ভারতীয় নৌবাহিনী আজ এক অভূতপূর্ব ঐতিহাসিক জাহাজ পেতে চলেছে, যেমনটি বিশ্বের অন্য কোনও নৌবাহিনীর কাছে নেই। এই জাহাজ ভারতের সমৃদ্ধ সমুদ্রযাত্রার ঐতিহ্য এবং প্রাচীন জাহাজ নির্মাণ কৌশলের প্রতীক।
নয়াদিল্লি: ভারতীয় নৌবাহিনী আজ একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধজাহাজ পেতে চলেছে, যা দেখে পুরো বিশ্ব ভারতের সমৃদ্ধ সমুদ্রযাত্রার ঐতিহ্য এবং ঐতিহ্যবাহী জাহাজ নির্মাণ কৌশলের প্রশংসা করবে। এই জাহাজ কেবলমাত্র প্রযুক্তিগত দিক থেকেই বিশেষ নয়, এটি ভারতীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাসের গভীরতা থেকে উঠে আসা ঐতিহ্যকেও গর্বের সাথে এগিয়ে নিয়ে যায়।
এই কাঠের জাহাজটি পঞ্চম শতাব্দীর ভারতীয় সমুদ্র শক্তির পুনর্জন্ম। এর অনুপ্রেরণা মহারাষ্ট্রের অজন্তা গুহার দেওয়ালে খোদাই করা একটি প্রাচীন চিত্রকর্ম থেকে নেওয়া হয়েছে, যেখানে একটি নির্দিষ্ট আকৃতির জাহাজ চিত্রিত হয়েছে। ঠিক এই চিত্রটিকেই ভিত্তি করে এই জাহাজের সম্পূর্ণ কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী প্রযুক্তি ও আধুনিক পরীক্ষার মিলন
এই অনন্য যুদ্ধজাহাজটি সম্পূর্ণরূপে ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় প্রযুক্তির সাহায্যে নির্মিত হয়েছে। জাহাজের প্রতিটি খুঁটি, প্রতিটি সংযোগ এবং প্রতিটি কাঠের টুকরো হাতে তৈরি করা হয়েছে। এর নির্মাণ কাজ কেরালার অভিজ্ঞ ঐতিহ্যবাহী কারিগরদের একটি দল করেছে, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন বিখ্যাত জাহাজ নির্মাতা বাবু শঙ্করণ। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার মাধ্যমে এটিকে জীবন্ত আকার দিয়েছেন।
এই প্রকল্পে ভারতীয় নৌবাহিনী কেবল অংশগ্রহণই করেনি, বরং প্রযুক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এর ক্রমাগত তদারকি ও পরীক্ষাও করেছে। এর নকশা ও শক্তি পরীক্ষা করেছে আইআইটি মাদ্রাসের সামুদ্রিক প্রকৌশল বিভাগ, যাতে নিশ্চিত করা যায় যে জাহাজটি সমুদ্রযাত্রার জন্য সম্পূর্ণরূপে উপযুক্ত।
নামকরণ ও নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি
কারওয়ারস্থ নৌঘাঁটিতে একটি জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত এই ঐতিহাসিক জাহাজের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবেন এবং এটিকে ভারতীয় নৌবাহিনীতে আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই অনুষ্ঠানকে ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সমুদ্র গৌরবের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই জাহাজটি কেবলমাত্র প্রদর্শনের জন্য নয়, বরং এটিকে বাস্তব সমুদ্রযাত্রায় পাঠানো হবে। এর প্রথম মিশন ভারতের পশ্চিম উপকূল থেকে শুরু হয়ে ঐতিহাসিক সমুদ্র বাণিজ্যপথের উপর ভিত্তি করে হবে। প্রথম প্রস্তাবিত যাত্রা গুজরাটের উপকূল থেকে ওমান পর্যন্ত, যা প্রাচীনকালে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা প্রায়ই ব্যবহার করত। এই যাত্রার মাধ্যমে প্রাচীন সমুদ্র যোগাযোগ পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করা হবে।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের সাংস্কৃতিক শক্তির প্রদর্শন
নৌবাহিনীর মুখপাত্র ক্যাপ্টেন বিবেক মধওয়ালের মতে, এই জাহাজ আধুনিক জাহাজগুলি থেকে আলাদা। এতে আধুনিক ইঞ্জিন নেই, কোনও স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাও নেই। এর শক্তি হল এর ঐতিহ্যবাহী কাঠামো, বর্গাকার পাল, হাতে চালিত খাঁড়ি এবং শক্তিশালী কাঠের স্টিয়ারিং। এই জাহাজটি কেবলমাত্র ভারতের প্রযুক্তিগত বৈচিত্র্যই প্রদর্শন করে না, বরং এটি পুরো বিশ্বের সামনে ভারতীয় সভ্যতার সমুদ্র সম্পদের একটি জীবন্ত উদাহরণ হিসেবেও উঠে আসবে।
এই প্রকল্পে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং গোয়া-স্থিত এমএসএমই হোডি ইনোভেশনের যৌথ অবদান রয়েছে। এই সহযোগিতা দেখায় যে যখন প্রতিরক্ষা, সংস্কৃতি এবং উদ্ভাবন একসাথে কাজ করে, তখন ভারত বিশ্বব্যাপী একটি নতুন পরিচয় তৈরি করে।