বেতন সংকট, ধর্মঘট ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাংলাদেশে পরিস্থিতি অবনতি

বেতন সংকট, ধর্মঘট ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাংলাদেশে পরিস্থিতি অবনতি
সর্বশেষ আপডেট: 26-05-2025

বাংলাদেশে বেতন সংকট ও ধর্মঘটের জেরে পরিস্থিতি অবনতি। সরকারি কর্মী ও শিক্ষক ক্ষুব্ধ, ব্যবসায়ীরাও বিপাকে। ইউনুস বললেন- দেশ যুদ্ধের মতো অবস্থায়। নির্বাচন ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত স্থগিত।

ঢাকা: বাংলাদেশে পরিস্থিতি ক্রমশই অবনতির দিকে যাচ্ছে। একদিকে ধর্মঘট ও কর্মবিরতির ফলে সরকারি দপ্তর থেকে বাজার পর্যন্ত সব কাজ বন্ধ, অন্যদিকে বেতন সংকটের কারণে কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মোহাম্মদ ইউনুস বড় বক্তব্য দিয়ে বলেন দেশ যুদ্ধের মতো অবস্থায় দিয়ে যাচ্ছে।

ইউনুস স্পষ্ট করে জানিয়েছেন যে, এখন জাতীয় নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বর ২০২৫ নয়, বরং আগামী বছর ২০২৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত হবে। এর ফলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বেড়েছে।

বাংলাদেশে সর্বত্র ধর্মঘট

বাংলাদেশে ধর্মঘট ও প্রতিবাদী আন্দোলনের ঢেউ সারা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে সরকারি দপ্তরগুলিতে। রাজধানী ঢাকার সচিবালয়ে দ্বিতীয় দিনও রাজস্ব কর্মকর্তারা কাজে অনুপস্থিত ছিলেন। তাদের দাবি, সরকার সম্প্রতি প্রণীত সরকারি সেবা সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫ অবিলম্বে প্রত্যাহার করুক।

প্রতিবাদকারীদের অভিযোগ, এই আইন সরকারি কর্মীদের বরখাস্ত করা ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পথ সহজ করে তুলেছে। এর ফলে দপ্তরগুলিতে কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষকরাও ধর্মঘটের ঘোষণা দিলেন

বাংলাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ধর্মঘটে নেমেছেন। তারা সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালীন কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের দাবি, তাদের প্রারম্ভিক বেতন জাতীয় বেতনমানের ১১তম গ্রেডের সমান করা হোক।

বেতন ও বোনাস সংকট: ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- অবস্থা ১৯৭১ সালের যুদ্ধের মতো

দেশে বেতন ও বোনাস সংকটও গুরুতর হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)-এর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা জানি না ঈদুল আযহার আগে আমাদের কর্মীদের বোনাস ও বেতন কীভাবে দেব। ব্যবসায়ীরা নিহত হচ্ছে, যেমন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীরা নিহত হয়েছিল।”

রাসেল সরকারের ওপর অভিযোগ করেন যে, তারা বিনিয়োগকারীদের ডাকছে, কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে টাকা লাগাতে ভয় পাচ্ছেন। তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মনে করেন ভিয়েতনাম বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ভালো বিকল্প।

ইউনুসের বড় বক্তব্য: দেশ যুদ্ধের মতো অবস্থায়

এই গুরুতর পরিস্থিতির মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুস দেশের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “দেশের ভেতরে এবং বাইরে যুদ্ধের মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। আমরা এগিয়ে যেতে পারছি না, সর্বত্র অস্থিরতা, এবং দেশকে আবার দাসত্বের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।”

ইউনুস আরও বলেন, আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। তাঁর মতে, কিছু শক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।

নির্বাচনের নতুন সময়সূচী: ২০২৬ সালের জুনে হবে সাধারণ নির্বাচন

মোহাম্মদ ইউনুস স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এখন নির্বাচন ডিসেম্বর ২০২৫-এ হবে না। তিনি বলেছেন, নির্বাচন করার জন্য আরও ছয় মাস সময় লাগবে। এখন নির্বাচন ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।

ইউনুস আশ্বাস দিয়েছেন যে, তিনি ২০২৬ সালের ৩০শে জুনের পর একদিনও তার পদে থাকবেন না। তাঁর কথায়, সে সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সেনা ও ইউনুস সরকারের মধ্যে বর্ধমান মতবিরোধ

বাংলাদেশের এই রাজনৈতিক উথাল-পাতালের মধ্যে আরও একটি বড় খবর হলো ইউনুস সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে মতবিরোধ বেড়েই চলেছে।

সূত্রের খবর, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত সপ্তাহে ইউনুসের সাথে দেখা করে বলেছিলেন যে, নির্বাচন ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যেই সম্পন্ন করা উচিত। এছাড়াও তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রস্তাবিত করিডোর সম্পর্কেও আপত্তি জানিয়েছিলেন।

যদিও ইউনুস স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, নির্বাচন এখন ২০২৬ সালের জুন পর্যন্তই হবে।

Leave a comment