আজ, ১৪ই এপ্রিল, ২০২৫, সমগ্র জাতি বাবাসাহেব ডঃ ভীমরাও আম্বেদকরের ১৩৪তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করছে। সংবিধান রচয়িতা, সমাজ সংস্কারক এবং শিক্ষার প্রতীক আম্বেদকরের অবদান ভারতীয় গণতন্ত্র এবং সামাজিক ন্যায়ের ভিত্তি। তাঁর চিন্তা, সংগ্রাম এবং নীতি কোটি কোটি মানুষকে ক্ষমতায়ন করেছে, তাদের অধিকার ও পরিচয় সুরক্ষিত করেছে। তাঁর জন্মদিনে, আসুন আমরা তাঁর জীবনের দশটি কম-জানা তথ্য অন্বেষণ করি, যা প্রতিটি ভারতীয়ের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক এবং জানা অপরিহার্য।
১. ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রী
ডঃ আম্বেদকরকে ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়েছিল। এই পদটি কেবল একটি রাজনৈতিক ভূমিকা হিসেবেই কাজ করেনি, বরং সামাজিক পরিবর্তনের একটি যান হিসেবেও কাজ করেছিল। তিনি অসংখ্য আইন প্রস্তাবনা প্রণয়ন করেছিলেন যা দলিত, নারী এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়ের সমান অধিকার প্রদান করেছিল।
২. সংবিধান প্রণয়নের দায়িত্ব
২৯শে আগস্ট, ১৯৪৭, তাকে সংবিধানের খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে একটি সংবিধান তৈরি করেছিলেন যা কেবল বৈচিত্র্যে ঐক্য বজায় রাখেনি, বরং প্রতিটি নাগরিকের জন্য ন্যায়, সমতা এবং স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে।
৩. 'আম্বেদকর' মূল উপাধি নয়
কম লোক জানেন যে তাঁর মূল উপাধি ছিল 'আম্বাবদেকার', যা তাঁর পৈত্রিক গ্রাম আম্বাবদে (রত্নগিরি জেলা) থেকে নেওয়া হয়েছিল। একজন স্কুল শিক্ষক, মহাদেব আম্বেদকর, স্নেহের সাথে এটিকে 'আম্বেদকর' এ সংক্ষিপ্ত করেছিলেন, একটি নাম যা ইতিহাসে খোদাই করা হয়েছে।
৪. শ্রমিকদের জন্য ৮-ঘন্টার কর্মদিবস প্রবর্তন
১৯৪২ সালের ভারতীয় শ্রম সম্মেলনে, ডঃ আম্বেদকর শ্রমিকদের কর্মক্ষমতা ১২ ঘন্টা থেকে ৮ ঘন্টায় কমিয়ে দিয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় শ্রম আন্দোলনের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ঘটনা ছিল।
৫. দুটি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনকারী প্রথম ভারতীয়
তিনি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ব্যক্তি যিনি অর্থনীতিতে দুটি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন - একটি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং অপরটি লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স থেকে। এই সাফল্য তাঁর একজন বিশিষ্ট পণ্ডিত হিসেবে মর্যাদা দৃঢ় করেছিল।
৬. নারীর অধিকারের মন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ
তিনি সংসদে 'হিন্দু কোড বিল' প্রবর্তন করেন, যার লক্ষ্য ছিল সম্পত্তি এবং বিবাহে নারীদের সমান অধিকার প্রদান করা। বিলটি পাশ না হওয়ার পর, তিনি তার নীতিতে অটল থেকে পদত্যাগ করেন।
৭. নয়টি ভাষায় দক্ষ
ডঃ আম্বেদকর হিন্দি, পালি, সংস্কৃত, মারাঠি, ইংরেজি, ফারসি, ফরাসি, জার্মান এবং গুজরাটি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি বিশ্বের প্রধান ধর্মগুলির তুলনামূলক অধ্যয়নে ২১ বছর সময় ব্যয় করেছিলেন।
৮. রাজ্য পুনর্গঠনের প্রস্তাব দেওয়ার প্রথম ব্যক্তি
তাঁর ১৯৫৫ সালের বই, "লিঙ্গুইস্টিক স্টেটস অন থটস"-এ, তিনি ভাষাগত ভিত্তিতে রাজ্য পুনর্গঠনের পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন। এই দর্শন ২০০০ সালের দিকে ছত্তিশগড়, উত্তরাখণ্ড এবং ঝাড়খণ্ডের মতো নতুন রাজ্যের সৃষ্টির দিকে নিয়ে গেছে।
৯. 'খোলা চোখে' বুদ্ধের প্রথম চিত্রাঙ্কন
বাবাসাহেব একজন দক্ষ চিত্রশিল্পী ছিলেন। তিনিই প্রথম খোলা চোখে ভগবান বুদ্ধের চিত্র অঙ্কন করেছিলেন, বন্ধ চোখে ঐতিহ্যগত চিত্রণ থেকে বিচ্যুত হয়ে।
১০. শিক্ষায় অনন্য অবদান
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে, তিনি স্বাধীনভাবে অর্থনীতিতে ২৯টি কোর্স সম্পন্ন করেছিলেন। শিক্ষার প্রতি তাঁর নিষ্ঠা আজও অনুপ্রেরণা জোগায়। তিনি বিশ্বাস করতেন শিক্ষাই বিশ্ব পরিবর্তনের অস্ত্র।
অনুপ্রেরণামূলক চিন্তাধারা যা আজও আমাদের নির্দেশনা দেয়
• নিজেদেরকে শিক্ষিত করো, নিজেদেরকে সংগঠিত করো, এবং সংগ্রাম করো।
• আমি একটি সমাজের অগ্রগতির পরিমাপ করি সেই অগ্রগতির দ্বারা যা নারীরা অর্জন করেছে।
• জীবন দীর্ঘ হওয়ার চেয়ে মহান হওয়া উচিত।
• একজন মহান ব্যক্তি হলেন সেই ব্যক্তি যিনি সমাজের সেবক হিসেবে জীবনযাপন করেন।
ডঃ ভীমরাও আম্বেদকরের দর্শন এবং সংগ্রাম ভারতের সামাজিক এবং সাংবিধানিক ভিত্তি স্থাপন করেছিল। তাঁর জন্মবার্ষিকী কেবল একটি শ্রদ্ধাঞ্জলি নয়, বরং তাঁর আদর্শ গ্রহণ করার একটি সুযোগ। বাবাসাহেবের উত্তরাধিকারকে জানা, বোঝা এবং আলিঙ্গন করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব।