ভারতে ই-পাসপোর্ট চালু: উন্নত সুরক্ষা ও পরিচয় নিশ্চিতকরণ

🎧 Listen in Audio
0:00

ভারত সরকার পরিচয় ও সুরক্ষা উন্নত করার লক্ষ্যে ই-পাসপোর্ট চালু করেছে। এই নতুন ই-পাসপোর্ট ঐতিহ্যগত পাসপোর্টের তুলনায় আরও নিরাপদ এবং উন্নত, কারণ এতে RFID (Radio Frequency Identification) চিপ এবং PKI (Public Key Infrastructure) ইনফ্রাস্ট্রাকচারের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

ই-পাসপোর্ট ভারতে চালু: ভারত সুরক্ষা ও পরিচয়ের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন দেশে ঐতিহ্যগত পাসপোর্টের পরিবর্তে নতুন ই-পাসপোর্ট জারি করা হচ্ছে, যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১লা এপ্রিল ২০২৪ থেকে কার্যকর করেছে। এই নতুন ই-পাসপোর্ট একটি আধুনিক প্রযুক্তিগত কাঠামোর উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা পাসপোর্টের সুরক্ষা মান আরও শক্তিশালী করে।

ই-পাসপোর্টের চালু হওয়ার ফলে ভারতীয় নাগরিকরা ভ্রমণ ও পরিচয় সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিক পাবে, যা কেবল তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে না বরং ভ্রমণের সময়ও সর্বোচ্চ স্তরের সুরক্ষা প্রদান করবে।

ই-পাসপোর্টের বৈশিষ্ট্য এবং প্রযুক্তিগত কাঠামো

ই-পাসপোর্টে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (RFID) চিপ এবং অ্যান্টেনার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা এটিকে ঐতিহ্যগত পাসপোর্ট থেকে আলাদা করে। এই চিপের প্রধান কাজ হল পাসপোর্টের তথ্য ডিজিটালভাবে সুরক্ষিত করা এবং পাশাপাশি পাসপোর্টে সংরক্ষিত ব্যক্তিগত ও বায়োমেট্রিক তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা।

এছাড়াও, পাসপোর্টের কভারের নিচের দিকে একটি সোনালী রঙের ই-পাসপোর্ট প্রতীকও মুদ্রিত থাকে, যা এটিকে অন্যান্য সাধারণ পাসপোর্ট থেকে আলাদা করে চিনতে সাহায্য করে। এছাড়াও, পাবলিক কি ইনফ্রাস্ট্রাকচার (PKI) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা পাসপোর্টের সুরক্ষা আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। এই প্রযুক্তি পাসপোর্টে সংরক্ষিত বায়োমেট্রিক তথ্য এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সুরক্ষা ও প্রমাণিকতা নিশ্চিত করে, যার ফলে জালিয়াতি ও পাসপোর্ট জালিয়াতির সম্ভাবনা কমে যায়।

তথ্য সুরক্ষার নতুন মানদণ্ড

ই-পাসপোর্টের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর তথ্য সুরক্ষা। এই নতুন সিস্টেম পাসপোর্টে ছেনোছেনি বা যেকোনো ধরণের জালিয়াতি রোধ করতে সাহায্য করবে। এখন পর্যন্ত, ঐতিহ্যগত পাসপোর্টে সুরক্ষা নিয়ে অনেক ধরণের চ্যালেঞ্জ ছিল, কিন্তু ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলি অনেকাংশে সমাধান হবে।

এই প্রযুক্তি পাসপোর্টের তথ্য এনক্রিপ্টেড ফর্মে সংরক্ষণ করে, যার ফলে কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনায় তথ্য চুরি বা ক্ষতির সম্ভাবনা অত্যন্ত কমে যায়। এর ফলে সুরক্ষা সংস্থাগুলির জন্যও পাসপোর্ট যাচাই করা সহজ হবে এবং তদন্ত প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং নির্ভুলতা বৃদ্ধি পাবে।

ই-পাসপোর্টের চালু

ই-পাসপোর্ট প্রকল্পটি পাসপোর্ট সেবা কর্মসূচী (PSP) সংস্করণ ২.০ এর অধীনে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে শুরু করা হয়েছে। এই পরীক্ষামূলক প্রকল্পের অধীনে ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে ভারতের অনেক প্রধান শহরে ই-পাসপোর্ট বিতরণ শুরু হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নাগপুর, ভুবনেশ্বর, জম্মু, গোয়া, শিমলা, রায়পুর, অমৃতসর, জয়পুর, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ, সুরাট, রাঁচি এবং দিল্লি।

এরপর, ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দেশের সকল পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রে ই-পাসপোর্ট পাওয়া যাবে। তামিলনাড়ুতে ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে ৩ মার্চ ২০২৫ থেকে এবং ২২ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত রাজ্যে ২০,৭২৯ টি ই-পাসপোর্ট বিতরণ করা হয়েছে।

পুরোনো পাসপোর্টের বৈধতা

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যাদের কাছে আগে থেকেই পাসপোর্ট আছে, তাদের ই-পাসপোর্টের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে আবেদন করার প্রয়োজন নেই। তাদের বর্তমান পাসপোর্ট তার মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বৈধ থাকবে এবং সাধারণভাবে ব্যবহার করা যাবে। অর্থাৎ, যদি আপনার কাছে আগে থেকে পাসপোর্ট থাকে, তাহলে আপনি মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু ভবিষ্যতে ই-পাসপোর্ট নেওয়ার জন্য আপনাকে আবেদন করতে হবে।

ভবিষ্যতে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

ই-পাসপোর্টের চালু হওয়ার ফলে কেবল সুরক্ষা মান বৃদ্ধি পাবে না, বরং এটি ভারতীয় নাগরিকদের জন্য আন্তর্জাতিক ভ্রমণকে আরও সহজ এবং নিরাপদ করে তুলবে। এছাড়াও, এটি ডিজিটাল ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও শক্তিশালী করবে, কারণ এতে ডিজিটালভাবে সুরক্ষিত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আগামী সময়ে আরও উন্নত হবে।

ভারত সরকারের এই উদ্যোগ কেবল ভ্রমণ সুরক্ষা নিশ্চিত করবে না, বরং এটিও প্রমাণ করে যে ভারত ডিজিটাল উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে ক্রমাগত পদক্ষেপ নিচ্ছে। যেমন ই-পাসপোর্টের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে, তেমনি নাগরিকরা সর্বোচ্চ স্তরের সুরক্ষা এবং সুবিধা পাবে, যা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণকে আরও নিরাপদ এবং সুবিধাজনক করে তুলবে।

Leave a comment