কল্পনা করুন, আপনার একটা ডিজিটাল ভার্সন, অর্থাৎ ভার্চুয়াল টুইন, আপনার জায়গায় কথা বলছে, ইমেইল পাঠাচ্ছে, ভিডিও কল করছে এবং মিটিংয়ে বসছে… কি অবস্থা! এটি আর কল্পনার ব্যাপার নয়! মেটা (পূর্বে ফেসবুক) তাদের নতুন প্রযুক্তি মেটা ভয়েস এআই এবং মেটা মি-এর মাধ্যমে এমন এক ঝড় তুলেছে যা কর্মক্ষেত্র, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল পরিচয় সবকিছু বদলে দিতে চলেছে।
মেটা তাদের মেটা কানেক্ট ২০২৫ ইভেন্টে এই বিস্ময়কর ঘোষণা করেছে যে, ব্যবহারকারীরা এখন শুধুমাত্র তাদের কণ্ঠস্বরের মাধ্যমেই তাদের ভার্চুয়াল ক্লোন তৈরি করতে পারবেন!
মেটা ভয়েস এআই কি করে?
মেটার এই প্রযুক্তিতে এআই আপনার কয়েক সেকেন্ডের কণ্ঠস্বর রেকর্ড করে – এবং তা থেকেই তা একটি পুরোপুরি ডিজিটাল ভয়েস ক্লোন তৈরি করে, যা:
- আপনারই কণ্ঠে কথা বলে
- আপনার মতোই আবেগ নিয়ে কথা বলে
- এবং এমনকি আপনার ভাষা ও উচ্চারণ (accent) গ্রহণ করে
- এর সাথে যুক্ত মেটা মি প্রযুক্তি একটি ৩ডি ভার্চুয়াল অ্যাভাতার তৈরি করে, যা আপনার মুখ, ভঙ্গি, অভিব্যক্তি এবং শারীরিক ভাষা অনুকরণ করে।
এর ফলে কি কি হতে পারে?
- অফিস মিটিংয়ে আপনার অ্যাভাতার উপস্থিত থাকবে, আপনি ইচ্ছে করলে আরামে ঘুমাতে পারবেন!
- গ্রাহক সেবা, ইনফ্লুয়েন্সার কন্টেন্ট এবং উপস্থাপনা এখন আপনার ডুপ্লিকেট করবে
- সোশ্যাল মিডিয়ায় "আপনি" সবসময় সক্রিয় থাকবেন – এমনকি যদি বাস্তবে ছুটিতে থাকেন
- ভিডিও তৈরি করতে হবে? শুধু স্ক্রিপ্ট দিন – এআই-ভিত্তিক "আপনি" ভিডিও তৈরি করে দেবে
- এখন মানুষ বাস্তবে নয়, ডিজিটালে থাকবে, মেটার সিইও মার্ক জুকারবার্গ বলেছেন।
কিভাবে তৈরি হবে আপনার ভার্চুয়াল টুইন?
- ৫ মিনিটের ভয়েস রেকর্ডিং
- ৫টি ছবি অথবা একটি ১০-সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপ
- মেটার এআই ইঞ্জিন তা বিশ্লেষণ করবে
- আপনার ডিজিটাল ক্লোন তৈরি – কণ্ঠস্বর, মুখ এবং কথা বলার ধরণ সব আপনার
ভারতে কেন এত আলোচনা?
- ভারতের ইউটিউবার, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এবং গ্রাহক সেবা শিল্প এই প্রযুক্তিতে বিশেষ আগ্রহ দেখিয়েছে।
- এখন একজন ব্যক্তি ১০টি চ্যানেলে, ২৪x৭ ভিডিও আপলোড করতে পারবেন – নিজে কথা বলার বা দেখা দেওয়ার প্রয়োজন ছাড়াই!
- এখন টিম নয়, একজন ব্যক্তির ক্লোনই ১০ জনের কাজ করবে, বলছেন ডিজিটাল স্ট্র্যাটেজিস্ট রোহিত চৌহান।
ঝুঁকিও কম নয়…
- মিথ্যা ভিডিও এবং ভয়েস স্পুফিংয়ের ঝুঁকি
- ডিজিটাল প্রতারণা এবং পরিচয় চুরি (identity theft)
- ডিপফেক vs রিয়েল-এর পার্থক্য কমে যাচ্ছে
- মানুষের আসল কণ্ঠস্বর এবং মুখ কোথাও হারিয়ে না যায়?
মেটার দাবি, তাদের সিস্টেমে এআই ওয়াটারমার্ক, ভয়েস-ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং ক্লোন ভেরিফিকেশন এর মতো নিরাপত্তা স্তর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মেটার এই নতুন প্রযুক্তি প্রমাণ করেছে যে এআই শুধু একটি টুল নয়, এখন মানুষের দ্বিতীয় মুখ হয়ে উঠেছে। আগামী দিনে ভার্চুয়াল মি, ডিজিটাল মি এবং এআই ক্লোনের মতো জিনিসগুলি সাধারণ হয়ে উঠবে।