মেটার কঠোর পদক্ষেপ: ২০ লক্ষ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ, ‘পিগ বুচারিং’ প্রতারণার বিরুদ্ধে লড়াই

🎧 Listen in Audio
0:00

অনলাইন প্রতারণার বর্ধমান ঘটনায় মেটা ২০ লক্ষ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে যারা ‘পিগ বুচারিং স্ক্যাম’-এর সাথে জড়িত ছিল। এই পদক্ষেপটি মেটার একটি বৃহৎ প্রয়াসের অংশ, যার লক্ষ্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বর্ধমান প্রতারণার ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা এবং ব্যবহারকারীদের সুরক্ষিত রাখা। এই প্রতারণা চিহ্নিত করার এবং এর থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মেটা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ‘পিগ বুচারিং স্ক্যাম’ সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং এর ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে।

‘পিগ বুচারিং স্ক্যাম’ কি?

‘পিগ বুচারিং স্ক্যাম’ প্রতারণার একটি পদ্ধতি, যেখানে অপরাধীরা প্রথমে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে, তারপর তাদেরকে ভুয়া বিনিয়োগ পরিকল্পনায় প্রলোভিত করে। এই স্ক্যামে সাধারণত ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং অন্যান্য বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা বলা হয়। অপরাধীরা সোশ্যাল মিডিয়া, ডেটিং অ্যাপ বা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে তাদের শিকারের সাথে যোগাযোগ করে এবং ধীরে ধীরে তাদের বিশ্বাস অর্জন করে। প্রথমে ছোট বিনিয়োগে ভালো রিটার্নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, কিন্তু যখন শিকার বড় বিনিয়োগ করে, তখন প্রতারকরা সব টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। এভাবে এই প্রতারণা ধীরে ধীরে শিকারকে আর্থিক ক্ষতির দিকে নিয়ে যায়।

‘পিগ বুচারিং স্ক্যাম’ কিভাবে কাজ করে?

এই স্ক্যামের পদ্ধতি অত্যন্ত চালাকিপূর্ণ। অপরাধীরা সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডেটিং অ্যাপে ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে এবং শিকারের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। তারা ক্রিপ্টোকারেন্সি বা স্টকের মতো বিনিয়োগের সুযোগের কথা বলে এবং তাদেরকে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে। প্রথমে ছোট বিনিয়োগে শিকারকে লাভ দেখানো হয়, যাতে তার বিশ্বাস বাড়ে। ধীরে ধীরে শিকারের বিশ্বাস বাড়ার সাথে সাথে সে বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত হয়। তারপর হঠাৎ করেই সব টাকা উধাও হয়ে যায় এবং শিকার শুধুমাত্র খালি হাতে থাকে।

স্ক্যামের পিছনে কে আছে?

‘পিগ বুচারিং স্ক্যাম’-এর পিছনে বড় বড় সংগঠিত অপরাধী চক্র কাজ করে। এই চক্রগুলি প্রধানত এশিয়ার কিছু দেশ যেমন কম্বোডিয়া, মায়ানমার এবং লাওসে সক্রিয়। এই চক্রের সদস্যরা প্রায়ই মানুষকে ভুয়া চাকরির প্রলোভনে তাদের দেশে নিয়ে আসে এবং সেখানে তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এই প্রতারণায় জড়িয়ে দেয়। এই চক্রগুলির শিকার হয়েছে প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ, এবং তারা প্রতি বছর ৬৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রতারণা করে।

মেটার বড় পদক্ষেপ: ২০ লক্ষ অ্যাকাউন্টের স্থগিতাদেশ

মেটা এই স্ক্যামের সাথে লড়াই করার জন্য বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা ২০ লক্ষ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে যারা ‘পিগ বুচারিং স্ক্যাম’-এর সাথে জড়িত ছিল। এই অ্যাকাউন্টগুলির মাধ্যমে প্রতারকরা তাদের শিকারের সাথে যোগাযোগ করে এবং তাদেরকে ভুয়া পরিকল্পনায় বিনিয়োগ করতে প্ররোচিত করত। মেটা এই অ্যাকাউন্টগুলি সরিয়ে এই বার্তা দিয়েছে যে তারা তাদের প্ল্যাটফর্মে প্রতারণা সহ্য করবে না। এছাড়াও মেটা তাদের সিস্টেমে পরিবর্তন এনেছে যাতে প্রতারণা চিহ্নিত করা ও রোধ করা সহজ হয়।

কিভাবে এড়াবেন এই স্ক্যাম থেকে?

মেটা যেমন বড় পদক্ষেপ নিয়েছে, তেমনি ব্যবহারকারীদেরও এই স্ক্যাম থেকে বাঁচার জন্য সচেতন থাকা প্রয়োজন। যদি আপনি অনলাইনে বিনিয়োগ করার কথা ভাবছেন, তাহলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখুন:

· সোশ্যাল মিডিয়া বা ডেটিং অ্যাপে অপরিচিতদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা থেকে বিরত থাকুন।

· ক্রিপ্টোকারেন্সি বা স্টকের মতো পরিকল্পনায় বিনিয়োগ করার আগে পূর্ণ তথ্য নিন এবং সাবধানতার সাথে সিদ্ধান্ত নিন।

· কারো সাথে আপনার আর্থিক তথ্য বা ব্যক্তিগত তথ্য ভাগ করবেন না।

· যদি আপনার মনে হয় আপনি কোন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, তাহলে তা অবিলম্বে রিপোর্ট করুন।

‘পিগ বুচারিং স্ক্যাম’ এর মতো প্রতারণা থেকে বাঁচার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং ব্যবহারকারী উভয়েরই সচেতন থাকা প্রয়োজন। মেটার ২০ লক্ষ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার পদক্ষেপ একটি ইতিবাচক উদ্যোগ, যা প্রতারণার বিরুদ্ধে তাদের দৃঢ় লড়াইয়ের প্রমাণ। তবে অনলাইন প্রতারণা থেকে বাঁচার জন্য আমাদের নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং সবসময় ভেবেচিন্তে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

Leave a comment