এশিয়ান-১৮ অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের হিমাংশু অসাধারণ পারফরম্যান্স করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তিনি ভালো ফেলনা (জেভেলিন) প্রতিযোগিতায় সোনার পদক জিতে ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছেন।
Asian U18 Athletics Championships: সৌদি আরবে দম্মামে অনুষ্ঠিত এশিয়ান আন্ডার-১৮ অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত ১১ টি পদক জিতে তাদের অভিযান সফলভাবে শেষ করেছে। এই টুর্নামেন্টে ভারতীয় অ্যাথলেটরা একটি সোনা, পাঁচটি রুপো এবং পাঁচটি ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে। ভারতীয় অ্যাথলেটরা অসাধারণ পারফরম্যান্স করে বিভিন্ন ইভেন্টে তাদের ব্যক্তিগত সর্বোত্তম রেকর্ড গড়ে তুলেছে এবং তাদের দেশকে গর্বিত করেছে।
হিমাংশুর ঐতিহাসিক সোনার পদক
এশিয়ান U18 অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২৫ সংস্করণে সবচেয়ে বিশেষ মুহূর্ত ছিল যখন হিমাংশু ভালো ফেলনা প্রতিযোগিতায় সোনার পদক জিতেছিলেন। এটি এই ইভেন্টে ভারতের জন্য প্রথম সোনার পদক ছিল। হিমাংশু ৬৭.৫৭ মিটার দূরত্বে ভালো ছুঁড়ে নতুন নয় শুধু প্রতিযোগিতায় সোনা জিতেছেন, বরং ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ও যুক্ত করেছেন। হিমাংশুর অসাধারণ পারফরম্যান্স চীনের লু হাও (৬৩.৪৫ মিটার) এবং উজবেকিস্তানের রুসলান সাদুল্লাভ (৬১.৯৭ মিটার) কে পিছনে ফেলে সোনার পদক অর্জন করে।
হিমাংশুর এই সোনা ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, কারণ এটি এই ইভেন্টে দেশের প্রথম সোনা এবং এটি আগামী দিনে আরও অ্যাথলেটদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করবে।
ভারতের অন্যান্য পদক বিজয়ী অ্যাথলেটদের অসাধারণ পারফরম্যান্স
এছাড়াও, ভারতের অন্যান্য অ্যাথলেটরাও এশিয়ান U18 অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছে। ১৬ এপ্রিল নিতিন গুপ্ত ৫০০০ মিটার রেস ওয়াকে রুপোর পদক জিতেছেন। নিতিন ২০:২১:৫১ সেকেন্ডে এই রেস শেষ করেছেন, যার ফলে তিনি মাত্র ০.০১ সেকেন্ডের ব্যবধানে চীনের জু নিংহাওকে পিছনে ফেলে রুপোর পদক পেয়েছেন। নিতিনের এই প্রচেষ্টা প্রশংসার যোগ্য, এবং তিনি তার পরিশ্রমের ফল পেয়েছেন, যদিও তিনি সোনার পদক থেকে সামান্য ব্যবধানে বঞ্চিত হয়েছেন।
ভারতের নারীদের মধ্যেও চমৎকার পারফরম্যান্স দেখা গেছে। তন্নু ৪০০ মিটার দৌড়ে রুপোর পদক জিতেছে, যা ভারতের প্রথম নারী পদক ছিল। তন্নু ৫৭.৬৩ সেকেন্ডে এই রেস শেষ করেছেন এবং এটি এই প্রতিযোগিতায় তার সর্বোত্তম পারফরম্যান্স ছিল। তিনি জাপানের ইমামিনে সাকিকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন, যিনি ৫৭.২৫ সেকেন্ডে সোনা পেয়েছেন।
১৬ বছর বয়সী নিশ্চয় এশিয়ান U18 অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিগুণ পদক জিতেছে। নিশ্চয় শট পুটে ১৯.৫৯ মিটার দূরত্বে ছুঁড়ে রুপোর পদক জিতেছে এবং ডিস্কাস থ্রোতে ৫৮.৮৫ মিটার দূরত্বে ছুঁড়ে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে। তার পারফরম্যান্স তাকে একজন প্রধান অ্যাথলেট করে তুলেছে এবং ভবিষ্যতে শট পুট এবং ডিস্কাস থ্রোতে ভারতের আশার প্রতীক হবে।
আরতির ব্রোঞ্জ পদক - দ্বিগুণ সাফল্য
আরতি এই প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটার এবং ২০০ মিটার দৌড়ে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে। তিনি ১০০ মিটার দৌড়ে ১১.৯৩ সেকেন্ড এবং ২০০ মিটারে ২৪.৩১ সেকেন্ড সময় নিয়েছেন, যা তার ব্যক্তিগত সর্বোত্তম ছিল। আরতির এই প্রচেষ্টা তাকে নতুন নয় শুধু ব্রোঞ্জ পদক এনে দিয়েছে, বরং তার আগামী দিনে আরও সাফল্য অর্জনের সম্ভাবনাকেও শক্তিশালী করেছে।
ছেলেদের হাই জাম্প ইভেন্টে দেবক ভূষণ ২.০৩ মিটার লাফ দিয়ে রুপোর পদক জিতেছে। তিনি মাত্র ০.২ মিটারের ব্যবধানে সোনার পদক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, যা কুয়েতের মোহাম্মদ আলদুয়াজ জিতেছে। দেবকের এই লাফ অবশ্যই একটি অসাধারণ পারফরম্যান্স ছিল এবং তিনি ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সকে গর্বিত করেছেন।
ভারতের রিলে রেস দলেরও চমৎকার পারফরম্যান্স
ছেলেদের মিডল রিলে দৌড়ে চিরন্ত পি, সৈয়দ সাবীর, সা কেত মিঞ্জ এবং কাদির খান মিলে রুপোর পদক জিতেছে। এই রিলে দল ১:৫২.১৫ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করেছে এবং এই সময়ের সাথে তারা নতুন ইয়ুথ ন্যাশনাল রেকর্ডও গড়ে তুলেছে। এই রেকর্ড আগে ১:৫২.৯৬ সেকেন্ড ছিল, যা এই দল ভেঙে নতুন কীর্তিমান স্থাপন করেছে।
মেয়েদের রিলে রেসে আরতি, প্রিশা মিশ্র, এডভিনা জেসন এবং তন্নুর দল রেস শেষ করতে পারেনি, তবে তাদের অসাধারণ প্রচেষ্টা দেখিয়েছে যে ভারতের নারী অ্যাথলেটরা ভবিষ্যতে আরও সাফল্য অর্জন করতে পারে। তবে, অঞ্চল সাজেশ পাটিল মেয়েদের হাই জাম্প ইভেন্টে পদক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তার পারফরম্যান্স ভালো ছিল, তবে তিনি ব্রোঞ্জ পদক থেকে সামান্য পিছনে ছিলেন। তবুও তার এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো।
ভারতের মোট পদকের হিসাব
এই এশিয়ান U18 অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত মোট ১১ টি পদক জিতেছে। এই ১১ টি পদকের মধ্যে একটি সোনা, পাঁচটি রুপো এবং পাঁচটি ব্রোঞ্জ পদক অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভারতের দল এই চ্যাম্পিয়নশিপে অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছে এবং অ্যাথলেটিক্সের জগতে তাদের পদচিহ্ন স্থাপন করেছে। বিশেষ করে হিমাংশুর সোনার পদক এবং নিতিন গুপ্ত, তন্নু, নিশ্চয়, আরতি, দেবক ভূষণ প্রমুখ অ্যাথলেটদের অর্জন ভারতীয় অ্যাথলেটিক্সের জন্য ভবিষ্যতের বড় ইঙ্গিত।