২৬/১১ মুম্বই সন্ত্রাসবাদী হামলার একজন প্রধান ষড়যন্ত্রকারী তাহওয়ুর হুসেন রানাকে আজ আমেরিকা থেকে ভারতে আনা হচ্ছে। প্রায় ১৬ বছর আগের এই জঘন্য হামলার জন্য অবশেষে আর একজন অভিযুক্ত এখন ভারতীয় আইনের কব্জায় আসবে।
নয়াদিল্লি: ২৬/১১ মুম্বই সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রধান ষড়যন্ত্রকারীদের একজন তাহওয়ুর হুসেন রানা এখন ভারতে তার অপরাধের শাস্তি ভোগ করবে। আমেরিকা থেকে ভারতে আনা হওয়ার পর, এনআইএ (জাতীয় তদন্ত সংস্থা) এর সাত সদস্যের একটি দল রানাকে দিল্লিতে নিয়ে আসছে। দেশের রাজধানীতে পৌঁছে প্রথমে তার চিকিৎসা পরীক্ষা করা হবে এবং তারপর আদালতে হাজির করা হবে।
সূত্রমতে, রানাকে তিহার জেলের উচ্চ নিরাপত্তা বিশিষ্ট ওয়ার্ডে রাখা হবে। জেল কর্তৃপক্ষ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে এবং এখন আদালতের নির্দেশের অপেক্ষা করছে।
দিল্লিতে পৌঁছালেই শুরু হবে তদন্তের ধাপ
এনআইএ-র সাত সদস্যের বিশেষ দল তাহওয়ুর রানাকে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে দিল্লিতে পৌঁছাবে। এখানে পৌঁছানোর পর তাকে অবিলম্বে চিকিৎসা পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে, এরপর তাকে এনআইএ-এর বিশেষ আদালতে হাজির করা হবে। এনআইএ আদালতের কাছে রানার হেফাজতের দাবি জানাবে যাতে তার কাছ থেকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়।
জিজ্ঞাসাবাদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে অনেক তথ্য
এনআইএ সূত্রমতে, রানার জিজ্ঞাসাবাদ শুধুমাত্র ২৬/১১ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং তার কাছ থেকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই, লাশ্কর-ই-তৈয়বা প্রভৃতি সংগঠনের ভূমিকা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংযোগ সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করা হবে। বিশেষ সূত্র অনুযায়ী, রানার কাছ থেকে এটাও জানার চেষ্টা করা হবে যে সে ভারতে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের জন্য কাদের সহযোগিতা করেছে, কোথায় কোথায় হেডলিকে পাঠিয়েছে এবং কোন কোন প্রতিষ্ঠানের উপর হামলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল।
তিহারে পাওয়া যাবে উচ্চ নিরাপত্তা
সূত্র জানিয়েছে যে রানাকে তিহার জেলের উচ্চ নিরাপত্তা বিশিষ্ট ইউনিটে রাখা হবে। ৬৪ বছর বয়সী রানার জন্য বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী জেল কর্তৃপক্ষ তাকে হেফাজতে নেবে এবং নিরাপত্তার কঠোর ব্যবস্থা করবে। তাহওয়ুর রানা, পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক এবং তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল ডেভিড হেডলির সাথে, যিনি ২৬/১১-এর রেকি করেছিলেন। রানাই হেডলিকে ভুয়া ব্যবসায়িক আড়াল এবং ভিসা পেতে সাহায্য করেছিলেন, যার ফলে হেডলি ভারতে এসে হামলার পরিকল্পনা করতে পেরেছিল।
রানার ভারতে প্রত্যর্পণ কোন সহজ প্রক্রিয়া ছিল না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে দীর্ঘ কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পর আমেরিকা তাকে হস্তান্তর করার অনুমতি দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের প্রশাসন ভারতের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়ে গত মাসে প্রত্যর্পণের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছিল।
মোদী সরকারের বড় কূটনৈতিক সাফল্য
এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, তাহওয়ুর রানার প্রত্যর্পণ মোদী সরকারের আন্তর্জাতিক কূটনীতির একটি বড় সাফল্য। এটি এমন একটি বার্তা যে ভারত এখন তার শত্রুদের কোথাও ছাড়বে না। অমিত শাহ বিরোধীদের লক্ষ্য করে বলেছেন, ২০০৮ সালের হামলার সময় যে সরকার ক্ষমতায় ছিল, সে এই অভিযুক্তকে ভারতে আনতে পারেনি, কিন্তু এখন কেউ ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে রক্ষা পেতে পারবে না।
এখন যখন রানা ভারতে আছে, আগামী কয়েক সপ্তাহে তার বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রমাণের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা শুরু হবে। তার স্বীকারোক্তি এবং জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে আরও অনেক লিঙ্ক উন্মোচিত হতে পারে যা এখনও পর্যন্ত গোপন ছিল।
