অসম শীঘ্রই ভারতের প্রথম এমন রাজ্য হতে চলেছে যা নিজস্ব উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করবে। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পের অধীনে ASSAMSAT নামক উপগ্রহটি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) এবং ভারতীয় জাতীয় মহাকাশ উন্নয়ন ও কর্তৃপক্ষ কেন্দ্র (IN-SPACe)-এর সহযোগিতায় উন্নত ও উৎক্ষেপণ করা হবে।
গুয়াহাটি: অসম মহাকাশে উপগ্রহ প্রেরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং সম্ভবত এটি করার ক্ষেত্রে ভারতের প্রথম রাজ্য হতে চলেছে। রাজ্য সরকার ২০২৫ সালের বাজেটে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পের প্রস্তাব রেখেছে, যার অধীনে "ASSAMSAT" নামক উপগ্রহটি উৎক্ষেপণ করা হবে। এই উপগ্রহের উদ্দেশ্য গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলির জন্য অবিরত এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করা। এটি ভারতীয় জাতীয় মহাকাশ উন্নয়ন ও কর্তৃপক্ষ কেন্দ্র (IN-SPACe)-এর সহযোগিতায় উন্নত করা হবে।
IN-SPACe ভারতে মহাকাশ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার জন্য কাজ করে, যার ফলে অসমের এই উদ্যোগ দেশের মহাকাশ কর্মসূচিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই প্রকল্পের জন্য ৪৫০-৫০০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছেন। এই উপগ্রহ কৃষি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, অবকাঠামো এবং সীমান্ত নজরদারি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কার্যকরী হবে।
অসমSAT: কেন এই মিশন বিশেষ?
অসম সরকার রাজ্যের সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উন্নত করার জন্য এই উপগ্রহ উৎক্ষেপণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উপগ্রহ থেকে রাজ্যের নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি হবে:
* দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা: অসম প্রতি বছর বন্যা এবং ভূমিধ্বসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে। এই উপগ্রহ বন্যার পূর্বাভাস দেবে, যার ফলে ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে ত্বরাণ্বিত করা যাবে।
* কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব: উপগ্রহের তথ্যের সাহায্যে মাটির গুণমান, ফসলের ধরণ এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাসের সঠিক বিশ্লেষণ করা যাবে, যার ফলে কৃষকরা আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
* সীমান্ত নিরাপত্তা ও অবৈধ অনুপ্রবেশের উপর নজরদারি: উপগ্রহ রাজ্যের আন্তর্জাতিক সীমান্তে নজর রাখবে এবং অবৈধ কার্যকলাপের তথ্য সরবরাহ করবে।
* অবকাঠামো ও নগর উন্নয়নে সহায়তা: রাজ্যে রাস্তা, বিদ্যুৎ, পানি এবং অন্যান্য মৌলিক সেবাগুলির পরিকল্পনা এবং তদারকির জন্যও এই উপগ্রহ কার্যকরী হবে।
* পরিবেশ সংরক্ষণ: বন উজাড়, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং দূষণের মাত্রা পর্যবেক্ষণের জন্যও এই উপগ্রহ ব্যবহার করা হবে।
ISRO এবং IN-SPACe-এর সহযোগিতা
অসম সরকার এই মিশনকে সফল করার জন্য ISRO এবং IN-SPACe-এর বিজ্ঞানীদের সাথে মিলে কাজ করছে। IN-SPACe ভারতে ব্যক্তিগত মহাকাশ সংস্থা এবং স্টার্টআপগুলিকে উৎসাহিত করার জন্য কাজ করে, যার ফলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সম্ভব হবে। "এই উপগ্রহ অসমকে ডিজিটালভাবে শক্তিশালী করবে এবং রাজ্যের বিভিন্ন চাহিদার জন্য রিয়েল-টাইম তথ্য সরবরাহ করবে। এটি ভারতের মহাকাশ ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হবে।"
কিভাবে উৎক্ষেপণ হয় উপগ্রহ?
ASSAMSAT সম্ভবত সতীশ ধওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র, শ্রীহরিকোটা থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে। ভারতে উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য তিনটি প্রধান উৎক্ষেপণ যান ব্যবহার করা হয়:
* PSLV (Polar Satellite Launch Vehicle): ছোট এবং মাঝারি উপগ্রহের জন্য উপযুক্ত।
* GSLV (Geosynchronous Satellite Launch Vehicle): ২২০০ কিলোগ্রামের বেশি ওজনের উপগ্রহগুলিকে জিওসিঙ্ক্রোনাস কক্ষপথে স্থাপন করে।
* SSLV (Small Satellite Launch Vehicle): কম খরচে ছোট উপগ্রহের জন্য আদর্শ।
এই মিশনের জন্য GSLV বা PSLV ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে উপগ্রহটিকে সঠিক কক্ষপথে স্থাপন করা যায়।
ভারতের মহাকাশ ক্ষেত্রে অসমের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ
ASSAMSAT-এর উৎক্ষেপণ কেবলমাত্র রাজ্যের জন্য নয়, সমগ্র ভারতের জন্য একটি বড় সাফল্য হবে। এই পদক্ষেপ ভারতের আত্মনির্ভর মহাকাশ নীতিকে আরও শক্তিশালী করবে এবং ভবিষ্যতে অন্যান্য রাজ্যগুলিকেও একই দিকে কাজ করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে। অসম সরকারের এই উদ্যোগ প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, প্রশাসনিক সংস্কার এবং সামাজিক উন্নয়নের দিকে একটি মাইলফলক হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। এখন সবার দৃষ্টি এই ঐতিহাসিক মিশনের উৎক্ষেপণের তারিখ এবং এর সাফল্যের উপর নির্ভর করছে।