আমেরিকা ক্রমাগত শুল্ক বৃদ্ধি করছে, কিন্তু চীন অটল। শি জিনপিং বলেছেন- আমরা নতি স্বীকার করব না। চীন কীভাবে ট্রেড ওয়ারের মোকাবেলা করছে, তার ৫টি কারণ।
শুল্কযুদ্ধ: ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে আমেরিকা চীনের উপর শুল্কের চাপ দ্রুত বৃদ্ধি করেছে। সম্প্রতি আমেরিকা চীন থেকে আমদানির উপর আমদানি শুল্ক ১২৫% পর্যন্ত বাড়িয়েছে, অন্য দেশগুলিকে এই তালিকা থেকে বাদ দিয়ে। এই পদক্ষেপের জবাবে বেইজিং ৮৪% পর্যন্ত প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তারা কোনও চাপে নতি স্বীকার করবে না। এই প্রতিরোধের পেছনে চীনের গভীর পরিকল্পনা এবং কৌশলগত শক্তি কাজ করছে।
১. শি জিনপিংয়ের কৌশল: “যেকোনো মূল্যে শক্তি”
শি জিনপিং কোনও ধরনের আপোষের নীতি নিয়ে কাজ করছেন না। তাঁর কৌশল স্পষ্ট—আমেরিকার আগ্রাসী নীতির সামনে নতি স্বীকার করা নয়।
সরকারি গণমাধ্যম এই সংঘাতকে দেশপ্রেমিক যুদ্ধ হিসেবে তুলে ধরেছে। পিপলস ডেইলি-র মতো প্রধান সরকারি সংবাদপত্র স্পষ্টভাবে বলেছে যে চীনের আমেরিকার সাথে লড়াই করার “বিশেষ অভিজ্ঞতা” আছে এবং তারা তাদের ঘরোয়া শিল্পকে সমর্থন করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।
২. দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি: বাণিজ্য বৈচিত্র্যকরণ কৌশল
চীন বহু আগে থেকেই তাদের অর্থনীতিকে আমেরিকার উপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত করার দিকে তৎপরতা শুরু করেছিল।
ট্রাম্পের প্রথম বাণিজ্য যুদ্ধের (২০১৮-১৯) পর বেইজিং তাদের শিল্প নীতিতে পরিবর্তন এনে বিকল্প বাজার এবং সরবরাহ শৃঙ্খল বৈচিত্র্যকরণের উপর জোর দিতে শুরু করে। আমেরিকার উপর নির্ভরতা কমাতে বেইজিং ঘরোয়া প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
৩. রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ: ট্রাম্প বনাম জিনপিং
- ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আমেরিকায় ঘরোয়া প্রতিবাদ, ওয়াল স্ট্রিটের সমালোচনা এবং রাজনৈতিক চাপের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
- এর বিপরীতে, চীনে শি জিনপিংকে এই ধরণের গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হয় না।
- তিনি গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং জনমতের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রাখেন। এর ফলে তিনি অর্থনৈতিক চাপের মধ্যেও রাজনৈতিক অস্থিরতা ছাড়াই নীতি প্রয়োগ করতে সক্ষম।
৪. অর্থনৈতিক সহনশীলতা: ব্যয় আছে, কিন্তু সহ্য করার শক্তিও আছে
- উভয় দেশই অর্থনৈতিক ধাক্কা খাচ্ছে, কিন্তু চীনে সরকার দীর্ঘদিন ধরে এ ধরণের পরিস্থিতি সহ্য করার জন্য আর্থিক সঞ্চয় (Fiscal Cushion) তৈরি করে রেখেছে।
- CNN-এর প্রতিবেদনের আলোকে, UCSD-এর চীন কেন্দ্রের পরিচালক ভিক্টর শি বলেন, যদিও চীনের কিছু শিল্প ট্যারিফের ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তবে চীন এই সংঘাতকে আমেরিকার চেয়ে বেশি সময় ধরে সহ্য করতে পারবে।
৫. কূটনৈতিক ভারসাম্য: আমেরিকার বাইরে অংশীদারিত্ব
- ট্রাম্পের চীন-বিরোধী মনোভাব সত্ত্বেও শি জিনপিং বিশ্বব্যাপী শক্তিশালী কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
- তিনি ইউরোপ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং আফ্রিকায় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি এবং রপ্তানি উৎসাহের মাধ্যমে চীনের জন্য নতুন বাজার তৈরি করেছেন।
- বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ (BRI)-র মতো প্রকল্পের মাধ্যমে চীন আমেরিকার প্রভাব কমাতে ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে।
