সত্য নাদেলা: AI যুগে মৌলিক জ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম

🎧 Listen in Audio
0:00

আজকের দিনে যখন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) দ্রুত সফ্টওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির চেহারা বদলে দিচ্ছে, তখন মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলার তরুণদের উদ্দেশ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বার্তা রয়েছে — মৌলিক জ্ঞানের শক্তিকে কখনোই কম মূল্যায়ন করবেন না।

Satya Nadela on AI: যখন পৃথিবী দ্রুত আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সফ্টওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে একটা বিপ্লবের মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, তখন মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা তরুণদের একটি সরল ও স্পষ্ট পরামর্শ দিয়েছেন - মৌলিক ধারণাগুলিকে কখনো উপেক্ষা করবেন না। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মজীবন গঠনের আকাঙ্ক্ষা পোষণকারী ছাত্র ও পেশাদারদের জন্য এই সময় যতটা চ্যালেঞ্জিং, ততটাই সম্ভাবনাময়।

খ্যাতনামা টেক ইউটিউবার সাজ্জাদ খড়ে-র সাথে আলাপচারিতায় নাদেলা জানিয়েছেন, AI যতই স্মার্ট হোক না কেন, একটি দক্ষতা আছে যা সবসময় মানুষকে এগিয়ে রাখবে — কম্পিউটেশনাল থিঙ্কিং।

AI-এর যুগ, কিন্তু মানুষের চিন্তাভাবনার প্রয়োজন অব্যাহত

নাদেলার মতে, বর্তমান সময়ে GitHub Copilot, ChatGPT এবং কোড জেনারেটরের মতো AI টুলস ডেভেলপারদের সাহায্য করছে, কিন্তু সমস্যার সঠিক সংজ্ঞা দেওয়া, এর মূলে পৌঁছানো এবং সমাধানের পথ তৈরি করা মানুষের কাজ। তার মতে, শুধুমাত্র কোডিং জানলেই যথেষ্ট নয়। আপনাকে বুঝতে হবে কোডের পেছনে লজিক কি, সিস্টেম কীভাবে ডিজাইন করা হয় এবং কীভাবে একটি অ্যাপ্লিকেশনের আর্কিটেকচার তৈরি হয়।

AI-এর সাথে প্রতিযোগিতা নয়, সহযোগিতা করতে হবে

সাজ্জাদ খড়ের এক প্রশ্নের উত্তরে, AI কি নতুন টেক জবগুলিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে? নাদেলা বলেছেন, প্রযুক্তি থেকে ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই, বরং তা বুঝতে এবং তার সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রয়োজন। তিনি জানিয়েছেন, মাইক্রোসফটের কিছু প্রজেক্টে আজ ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কোড AI দ্বারা লেখা হচ্ছে, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে মানুষের প্রয়োজন শেষ হয়ে যাচ্ছে। “আমরাই এখনও সেই লোকজন যারা সমস্যা বুঝতে পারে, নির্দেশ নির্ধারণ করে এবং সমাধানের দিক নির্দেশ করে।”

মৌলিক দক্ষতা: প্রযুক্তিগত সাফল্যের মেরুদণ্ড

নাদেলা বিশেষ করে কম্পিউটেশনাল থিঙ্কিং এবং সিস্টেম ডিজাইনকে তরুণদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, যারা প্রযুক্তি ক্ষেত্রে পদার্পণ করতে চান, তাদের এই মৌলিক নীতিগুলিকে আত্মস্থ করতে হবে। তিনি একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেছেন যে, সম্প্রতি একটি বাগ ধরার সময় তিনি GitHub Copilot থেকে সাহায্য পেয়েছেন, কিন্তু সমাধান তখনই এসেছে যখন তিনি নিজেই SQL-এর পুরোনো জ্ঞান আবার খতিয়ে দেখেছেন। এটা স্পষ্ট করে যে, AI টুলস গাইড করতে পারে, কিন্তু সঠিক দিকনির্দেশনা মানুষের চিন্তাধারাই দেয়।

ভারতকে AI-এর জন্য প্রস্তুত করছে

মাইক্রোসফটের ভারতে পরিকল্পনা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে সত্য নাদেলা জানিয়েছেন যে, কোম্পানি ভারত সরকারের ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (MeitY)-এর সাথে মিলে একটি বৃহৎ অভিযান পরিচালনা করছে, যার উদ্দেশ্য ২০২৬ সালের মধ্যে ৫ লাখ ভারতীয়কে AI-তে প্রশিক্ষণ দেওয়া। এই প্রোগ্রামে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, নারী উদ্যোক্তা এবং সফ্টওয়্যার ডেভেলপারদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। নাদেলা জানিয়েছেন, ভারতের মতো তরুণ দেশের জন্য AI-এর ভবিষ্যৎ একটি বিশাল সুযোগ, যদি তরুণরা সঠিক দক্ষতা অর্জনে আগ্রহী হয়।

কোডিং-এর আগে চিন্তা করুন: সফ্টওয়্যার আর্কিটেক্ট হোন

নাদেলা এই আলাপচারিতায় বিশেষভাবে বলেছেন যে, আজকের দিনে একজন ব্যক্তি দ্রুত সফ্টওয়্যার আর্কিটেক্টের ভূমিকায় পৌঁছাতে পারে। কোডিং শুধু প্রথম ধাপ, আসল পরিচয় তখন তৈরি হয় যখন আপনি সম্পূর্ণ সিস্টেম ডিজাইন করতে এবং স্কেলেবল সমাধান তৈরি করতে পারদর্শী হন। তার বিশ্বাস, AI থেকে ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই, বরং তাকে একজন “সহায়ক” হিসেবে দেখতে হবে যা আপনাকে আরও দক্ষ এবং সৃজনশীল করে তোলে।

AI-এর যুগে সবচেয়ে বড় দক্ষতা: চিন্তা করার ক্ষমতা

সত্য নাদেলার এই আলাপচারিতার সবচেয়ে বড় বার্তা হল AI আপনাকে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু আপনার স্থান নিতে পারে না। সে কোড লিখতে পারে, কিন্তু চিন্তা করতে পারে না। সে বিকল্প দিতে পারে, কিন্তু সঠিক নির্বাচন করতে পারে না। যদি তরুণরা কম্পিউটেশনাল থিঙ্কিং, সিস্টেম ডিজাইন এবং সমস্যা সমাধানের মতো মৌলিক দক্ষতাগুলিকে শক্তিশালী করে তোলে, তাহলে তারা শুধু একজন ভালো প্রোগ্রামার নয়, একজন উত্তম উদ্ভাবক হতে পারবে — এবং এই দক্ষতা তাদের AI-এর চেয়েও এগিয়ে নিয়ে যাবে।

Leave a comment