলতা এবং দীর্ঘ পাল্লা। এখন ভারত তার বিমান অভিযানে এই ধরণের অস্ত্রের সাহায্যে শত্রুর ঘাঁটিতে প্রবেশ না করেই ধ্বংসাত্মক ক্ষতি সাধন করতে পারবে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের বক্তব্য
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ডিআরডিও, ভারতীয় বিমানবাহিনী এবং বেসরকারি শিল্পগুলিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘গৌরব’ বোমার মতো অস্ত্র দেশের কৌশলগত ক্ষমতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। এটি আত্মনির্ভর ভারতের দিকে আমাদের আরও একটি দৃঢ় পদক্ষেপ। ট্রায়ালের সফলতার পর ‘গৌরব’ এখন বিমানবাহিনীতে যোগদানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর স্থাপনার পর ভারতীয় বিমানবাহিনীর আঘাত হানার ক্ষমতায় ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটবে।