পিএসএলভি (PSLV - Polar Satellite Launch Vehicle) ভারতের তৃতীয় প্রজন্মের একটি বহুমুখী প্রক্ষেপণ যান, যা ISRO (ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা) কর্তৃক উদ্ভাবিত।
ISRO PSLV-C61 Mission: দশক ধরে নির্ভরযোগ্যতা ও সাফল্যের প্রতীক ভারতের বিশ্বস্ত মহাকাশযান পিএসএলভি (PSLV), এইবার PSLV-C61 মিশনে আশা অনুযায়ী কাজ করতে পারেনি। ১৮ মে ২০২৫-এ ISRO (ISRO) কর্তৃক উৎক্ষেপিত এই মিশন, যা দেশের জাতীয় নিরাপত্তা, কৃষি পর্যবেক্ষণ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তার নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতা কেবলমাত্র একটি প্রযুক্তিগত ত্রুটি নয়, বরং ভারতের মহাকাশ কৌশলের জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসাবেও বিবেচিত হচ্ছে।
PSLV-C61: মিশনের উদ্দেশ্য কী ছিল?
PSLV-C61-এর মাধ্যমে ISRO EOS-09 নামক একটি অত্যাধুনিক পৃথিবী পর্যবেক্ষণ উপগ্রহ (RISAT-1B) কে সূর্য-সমকালীন মেরু কক্ষপথে (Sun Synchronous Polar Orbit) স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিল। এই উপগ্রহটি C-ব্যান্ড সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার (SAR) দিয়ে সজ্জিত ছিল, যা মেঘ, ধুলো এবং অন্ধকারেও উচ্চমানের ভূমি ছবি প্রেরণ করতে সক্ষম।
এই প্রযুক্তির প্রধান ব্যবহার কৃষি পর্যবেক্ষণ, বন সংরক্ষণ, বন্যা-দুর্ভিক্ষের মূল্যায়ন এবং জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত নজরদারি কার্যকলাপে। EOS-09-এর সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ভারত 24x7 নজরদারি এবং উচ্চ-রেজোলিউশন ইমেজিংয়ের ক্ষমতা লাভ করত, যার ফলে দেশের কৌশলগত প্রস্তুতি এবং রিমোট সেন্সিং অবকাঠামো আরও শক্তিশালী হত।
PSLV-এর ঐতিহাসিক নির্ভরযোগ্যতা
PSLV ভারতের তৃতীয় প্রজন্মের প্রক্ষেপণ যান, যা ১৯৯৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ক্রমাগত সাফল্যের পতাকা উত্তোলন করে আসছে। তার ৩০ বছরের কর্মজীবনে PSLV ১০০-এরও বেশি সফল মিশন সম্পন্ন করেছে। এটি মাত্র তৃতীয়বার যখন PSLV ব্যর্থ হয়েছে। এর আগে ১৯৯৭ সালে PSLV-D1 এবং ২০০৭ সালে PSLV-C39 মিশন ব্যর্থ ঘোষণা করা হয়েছিল। এইভাবে PSLV-C61-এর ব্যর্থতা একটি বিরল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মিশন কেন ব্যর্থ হলো? কোথায় প্রযুক্তিগত ত্রুটি হয়েছিল?
মিশনের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় স্বাভাবিকভাবে কাজ করেছিল। কিন্তু যখন যান তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছেছিল, চেম্বার চাপে হ্রাস লক্ষ্য করা গেছে। এই পর্যায়টি HTPB-ভিত্তিক কঠিন জ্বালানি (Hydroxyl-Terminated Polybutadiene) -এর উপর নির্ভর করে, এবং চাপ হ্রাসের কারণে রকেটে প্রয়োজনীয় থ্রাস্ট উৎপন্ন হয়নি। এর ফলে উপগ্রহকে তার লক্ষ্য কক্ষপথে পৌঁছানো যায়নি।
ISRO প্রাথমিক তদন্তে তিনটি সম্ভাব্য কারণ সামনে রেখেছে:
- ইনসুলেশনের ত্রুটি – সম্ভবত জ্বালানি জ্বালানোর প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করেছে।
- নোজলে ত্রুটি – যার ফলে সঠিক দিকে থ্রাস্ট তৈরি হয়নি।
- জ্বালানির অসমান জ্বলন – যার ফলে চেম্বারে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে ISRO ব্যর্থতা বিশ্লেষণ কমিটি (FAC) গঠন করেছে, যা সম্পূর্ণ ঘটনার বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত তদন্ত করবে। রিপোর্টের ভিত্তিতে ভবিষ্যতের উৎক্ষেপণকে নিরাপদ করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাতীয় নিরাপত্তায় প্রভাব এবং কৌশলগত গুরুত্ব
EOS-09-এর উৎক্ষেপণ কেবলমাত্র একটি বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টা ছিল না, বরং এটি ভারতের কৌশলগত রিমোট সেন্সিং ক্ষমতাকে নতুন মাত্রা দেওয়ার পদক্ষেপ ছিল। এর সাহায্যে:
- সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা কার্যকলাপের নজরদারি,
- ঘুষেঢোকা বা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের শনাক্তকরণ,
- প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস,
- এবং কৃষি পরিকল্পনার জন্য ভূমি ব্যবহারের তথ্য প্রস্তুত করা হত।
এখন এই উপগ্রহের উৎক্ষেপণ ব্যর্থতার ফলে কেবলমাত্র এই কাজগুলিতে বিলম্ব হতে পারে, বরং ভারতকে কিছু সময়ের জন্য তার নজরদারি ক্ষমতার জন্য বিদেশি উপগ্রহের তথ্যের উপর নির্ভর করতে হতে পারে।
ISRO-এর পরবর্তী চ্যালেঞ্জ
ISRO-এর খ্যাতি কেবলমাত্র ভারতে নয়, বরং বিশ্বব্যাপী একটি নির্ভুল এবং সাশ্রয়ী মূল্যের মহাকাশ সংস্থা হিসাবে। PSLV-C61-এর ব্যর্থতা একটি অস্থায়ী আঘাত অবশ্যই দিয়েছে, কিন্তু ISRO-এর শক্তি রয়েছে – শেখা এবং উন্নতি করা। তাই আশা করা হচ্ছে ISRO আগামী কয়েক মাসের মধ্যে EOS-09 পুনরায় উৎক্ষেপণ করবে এবং তার প্রযুক্তিগত ত্রুটিগুলি দূর করে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।