ভারতীয় বায়ুসেনার ৫ টি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিগত শক্তি

🎧 Listen in Audio
0:00

ভারতীয় বায়ুসেনা আজ প্রযুক্তি ও শক্তির দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বায়ুসেনাগুলির একটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও স্মার্ট সিস্টেম নিয়ে এই বায়ুসেনা কেবলমাত্র দেশের সুরক্ষার জন্যই প্রস্তুত নয়, বরং বিশ্বব্যাপী নিজের শক্তির প্রদর্শনও করছে।

প্রযুক্তি: ভারতের বায়ুসেনা আজ কেবলমাত্র একটি সামরিক শক্তি নয়, বরং প্রযুক্তি ও কৌশলের এক নিখুঁত সমন্বয়। গত এক দশকে যে গতিতে ভারতীয় বায়ুসেনা নিজেকে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত করেছে, তা একে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ও সবচেয়ে শক্তিশালী বায়ুসেনাগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে নজরদারি ড্রোন ও এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম পর্যন্ত, প্রতিটি স্তরে ভারতীয় বায়ুসেনা আজ শত্রুর জন্য ‘ভয়ঙ্কর স্বপ্ন’ হয়ে উঠেছে। আসুন জেনে নেই সেই পাঁচটি আধুনিক প্রযুক্তিগত শক্তি, যার বলে আজ ভারতীয় বায়ুসেনা শত্রুদের উৎসাহ ভেঙে দিচ্ছে।

১. রাফেল: আকাশে বিদ্যুৎ বজ্রের মতো যোদ্ধা

রাফেল যুদ্ধবিমানকে ভারতীয় বায়ুসেনার ‘গেম চেঞ্জার’ শক্তি বলা হলে ভুল হবে না। ফ্রান্সের ড্যাসল্ট এভিয়েশন কর্তৃক নির্মিত এই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান ভারতীয় বায়ুসেনাকে প্রযুক্তিগতভাবে এক নতুন উচ্চতা দান করেছে। এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এর বহু-ভূমিকা সম্পন্নতা—আকাশ থেকে আকাশে আঘাত, আকাশ থেকে স্থলে আঘাত এবং ইলেকট্রনিক জ্যামিং, সবকিছুই এটি একাই করতে পারে।

রাফেলে ব্যবহৃত RBE2 AESA রাডার, SPECTRA ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম এবং মেটিওর ক্ষেপণাস্ত্রের মতো প্রযুক্তি এটিকে অতুলনীয় করে তুলেছে। মেটিওর ক্ষেপণাস্ত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুকে ভেদ করতে পারে, অন্যদিকে এর SPECTRA সিস্টেম শত্রুর রাডারকে বিভ্রান্ত করে। ৩৭০০ কিলোমিটার রেঞ্জের রাফেল যেকোনো যুদ্ধক্ষেত্রে ভারতের জন্য নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

২. সুখোই-৩০ MKI: ভারতীয় শক্তি ও রুশ প্রযুক্তির বিস্ফোরক মিশ্রণ

সুখোই-৩০ MKI ভারতীয় বায়ুসেনার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং সবচেয়ে বেশি মোতায়েনকৃত যুদ্ধবিমান। রাশিয়ার সহযোগিতায় তৈরি এই বিমানটিকে ভারত নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী উন্নত করেছে। এর বিশেষত্ব হল এটি একসাথে একাধিক মিশন সম্পাদন করতে পারে—চাই তা এয়ার ডিফেন্স হোক বা গ্রাউন্ড অ্যাটাক।

এতে ব্যবহৃত ফেজড অ্যারে রাডার, থ্রাস্ট ভেক্টরিং ইঞ্জিন এবং ব্রহ্মোস সুপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র এটিকে অত্যাধুনিক করে তুলেছে। ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের আওয়াজের চেয়ে দ্রুত গতি এটিকে শত্রুদের জন্য অপ্রত্যাশিত হুমকি করে তোলে।

৩. AWACS এবং নেত্রা: আকাশের চোখ যা প্রতিটি পদক্ষেপে নজর রাখে

AWACS (Airborne Warning and Control System)-কে ‘আকাশের চোখ’ বলা হয়। এটি এমন একটি বিমান যাতে ৩৬০ ডিগ্রি কভারেজ দেওয়া শক্তিশালী রাডার ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে ৪০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত শত্রু বিমান, ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্রের গতিবিধি শনাক্ত করা যায়।

ভারতের কাছে IL-76 ভিত্তিক ফ্যালকন AWACS এবং DRDO-র স্বদেশী ‘নেত্রা’ সিস্টেম রয়েছে। এই দুটি সিস্টেমই ভারতীয় বায়ুসেনাকে রিয়েল টাইম গোয়েন্দা তথ্য দিতে সক্ষম, যার ফলে যেকোনো অভিযান পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সফলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। যে কোনো আবহাওয়াতেই এই ব্যবস্থা শত্রুদের নজরদারি করে চলে।

৪. S-400 ট্রায়াম্ফ: আকাশে শত্রুর জন্য অপরাজেয় প্রাচীর

S-400 এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম রাশিয়া থেকে কেনা হয়েছে এবং এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম হিসেবে বিবেচিত। এর আঘাত করার ক্ষমতা ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এবং এটি একসাথে ৩৬ টি লক্ষ্যবস্তু ট্র্যাক করতে পারে।

এতে চারটি ভিন্ন ধরণের ক্ষেপণাস্ত্র থাকে, যা বিভিন্ন উচ্চতা ও দূরত্ব থেকে আঘাত করতে পারে। এর মাল্টি লেয়ার ডিফেন্স স্ট্রাকচারের কারণে শত্রুর কোনো ক্ষেপণাস্ত্র বা যুদ্ধবিমান ভারতের সীমানায় প্রবেশ করার আগেই ধ্বংস হয়ে যায়। ভারতের কাছে এখন পর্যন্ত ৫ টি S-400 সিস্টেম রয়েছে, যা সমগ্র দেশের এয়ারস্পেসকে একটি অভেদ্য আবরণ দিয়েছে।

৫. হেরোন এবং রুস্তম ড্রোন: পাইলট ছাড়াই শত্রুদের উপর তীক্ষ্ণ নজরদারি

ভারতীয় বায়ুসেনা আর কেবলমাত্র যুদ্ধবিমানের উপর নির্ভর করে না। ইসরাইলি হেরোন ড্রোন এবং ভারতে উন্নত রুস্তম ড্রোন ভারতের আকাশী নজরদারি ক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। হেরোন হাই-এল্টিটিউড এবং লং এন্ডুরেন্স ড্রোন, যা কয়েক ঘন্টা ধরে উড়তে পারে এবং শত্রুর প্রতিটি চলাচলের উপর নজর রাখতে পারে।

অন্যদিকে রুস্তম ড্রোন DRDO-র উদ্ভাবন এবং এতে উচ্চ-রেজোলিউশন ক্যামেরা, ইনফ্রারেড সেন্সর এবং ডেটা ট্রান্সমিশন সিস্টেম রয়েছে, যার ফলে এটি লাইভ ছবি পাঠাতে পারে। প্রয়োজন হলে এই ড্রোনগুলিকে অস্ত্র দিয়েও সজ্জিত করা যায়, যার ফলে এরা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।

Leave a comment