কিয়া ক্যারেন্স ক্লাভিস: ভারতে আগমন করছে নতুন প্রযুক্তি ও স্টাইলিশ MPV

🎧 Listen in Audio
0:00

বিশ্বজুড়ে তার স্টাইলিশ এবং ফিচার-লোডেড গাড়িগুলির জন্য বিখ্যাত দক্ষিণ কোরিয়ার অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠান Kia এবার ভারতীয় বাজারে আরও একটি বড় ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে। কোম্পানির পক্ষ থেকে ২৩শে মে, ২০২৫-তে নতুন Kia Carens Clavis আনুষ্ঠানিকভাবে লঞ্চ করা হবে। এটি মে মাসের শুরুতেই প্রকাশ করা হয়েছিল, কিন্তু এখন এর পর্দা সম্পূর্ণরূপে উঠবে। এই MPVটি অনেক আধুনিক ফিচার, উন্নত নিরাপত্তা প্রযুক্তি এবং শক্তিশালী ইঞ্জিন বিকল্প নিয়ে আসবে।

স্টাইল এবং ডিজাইনে নতুন টুইস্ট

Kia Carens Clavis এবার সম্পূর্ণ নতুন এবং প্রিমিয়াম ডিজাইনে উন্মোচিত হচ্ছে, যা এটিকে অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী MPV থেকে বেশ আলাদা করে তোলে। এর সামনে নতুন প্রযুক্তির সাথে LED আইস কিউব হেডলাইট এবং ডে-টাইম রানিং লাইট (DRL) দেওয়া হয়েছে, যা এই গাড়িকে একটি আধুনিক এবং উচ্চ-প্রযুক্তির লুক দেয়। পিছনে কানেক্টেড LED টেললাইট রয়েছে, যা রাতে গাড়িকে একটি বিশেষ পরিচয় দেয়। পাশের কালো দরজার গার্নিশ এর স্টাইলকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

গাড়ির লুককে আরও শক্তিশালী করার জন্য এতে ১৭ ইঞ্চির ডায়মন্ড-কাট অ্যালয় হুইল লাগানো হয়েছে, যা এটিকে রাস্তায় চমৎকার আকর্ষণ দেয়। এছাড়াও, অভ্যন্তরের কথা বললে, ডুয়াল-টোন কালার থিম এটিকে ভেতর থেকেও প্রিমিয়াম অনুভূতি দেয়। টু-স্পোক স্টিয়ারিং হুইল এবং ফিউচারিস্টিক ড্যাশবোর্ড ডিজাইন এর কেবিনকে উন্নত এবং উচ্চ-শ্রেণীর করে তোলে। মোটের উপর, Kia Carens Clavis ডিজাইন এবং স্টাইলের ক্ষেত্রে একটি স্টাইলিশ পারিবারিক গাড়ির ছবি উপস্থাপন করে।

ফিচারে ভরা: প্রযুক্তির পাওয়ারহাউস

Kia Carens Clavis কে প্রযুক্তির দিক থেকে একটি শক্তিশালী গাড়ি বলা যায়। এতে ২৬.৬২ ইঞ্চির ডুয়াল-স্ক্রিন ডিসপ্লে দেওয়া হয়েছে, যা গাড়িকে ভেতর থেকে একটি বিলাসবহুল লুক দেয়। এই ডুয়াল ডিসপ্লেতে একদিকে ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টার রয়েছে, যেখানে ড্রাইভিং-সংক্রান্ত সকল প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায়, এবং অন্যদিকে টাচস্ক্রিন ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম রয়েছে, যা থেকে মিউজিক, নেভিগেশন এবং স্মার্ট কানেক্টিভিটির মতো সুবিধা পাওয়া যায়। এই সিস্টেম Android Auto এবং Apple CarPlay-কেও সমর্থন করে।

এছাড়াও এই গাড়িতে সেসব ফিচার দেওয়া হয়েছে যা একটি প্রিমিয়াম গাড়িতে থাকে। প্যানোরামিক সানরুফ থেকে শুরু করে ওয়্যারলেস চার্জার, Bose অডিও সিস্টেম এবং এয়ার পিউরিফায়ার পর্যন্ত – সবকিছুই এতে রয়েছে। ফ্রন্ট ভেন্টিলেটেড সিট গরমে কুলিংয়ের ভালো অভিজ্ঞতা দেয় এবং ৬৪ রঙের অ্যাম্বিয়েন্ট লাইটিং এটিকে ভেতর থেকে বেশ স্টাইলিশ করে তোলে। ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা এবং সমস্ত উইন্ডোর জন্য অটো আপ-ডাউন ফাংশনের মতো ফিচার এটিকে একটি স্মার্ট পারিবারিক গাড়ি করে তোলে, যা আরাম এবং সুবিধার দুটোই সুন্দর মিশ্রণ উপস্থাপন করে।

নিরাপত্তায়ও নম্বর ওয়ান: ADAS লেভেল-২ সাপোর্ট পাওয়া যাবে

Kia Carens Clavis কে শুধু স্টাইল এবং ফিচার নয়, নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। এই গাড়িতে কোম্পানির পক্ষ থেকে স্ট্যান্ডার্ড নিরাপত্তা হিসেবে ৬টি এয়ারব্যাগ দেওয়া হয়েছে, যা কোনও দুর্ঘটনার সময় ভেতরে বসা লোকদের উন্নত সুরক্ষা প্রদান করে। এর সাথে EBD-সহ ABS, হিল অ্যাসিস্ট কন্ট্রোল, ব্রেক অ্যাসিস্ট সিস্টেম (BAS), এবং সমস্ত চার চাকায় ডিস্ক ব্রেকের মতো প্রয়োজনীয় ফিচারও রয়েছে। এছাড়া ভেহিকেল স্ট্যাবিলিটি ম্যানেজমেন্ট (VSM) এর মতো প্রযুক্তি গাড়িকে স্লিপ হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং রাস্তায় ভালো ধরে রাখে।

এই গাড়ির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এতে আপনি লেভেল-২ ADAS (Advanced Driver Assistance System) পাবেন, যা এটিকে আরও বেশি নিরাপদ করে তোলে। ADAS-এর অধীনে গাড়িতে অনেক স্মার্ট প্রযুক্তিগত ফিচার দেওয়া হয়েছে যেমন লেন কিপ অ্যাসিস্ট, যা গাড়িকে নিজের লেনে রাখে, এবং ফরওয়ার্ড কোলিশন ওয়ার্নিং, যা সামনে কোনও গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগার আশঙ্কা হলে আগে থেকেই সতর্ক করে। এর সাথে অ্যাডাপ্টিভ ক্রুজ কন্ট্রোল এবং অটোমেটিক ইমারজেন্সি ব্রেকিংয়ের মতো ফিচার দীর্ঘ দূরত্বের ড্রাইভকে আরামদায়ক এবং নিরাপদ করে তোলে।

তিনটি ইঞ্জিন বিকল্প: প্রতিটি ড্রাইভারের জন্য একটি পারফেক্ট অপশন

Kia Carens Clavis তিনটি ইঞ্জিন অপশনের সাথে উন্মোচিত হবে।

  1. ১.৫ লিটার ন্যাচারালি এস্পিরেটেড পেট্রোল ইঞ্জিন
  2. ১.৫ লিটার টার্বো পেট্রোল ইঞ্জিন
  3. ১.৫ লিটার ডিজেল ইঞ্জিন

টার্বো পেট্রোল ইঞ্জিনটিকে নতুন ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশনের সাথে আনা হবে, যা উন্নত গিয়ার শিফ্টিং এবং ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা দেবে। এছাড়াও, অটোমেটিক ট্রান্সমিশন এবং ড্রাইভিং মোডস (যেমন ইকো, সিটি এবং স্পোর্ট) এর সুবিধাও পাওয়া যাবে।

কী হতে পারে দাম?

Kia Carens Clavis-এর আসল দাম লঞ্চের দিনেই জানা যাবে, তবে অটো এক্সপার্টদের মতে, এর প্রাথমিক এক্স-শোরুম দাম প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা হতে পারে। অন্যদিকে, এর টপ ভেরিয়েন্টের দাম ২০ থেকে ২১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যেতে পারে। এই দামে Carens Clavis একটি প্রিমিয়াম MPV হিসেবেই উঠে আসবে, এর সাথে এটি Mahindra XUV700, Tata Safari এবং Toyota Innova Crysta-র মতো অনেক মিড-সাইজ SUV-কেও কঠোর প্রতিযোগিতা দিতে পারবে।

Kia Carens Clavis ভারতীয় অটো বাজারে এমন একটি গাড়ি হিসেবে আসছে যা পারিবারিক গাড়ির দিকে লক্ষ্য করে ডিজাইন করা হয়েছে, কিন্তু প্রযুক্তি, নিরাপত্তা এবং ড্রাইভিং পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে কোনো প্রিমিয়াম SUV থেকে কম নয়। এর ফিচার, ইঞ্জিন বিকল্প এবং সম্ভাব্য দাম এটিকে একটি শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী করে তোলে। তাই ২৩শে মে এর লঞ্চ ভারতীয় গাড়ির বাজারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হতে পারে।

Leave a comment