ব্রাজিলে ডিজিটাল ডেটা বিক্রি করে আয়ের নতুন পথ

🎧 Listen in Audio
0:00

আপনি কি কখনো ভেবেছেন ইন্টারনেটে আপনার যে ডেটা আছে, তা থেকেও আপনার আয় হতে পারে? এখন এই চিন্তা বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে। ব্রাজিল বিশ্বের প্রথম দেশ হতে চলেছে, যেখানে মানুষ তাদের ডিজিটাল ডেটা থেকে সরাসরি টাকা আয় করতে পারবে।

প্রযুক্তি: ব্রাজিলে একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগের সূচনা হয়েছে যা আগামী দিনে বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল অধিকার ও ডেটা ব্যবস্থাপনার দিক বদলে দিতে পারে। 'ডি ওয়ালেট' নামের এই বিপ্লবী পরিকল্পনার মাধ্যমে এখন সাধারণ নাগরিকরা তাদের ইন্টারনেট ডেটা থেকে সরাসরি টাকা আয় করতে পারবে। এই পরিকল্পনা কেবল ডেটার মূল্য বোঝানোর চেষ্টা নয়, বরং এটিকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দিকেও একটি বড় ধাপ।

কি ‘ডি ওয়ালেট’ পরিকল্পনা?

ব্রাজিল সরকারের এই উদ্যোগ ডিজিটাল সবলীকরণের দিকে একটি সাহসী পদক্ষেপ। ‘ডি ওয়ালেট’ একটি এমন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যেখানে যেকোনো নাগরিক তার ইন্টারনেট ব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত তথ্য যেমন ব্রাউজিং অভ্যাস, অ্যাপের কার্যকলাপ, অনলাইন লেনদেন, স্বাস্থ্য ও আর্থিক ডেটা সংরক্ষণ করতে পারবে। এই ডিজিটাল ওয়ালেটের ধারণা সরকারি টেক কোম্পানি Dataprev এবং ব্যক্তিগত ডেটা ব্যবস্থাপনা কোম্পানি DrumWave মিলে তৈরি করেছে।

এই ওয়ালেটে জমা ডেটা ব্যক্তি তার ইচ্ছামতো কোম্পানিগুলিকে বিক্রি করতে পারবে। কোম্পানিগুলি এই তথ্য ব্যবহার করবে বিজ্ঞাপন, পণ্য উন্নয়ন এবং ব্যবহারকারীর আচরণ বিশ্লেষণের জন্য। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ডেটার মালিকানা সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তির কাছে থাকবে।

কিভাবে হবে ডেটা থেকে আয়?

যেহেতু ডিজিটাল সেবা বৃদ্ধি পাচ্ছে, কোম্পানিগুলির ডেটার প্রতি চাহিদাও বাড়ছে। সাধারণত, কোনো সরাসরি লাভ ছাড়াই ব্যবহারকারীদের ডেটা টেক কোম্পানিগুলোর কাছে চলে যায়। কিন্তু ‘ডি ওয়ালেট’ এই প্রথায় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে। যখন কোনো নাগরিক কোনো ওয়েবসাইটে লগইন করে, অ্যাপ ডাউনলোড করে অথবা অনলাইন কেনাকাটা করে, তখন তার ডেটা ওয়ালেটে যুক্ত হয়।

কোম্পানিগুলি যখন এই ডেটা ব্যবহার করতে চাইবে, তখন তাদের সেই ব্যক্তির সম্মতি নিতে হবে। যদি ব্যক্তি সম্মতি দেয়, তাহলে সে এই ডেটার মূল্যের বিনিময়ে টাকা পাবে। এটি ঠিক তেমনই যেমন কেউ ব্যাংকে সঞ্চয় রাখে এবং তার উপর সুদ আয় করে।

এই পরিকল্পনার আইনগত কাঠামো কি?

ব্রাজিলের সংসদ একটি নতুন আইনের উপর কাজ করছে যার অধীনে ডেটাকে "ব্যক্তিগত সম্পত্তি" (Private Property) হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। এর অর্থ হলো যে কারো ডেটা তার সম্পত্তির মতো হবে এবং তা বিক্রি করা বা সুরক্ষিত রাখা তার ইচ্ছার উপর নির্ভর করবে। এই আইন নিশ্চিত করবে যে কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান কোন ব্যক্তির ডেটা তার সম্মতি ছাড়া নিতে পারবে না এবং যদি নেয় তাহলে তার বিনিময়ে ব্যক্তিকে যথাযথ আর্থিক লাভ দিতে হবে।

ডেটা বিক্রি করা কি জরুরি?

না। ‘ডি ওয়ালেট’ পরিকল্পনা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছামূলক। যেকোনো ব্যক্তি ইচ্ছা করলে তার ডেটা কারো সাথে শেয়ার করতে পারবে না। কিন্তু যদি সে শেয়ার করে তাহলে সে আর্থিক লাভ পাবে। এটি ঠিক তেমনই যেমন আপনি কোনো ওয়েবসাইটকে ‘কুকি’ এর অনুমতি দেন কি না। পার্থক্য শুধু এটাই যে এখন এই অনুমতির সরাসরি পারিশ্রমিক পাওয়া যাবে।

সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

একদিকে এই পরিকল্পনা সাধারণ নাগরিকদের ডিজিটাল অধিকার প্রদান করে, অন্যদিকে কিছু উদ্বেগও দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডিজিটাল সাক্ষরতার অভাব, গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেটের ধীর গতি এবং কম শিক্ষিত শ্রেণীর মানুষের তাৎক্ষণিক লাভ হলেও দীর্ঘমেয়াদে তারা তাদের অধিকার না জেনে ক্ষতিও ভোগ করতে পারে।

উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ অল্প টাকার বিনিময়ে তার সংবেদনশীল ডেটা কোনো কোম্পানিকে বিক্রি করে, তাহলে ভবিষ্যতে তার অপব্যবহার সম্ভব।

সরকার কি লাভ পাবে?

সরকারের জন্য এই পরিকল্পনা একটি ডেটা ব্যাংক হিসেবে কাজ করবে। এটি স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং পরিবহন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডেটা-ভিত্তিক নীতি তৈরিতে সাহায্য করবে। এতে নীতি নির্মাণ আরও ব্যক্তিগতকৃত এবং কার্যকর হবে। এছাড়াও, সরকার জানতে পারবে জনগণের প্রকৃত চাহিদা কি, যাতে বাজেট বরাদ্দ এবং সরকারি পরিকল্পনাগুলি আরও নির্ভুলতার সাথে বাস্তবায়ন করা যায়।

Leave a comment