আজকের ডিজিটাল যুগে সোশ্যাল মিডিয়া ও মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার স্বাভাবিক হলেও, শিশু ও কিশোরদের অনলাইন সুরক্ষা এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেট ব্যবহার ও অনলাইন যোগাযোগ বৃদ্ধির ফলে অনেক সময় আপত্তিকর ও অশ্লীল কন্টেন্টের সম্মুখীন হতে হয়, যা শুধুমাত্র শিশুদের নয়, সকল ব্যবহারকারীর জন্যই উদ্বেগের কারণ।
এই সমস্যার সমাধানে গুগল তাদের মেসেজিং অ্যাপ গুগল মেসেজেসে একটি নতুন ও অত্যন্ত উপযোগী ফিচার চালু করেছে, যার নাম Sensitive Content Warning। এই ফিচারটি বিশেষ করে শিশু ও কিশোরদের সুরক্ষার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অশ্লীল ছবিগুলিকে ব্লার করে দেবে।
নতুন ফিচার: Sensitive Content Warning কি?
Sensitive Content Warning ফিচারটি গুগল এই উদ্দেশ্যে চালু করেছে যাতে কোন ব্যবহারকারী অশ্লীল বা আপত্তিকর ছবি পাঠালে, সেই ছবিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্লার (ধোঁয়াটে) হয়ে যাবে। এরপর, ব্যবহারকারীর কাছে ছবিটি ডিলিট করার অথবা ছবিটি না দেখেই পাঠানো ব্যক্তিকে ব্লক করার অপশন থাকবে। এই ফিচারটি বিশেষ করে নাবালিকাদের সুরক্ষা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে শিশু ও কিশোররা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপত্তিকর বিষয়বস্তুর সম্মুখীন না হয়।
শিশু ও কিশোরদের জন্য বিশেষ সুরক্ষা
এই নতুন ফিচারের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি শিশু ও কিশোরদের অশ্লীল বা আপত্তিকর বিষয়বস্তু থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে। ১৮ বছরের কম বয়সী ব্যবহারকারীদের জন্য এই ফিচারটি ডিফল্টভাবে অন থাকবে, যার অর্থ হল কোন অশ্লীল ছবি পাঠানোর সাথে সাথেই সেই ছবিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্লার হয়ে যাবে।
এই ফিচারটি শিশুদের অনলাইনে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে, বিশেষ করে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করছে এবং এ ধরণের বিষয়বস্তুর সম্মুখীন হওয়ার ভয় রয়েছে।
অন্যদিকে, ১৮ বছর ও তার বেশি বয়সী ব্যবহারকারীরা তাদের সেটিংসে গিয়ে এই ফিচারটি অন বা অফ করতে পারবেন। এই ফিচারটি নির্বাচন করার সুযোগ ব্যবহারকারীদের তাদের সুবিধা ও সুরক্ষার উপর নির্ভর করে দেওয়া হয়েছে।
নাবালিকাদের দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে
গুগল নাবালিকাদের জন্য এই ফিচারটিকে আলাদা আলাদা শ্রেণীতে ভাগ করেছে যাতে সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়:
- সুপারভাইজড ব্যবহারকারীরা (যাদের অ্যাকাউন্ট প্যারেন্টস কন্ট্রোল করেন): এই শ্রেণীর ব্যবহারকারীরা এই ফিচারটি বন্ধ করতে পারবেন না। প্যারেন্টসরা Family Link অ্যাপের মাধ্যমে এই ফিচারটি কন্ট্রোল করতে পারবেন। এর অর্থ হল শিশুদের অ্যাকাউন্টের উপর তাদের বাবা-মা সম্পূর্ণ নজর রাখতে পারবেন এবং তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবেন।
- অনসুপারভাইজড টিন (১৩ থেকে ১৭ বছরের কিশোর): এই শ্রেণীর ব্যবহারকারীদের কাছে এই অপশন রয়েছে যে তারা তাদের গুগল অ্যাকাউন্ট সেটিংস থেকে এই ফিচারটি বন্ধ করতে পারবেন। তবে, এই শ্রেণীর কিশোরদের এই ফিচারের গুরুত্ব বুঝে এটি ব্যবহার করা উচিত।
কিভাবে কাজ করে এই ফিচার?
Sensitive Content Warning ফিচারটি দুটি উপায়ে কাজ করে:
- যদি অশ্লীল ছবি প্রাপ্ত হয়: যখন কোন ব্যবহারকারী কোন অশ্লীল বা আপত্তিকর ছবি প্রাপ্ত করবেন, তখন সেই ছবিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্লার হয়ে যাবে। এরপর ব্যবহারকারীকে এই অপশন দেওয়া হবে যে ছবিটি না দেখেই ডিলিট করবে অথবা পাঠানো ব্যক্তিকে ব্লক করবে। এভাবে, ব্যবহারকারীরা না দেখেই কোন আপত্তিকর বিষয়বস্তু থেকে বাঁচার সুযোগ পাবে।
- যদি আপনি অশ্লীল ছবি পাঠাতে বা ফরওয়ার্ড করতে যাচ্ছেন: যখন আপনি কোন ছবি পাঠাতে বা ফরওয়ার্ড করতে চাইবেন যাতে নগ্নতা থাকবে, তখন গুগলের সিস্টেম আপনাকে আগে সতর্ক করে দেবে। এই সতর্কবাণীটি আপনাকে জানাবে যে এই ধরণের কন্টেন্ট পাঠানো ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে এবং সিস্টেম আপনার কাছে অনুমতি চাইবে। এই সতর্কবাণী আপনাকে আপনার বিষয়বস্তুটি পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ দেবে এবং আপনাকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলবে না।
প্রাইভেসির সুরক্ষা
এই ফিচারটি শুধুমাত্র শিশুদের সুরক্ষা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়নি, বরং এতে প্রাইভেসির প্রতিও সম্পূর্ণ নজর দেওয়া হয়েছে। গুগল স্পষ্ট করেছে যে এই পুরো প্রক্রিয়াটি আপনার ফোনেই হবে। অর্থাৎ, আপনার ছবি বা ব্যক্তিগত তথ্য গুগলের সার্ভারে পাঠানো হবে না। এই ফিচারটি Android-এর SafetyCore সিস্টেমের মাধ্যমে কাজ করে, যা তখনই সক্রিয় থাকে যখন কোন অ্যাপ (যেমন গুগল মেসেজেস) এর অনুমতি নেয়। এর অর্থ হল আপনার ছবিগুলো সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে এবং আপনার গোপনীয়তার সম্পূর্ণ রক্ষা করা হবে।
ফিলিহাল, এই ফিচারটি শুধুমাত্র ছবির উপর কাজ করবে
যদিও এই ফিচারটি চমৎকার, তবে এখনকার জন্য এটি শুধুমাত্র ছবির উপর কাজ করবে, ভিডিওর উপর নয়। এর অর্থ হল যদি আপনি কোন ভিডিওতে নগ্নতা বা অশ্লীল কন্টেন্ট পাঠান অথবা প্রাপ্ত করেন, তাহলে ফিলিহাল এর উপর এই ফিচারটি কাজ করবে না। গুগল জানিয়েছে যে এই ফিচারটি এখনও বিটা ভার্সনে রয়েছে এবং শীঘ্রই এটি সকল ব্যবহারকারীর জন্য উপলব্ধ করা হবে।
গুগল Sensitive Content Warning ফিচারটি চালু করে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে, যা শিশু ও কিশোরদের ইন্টারনেটে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে। এই ফিচারটি শুধুমাত্র ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে না, বরং তাদের গোপনীয়তার প্রতিও সম্পূর্ণ নজর রাখে। এই ফিচারটি বিশেষ করে সেইসব শিশুদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যারা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অশ্লীল কন্টেন্ট থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও, গুগল নিশ্চিত করেছে যে ব্যবহারকারীরা এই ফিচারটিকে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ পাবে, যাতে তারা তাদের সুরক্ষা ও গোপনীয়তার হিসেবে এটি ব্যবহার করতে পারে।