ভারতে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা হতে চলেছে। এলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্সের বহুল আলোচিত স্টারলিংক প্রকল্পকে ভারত সরকার থেকে স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড সেবা শুরু করার আনুষ্ঠানিক অনুমতি মিলে গেছে।
Elon Musk Starlink: ভারতে ডিজিটাল বিপ্লবকে আরও গতি দিয়ে, এলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্সের স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রকল্প এখন আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পেয়েছে। ভারত সরকারের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারি করা লাইসেন্সের অধীনে স্টারলিংক এখন দেশে স্যাটেলাইট ভিত্তিক ব্রডব্যান্ড সেবা শুরু করতে পারবে।
এই পদক্ষেপ বিশেষ করে ভারতের দূরবর্তী এবং অপ্রাপ্তিসাধ্য অঞ্চলগুলিকে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে, যেখানে ঐতিহ্যগত ব্রডব্যান্ড বা ফাইবার নেটওয়ার্ক পৌঁছাতে পারেনি।
স্টারলিংক কি এবং কীভাবে কাজ করে?
স্টারলিংক ঐতিহ্যগত মোবাইল টাওয়ার বা ফাইবার কেবলের পরিবর্তে LEO (Low Earth Orbit) অর্থাৎ পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে অবস্থিত হাজার হাজার ছোট স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে। এই স্যাটেলাইটগুলি সরাসরি ব্যবহারকারীর বাড়ি বা অফিসে স্থাপিত একটি বিশেষ ডিশ অ্যান্টেনার সাথে সংযুক্ত হয়, যার মাধ্যমে ইন্টারনেট সিগন্যাল প্রাপ্ত হয় এবং তারপর ওয়াই-ফাই রাউটারের মাধ্যমে বাড়ি বা অফিসে নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি এমন স্থানেও স্থাপন করা যায় যেখানে কেবল বা টাওয়ার পৌঁছানো সম্ভব নয়। এই সিস্টেম 50 থেকে 250 Mbps পর্যন্ত গতি দিতে সক্ষম এবং লেটেন্সিও ঐতিহ্যগত স্যাটেলাইট সিস্টেমের তুলনায় অনেক কম।
ভারতকে কেন স্টারলিংকের প্রয়োজন?
ভারতে অনেক পাহাড়ি, আদিবাসী এবং সীমান্তবর্তী এলাকা আজও ডিজিটালভাবে পিছিয়ে আছে। লাদাখ, অরুণাচল প্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, আন্দামান ও নিকোবর এবং ছত্তিশগড়ের বস্তরের মতো অঞ্চলে ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া সবসময়ই একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। এই অঞ্চলগুলিতে অপটিক্যাল ফাইবার বিছানো বা টাওয়ার স্থাপন করা কেবলমাত্র ব্যয়বহুল নয়, বরং ঝুঁকিপূর্ণও।
এখানে স্টারলিংক একটি ডিজিটাল লাইফলাইন হিসেবে কাজ করতে পারে। এর সাহায্যে জরুরি সেবা, সীমান্ত নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ, টেলিমেডিসিন, ডিজিটাল শিক্ষা, অনলাইন ব্যাংকিং এবং ই-গভর্ন্যান্সের মতো সুবিধাগুলি সহজেই তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাবে যারা এখনও পর্যন্ত এর থেকে বঞ্চিত ছিল।
গ্রামে বিপ্লবের আশা
স্টারলিংকের আসল শক্তি গ্রাম এবং ডিজিটালভাবে বিচ্ছিন্ন জনजातीय অঞ্চলে দেখা যাবে। যেখানে আজও নেই ব্যাংক, নেই ভালো স্কুল, নেই হাসপাতাল এবং নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক - সেখানে স্টারলিংকের মতো সেবা জীবনকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করতে পারে। এখন কোনো শিশু ডিজিটাল ক্লাস করতে পারবে, কৃষক অনলাইন বাজারের সাথে যুক্ত হতে পারবে, এবং গ্রামীণ নারীরা ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবে।
সরকার এই জন্য পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলের আওতায় সাবসিডি পরিকল্পনায় বিবেচনা করছে যাতে এই প্রযুক্তি গ্রামগুলিতে সুলভ মূল্যে পৌঁছানো যায়।
কি মিলবে ফ্রি ইন্টারনেট?
এই প্রশ্ন সবচেয়ে বেশি জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে - স্টারলিংক কি ভারতে বিনামূল্যে ইন্টারনেট দেবে? এর উত্তর হল - না, কিন্তু সরকার গ্রামীণ এলাকার জন্য সাবসিডি পরিকল্পনা আনতে পারে।
বর্তমানে আমেরিকা এবং ইউরোপে স্টারলিংকের সেবার জন্য ৮০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা প্রতি মাসে দিতে হয় এবং হার্ডওয়্যার কিট (ডিশ এবং রাউটার) এর দাম প্রায় ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকা। ভারতে দাম কমিয়ে গ্রামীণ এলাকার জন্য ২০০০-৩০০০ টাকা মাসিক এবং সাবসিডির সাথে হার্ডওয়্যারে ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনায় আলোচনা চলছে।
ডেটা সুরক্ষায় সরকার কঠোর
ভারত সরকার স্টারলিংককে ডেটা লোকালাইজেশনের শর্তে অনুমতি দিয়েছে। অর্থাৎ ভারতীয় ব্যবহারকারীর ডেটা ভারতেই সংরক্ষণ করা বাধ্যতামূলক হবে। জাতীয় সুরক্ষা, ডেটা সার্বভৌমত্ব এবং ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা নিয়ে কোনো আপোষ করা হবে না। উল্লেখযোগ্য যে ২০২১ সালে স্টারলিংক লাইসেন্স ছাড়াই ভারতে প্রি-অর্ডার নেওয়া শুরু করেছিল যা তাত্ক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু এখন সরকার গ্লোবাল মোবাইল পার্সোনাল কমিউনিকেশন বাই স্যাটেলাইট (GMPCS) লাইসেন্স প্রদান করার পর, স্টারলিংকের সেবা সম্পূর্ণরূপে বৈধ এবং আইনসম্মত হয়ে গেছে।
স্টারলিংকের আগমনে ভারতের ডিজিটাল ভবিষ্যৎ আরও শক্তিশালী হতে পারে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তি গেমচেঞ্জার হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। ২০২৫ সালের শুরুতে এর পাইলট সেবা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এর পরে ব্যাপক পরিসরে রোলআউট করা হবে।