গত কয়েক দশক ধরে ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী এর শক্তিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশেষ করে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারত যে সাফল্য অর্জন করেছে তা কেবলমাত্র প্রযুক্তিগত দিক থেকেই উৎকৃষ্ট নয়, বরং শত্রু দেশগুলির জন্য একটি ভয়ঙ্কর হুমকি হয়ে উঠেছে।
High Tech Missiles of India: ভারত প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ক্রমাগত উন্নতি করেছে এবং বিশেষ করে ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে নিজের শক্তি প্রমাণ করেছে। দেশটি বহু উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র উদ্ভাবন করেছে যা বিশ্বজুড়ে এর প্রযুক্তি ও ক্ষমতার জন্য পরিচিত। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলি কেবলমাত্র ভারতের নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করেছে তাই নয়, শত্রু দেশগুলির জন্যও একটি গুরুতর সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করেছে। আসুন জেনে নেই ভারতের ৫টি উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে, যা শক্তি ও প্রযুক্তির অনন্য উদাহরণ।
১. অগ্নি-V: পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র
ভারতের সবচেয়ে উন্নত ও শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্রগুলির মধ্যে অগ্নি-V-এর নাম সবার আগে আসে। এটি একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (ICBM), যার আঘাতের ব্যাসার্ধ ৮,০০০ কিলোমিটার। এর অর্থ হল এটি আমেরিকা, ইউরোপ এবং এশিয়ার প্রায় প্রতিটি কোণে পৌঁছাতে পারে। অগ্নি-V বিশেষ করে পারমাণবিক অস্ত্র পরিবহনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, এবং এর "ক্যানিস্টারাইজড লঞ্চ" প্রযুক্তি শত্রুর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে।
এর MIRV (Multiple Independently Targetable Reentry Vehicle) ক্ষমতা নিশ্চিত করে যে একই সাথে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা সম্ভব, যা শত্রুর প্রতিরক্ষা করা অত্যন্ত কঠিন করে তোলে। অগ্নি-V-এর এই প্রযুক্তি এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষেপণাস্ত্রগুলির একটি করে তুলেছে।
২. ব্রহ্মোস: সুপারসোনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র
ব্রহ্মোস ভারত ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে উদ্ভাবিত একটি সুপারসোনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। ব্রহ্মোসের গতি শব্দের গতির তিনগুণ, যা এটিকে অত্যন্ত বিপজ্জনক করে তোলে। এর ব্যাসার্ধ ৫০০ কিলোমিটারের বেশি এবং এটি স্থল, সমুদ্র ও আকাশ থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়। ব্রহ্মোসের রাডার এড়ানোর ক্ষমতা এবং ১ মিটারের নির্ভুলতা এটিকে শত্রুর জন্য একটি ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ করে তোলে।
এর দ্রুত গতির কারণে, শত্রুর কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়ার সময় থাকে না। ব্রহ্মোস এখন ভারতীয় নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং সেনাবাহিনী তিনটি দিয়েই ব্যবহৃত হয় এবং এটি ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।
৩. নাগ ক্ষেপণাস্ত্র: ট্যাংকের মৃত্যু
ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ও উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র হল নাগ। এটি একটি অ্যান্টি-ট্যাংক গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র (ATGM), যা একবার উৎক্ষেপণের পর লক্ষ্যবস্তুকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চিহ্নিত করে ধ্বংস করে। নাগ ক্ষেপণাস্ত্র থার্মাল ইমেজিং সিকার ব্যবহার করে, যার ফলে এটি দিন, রাত, ধুলো-ধোঁয়া এবং যেকোনো আবহাওয়ায় লক্ষ্যবস্তুকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারে।
এর টপ অ্যাটাক মোড ট্যাংকের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশকেও ভেদ করার ক্ষমতা রাখে। ভারতীয় মরুভূমি অঞ্চলে এই ক্ষেপণাস্ত্র শত্রুর ট্যাংকগুলির জন্য মৃত্যু হয়ে উঠেছে, এবং এর ক্ষমতা দেখে শত্রুর কৌশলবিদরাও অনেক সময় ভাবতে বাধ্য হন।
৪. অস্ত্র ক্ষেপণাস্ত্র: আকাশে মৃত্যুর বান
অস্ত্র ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের প্রথম স্বদেশী এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র, যার ১০০ কিলোমিটার দূর থেকে শত্রুর বিমান ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রে উন্নত রাডার হোমিং প্রযুক্তি এবং ইলেকট্রনিক কাউন্টার-মেজার্স (ECCM) প্রযুক্তি রয়েছে, যা এটিকে শত্রুর জ্যামিংয়ের প্রচেষ্টা থেকে রক্ষা করে। অস্ত্র ক্ষেপণাস্ত্র ভারতীয় বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান যেমন তেজস, সুখোই-30 এবং মিরাজ 2000-এ স্থাপন করা হয়েছে।
এই ক্ষেপণাস্ত্র শত্রুর আকাশ আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য ভারতীয় বিমানবাহিনীর জন্য অত্যন্ত কার্যকর অস্ত্র হয়ে উঠেছে, এবং এটি ভারতকে আকাশ যুদ্ধে একটি শক্তিশালী অবস্থান দখল করতে সাহায্য করেছে।
৫. শৌর্য ক্ষেপণাস্ত্র: হাইপারসোনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র
শৌর্য ক্ষেপণাস্ত্র একটি হাইপারসোনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ভ্রমণ করে। এর গতি Mach 7.5, অর্থাৎ এটি শব্দের গতির সাতগুণ বেশি। শৌর্য ক্ষেপণাস্ত্র বিশেষ করে অত্যন্ত নিম্ন উচ্চতায় উড়তে পারে, যার ফলে এটি শত্রুর রাডারকে এড়াতে পারে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হল শত্রুর ঘাঁটিতে নির্ভুল আঘাত করা।
এর ব্যাসার্ধ ৭০০ থেকে ৮০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এবং এটি ঐতিহ্যগত ও পারমাণবিক আক্রমণ চালাতে সক্ষম। শৌর্য ক্ষেপণাস্ত্রের হাইপারসোনিক প্রযুক্তি ভারতীয় প্রতিরক্ষাকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে, কারণ এটিকে শনাক্ত করা এবং থামানো শত্রুর পক্ষে অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে।