স্মার্টফোনে স্যাটেলাইট কানেক্টিভিটি বর্তমানে বেশ আলোচনার বিষয়। এর সূচনা হয় ২০২২ সালে আইফোন ১৪-এর সাথে, যখন অ্যাপল এই ফিচারটি চালু করে। এরপর অন্যান্য অনেক কোম্পানিও এটি গ্রহণে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এই প্রযুক্তিটি মূলত সেসব পরিস্থিতির জন্য ডিজাইন করা হয়েছে যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা SOS বার্তার মাধ্যমে জরুরি সেবা সংস্থাগুলির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
তবে, বর্তমানে এই সুবিধাটি কেবলমাত্র কিছু স্মার্টফোন এবং নির্বাচিত কিছু এলাকায় সীমাবদ্ধ। Google এবং Samsung-এর মতো কোম্পানিগুলিও এই প্রযুক্তিটি গ্রহণ শুরু করেছে, কিন্তু এটি এখনও একটি বিশেষ এবং উন্নত ফিচার হিসেবে বিবেচিত হয়।
কী স্যাটেলাইট কানেক্টিভিটি?
প্রথমেই বুঝে নেওয়া জরুরি যে স্যাটেলাইট কানেক্টিভিটি এবং স্যাটেলাইট ফোন (Satphone)-এর মধ্যে বেশ পার্থক্য আছে। স্যাটফোন সম্পূর্ণরূপে স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কে নির্ভরশীল এবং এগুলো অত্যন্ত দুর্গম এলাকায় ব্যবহারের জন্য তৈরি। এগুলো সাধারণত বড়, ব্যয়বহুল এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে ব্যবহৃত যন্ত্র। ভারতে BSNL কিছু স্যাটফোন সেবা প্রদান করে। অন্যদিকে, স্মার্টফোন মূলত সেলুলার নেটওয়ার্কে কাজ করে, কিন্তু স্যাটেলাইট কানেক্টিভিটির সাহায্যে জরুরি অবস্থায় এগুলো স্যাটফোনের মতো কাজ করতে পারে।
বর্তমানে, এই প্রযুক্তিটি কেবলমাত্র SOS মেসেজিং পর্যন্ত সীমাবদ্ধ, কিন্তু ভবিষ্যতে দ্বিমুখী মেসেজিং এবং ইন্টারনেট ডেটা ট্রান্সমিশনও সম্ভব হতে পারে। যখন এই প্রযুক্তিটি সম্পূর্ণরূপে উন্নত হবে, তখন স্মার্টফোনগুলিকে ভূমি-ভিত্তিক টাওয়ারের উপর নির্ভর করতে হবে না। এগুলো সরাসরি লো অর্থ অরবিট (LEO) স্যাটেলাইটের সাথে সংযুক্ত হয়ে ডেটা ট্রান্সফার করতে পারবে, যার ফলে নেটওয়ার্ক কভারেজের আয়তন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।
ভারতে স্যাটেলাইট কানেক্টিভিটি নিয়ে কী পরিকল্পনা রয়েছে?
ভারতে Airtel এবং Jio স্যাটেলাইট কানেক্টিভিটি প্রযুক্তি আনার দিকে দ্রুত কাজ করছে। Airtel OneWeb-এর সাথে অংশীদারিত্ব করেছে, যার ফলে তারা তাদের স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা উন্নত করতে পারবে। Jio SES-এর সাথে মিলে এই প্রযুক্তির উপর কাজ শুরু করেছে এবং ভারতে স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ব্রডব্যান্ড সেবা আনার পরিকল্পনা করছে।
তবে, ভারতে স্যাটেলাইট স্পেক্ট্রাম বরাদ্দ নিয়ে বিরোধের কারণে এই প্রযুক্তির উদ্বোধনে বিলম্ব হচ্ছে। Starlink-এর মতো কোম্পানিগুলি চায় যেন এই স্পেক্ট্রাম প্রশাসনিক বরাদ্দের মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়, যাতে সেবাগুলি দ্রুত শুরু করা যায়। অন্যদিকে, Airtel এবং Jio এই স্পেক্ট্রাম নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিতরণের পক্ষে, যাতে বাজারে প্রতিযোগিতা বজায় থাকে এবং সব কোম্পানি সমান সুযোগ পায়।
ভারতে টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলির পাশাপাশি স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলিও স্যাটেলাইট কানেক্টিভিটি নিয়ে কাজ করছে
* আইফোন এবং Google Pixel-এ স্যাটেলাইট SOS
* অ্যাপল আইফোন ১৪ এবং তার পরের মডেলগুলিতে Globalstar স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই সুবিধাটি দিয়েছে।
* Google Pixel 9 সিরিজে Samsung Exynos 5400 মডেম ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে Satellite SOS ফিচার যুক্ত হয়েছে।
* Samsung Galaxy S24 সিরিজে Exynos 5400 মডেম আছে, কিন্তু এটি এখনও স্যাটেলাইট কানেক্টিভিটি সাপোর্ট করে না।
* Galaxy S25 সিরিজে Qualcomm Snapdragon X80 5G মডেম দেওয়া হবে, যার ফলে এই ফিচারটি সক্রিয় হতে পারে।
* রিপোর্ট অনুসারে, Samsung শীঘ্রই তাদের ডিভাইসগুলিতে Satellite SOS ফিচারটি সক্রিয় করতে পারে।
আমেরিকায় T-Mobile এবং Starlink-এর স্যাটেলাইট টেক্সটিং সেবা
* T-Mobile Elon Musk-এর Starlink-এর সাথে মিলে স্যাটেলাইট টেক্সটিং সেবা চালু করেছে।
* এই সেবাটি বিনামূল্যে নয়, কিন্তু Go5G Next প্ল্যান-এর গ্রাহকরা এটি বিনামূল্যে পাবেন।
* অন্যান্য T-Mobile ব্যবহারকারীদের এর জন্য $15/মাস (প্রায় ১,২৫০ টাকা) দিতে হবে।
* AT&T এবং Verizon-এর গ্রাহকদের জন্য এই সেবাটি $20/মাস (প্রায় ১,৬৫০ টাকা) এ উপলব্ধ হবে।
* অ্যাপলের Globalstar স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক অনেক দেশে উপলব্ধ, যেখানে T-Mobile-এর সেবা বর্তমানে কেবলমাত্র আমেরিকায় সীমাবদ্ধ।