২০২৫ সালের অভিবাসন ও বিদেশী বিল: কঠোর শাস্তি ও আধুনিক আইন প্রয়োগ

২০২৫ সালের অভিবাসন ও বিদেশী বিল: কঠোর শাস্তি ও আধুনিক আইন প্রয়োগ
সর্বশেষ আপডেট: 11-03-2025

সরকার অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে ২০২৫ সালের অভিবাসন ও বিদেশী বিল প্রস্তাব করেছে। এতে কঠোর শাস্তি, বিদেশী নাগরিকদের নজরদারি এবং পুরোনো আইন প্রত্যাহার করে আধুনিক আইন প্রয়োগের বিধান রয়েছে।

সংসদ: অবৈধ অনুপ্রবেশ ও অনুসন্ধান রোধে কেন্দ্র সরকার লোকসভায় ২০২৫ সালের অভিবাসন ও বিদেশী বিল উত্থাপন করেছে। মঙ্গলবার গৃহ রাষ্ট্রমন্ত্রী নিত্যানন্দ রায় এই বিল উত্থাপন করতে গিয়ে বলেন, এর উদ্দেশ্য কাউকে দেশে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া নয়, বরং এটা নিশ্চিত করা যে, যে কোনো বিদেশী ভারতে এলে তারা দেশের আইন মেনে চলবে। এই বিলের মাধ্যমে সরকার বিদেশী নাগরিকদের প্রবেশ, বসবাস ও প্রস্থান নিয়ন্ত্রণ করার অধিক ক্ষমতা পাবে। তবে, কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস এই বিলের বিরোধিতা করেছে।

কেন এই বিল আনা হয়েছে?

এই বিলের উদ্দেশ্য ভারতের অভিবাসন আইনকে আধুনিকায়ন ও শক্তিশালী করা। এই বিল সরকারকে ভিসা ও নিবন্ধন সংক্রান্ত নিয়মাবলী প্রয়োগের ক্ষমতা দেবে।

- এই বিল জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতায় যে কোনো বিদেশীর প্রবেশ বা বসবাসে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে যারা এগুলিকে হুমকি হিসেবে মনে করা হয়।
- সকল বিদেশী নাগরিকের ভারতে আগমনের পর নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক হবে।
- নিষিদ্ধ বা সংরক্ষিত এলাকায় বিদেশী নাগরিকদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও অন্যান্য সংস্থাকে অভিবাসন কর্মকর্তাদের কাছে বিদেশী নাগরিকদের তথ্য জানাতে হবে।

নিয়ম ভঙ্গের জন্য কঠোর শাস্তি

প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশকারীদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

- বৈধ পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়া প্রবেশের জন্য ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা।
- জাল নথি ব্যবহারের জন্য ২ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ১ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা।
- ভিসা শর্ত লঙ্ঘনের জন্য ৩ বছর কারাদণ্ড এবং ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা।
- যথাযথ নথি ছাড়া বিদেশীদের আনা-নেওয়ার জন্য পরিবহনকারীদের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং অর্থ প্রদান না করলে যানবাহন জব্দ করা হবে।
- অভিবাসন কর্মকর্তাদের ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতারের অধিকারও থাকবে।

চারটি পুরোনো আইনের স্থলে নতুন বিল

এই বিল চারটি পুরোনো আইন প্রত্যাহার করে একটি নতুন, ব্যাপক আইন আনার চেষ্টা করছে।

বিদেশী আইন ১৯৪৬
পাসপোর্ট (ভারতে প্রবেশ) আইন ১৯২০
বিদেশীদের নিবন্ধন আইন ১৯৩৯
অভিবাসন (বাহক দায়িত্ব) আইন ২০০০

সরকারের দাবি, এই আইনগুলি এখন পুরোনো হয়ে গেছে এবং ভারতের নিরাপত্তা প্রয়োজনীয়তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি আধুনিক, সমন্বিত আইনের প্রয়োজন রয়েছে।

বিরোধীদের প্রতিবাদ

গৃহ রাষ্ট্রমন্ত্রী নিত্যানন্দ রায় বিল উত্থাপন করতে গিয়ে বলেন, এটি সম্পূর্ণরূপে সংবিধানসম্মত এবং সপ্তম তালিকার অধীনে আনা হয়েছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, সরকার কাউকে বাধা দেওয়ার জন্য এই আইন করছে না, বরং এটা নিশ্চিত করতে চায় যে, যে কোনো বিদেশী ভারতে এলে তারা দেশের আইন মেনে চলবে।

তবে, কংগ্রেস সাংসদ মণীষ তিওয়ারী এই বিলের বিরোধিতা করে এটিকে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, এই বিল সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং বিদেশী নাগরিকদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তথ্য পর্যন্ত চায়, যা চিকিৎসা নীতির বিরুদ্ধে। তিওয়ারী এই বিলটিকে যৌথ সংসদীয় কমিটির (JPC) কাছে পাঠানো বা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

Leave a comment