আন্দ্রপ্রদেশ সরকার ‘তল্লিকী বন্দনম’ নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করেছে, যার অধীনে ১ম থেকে ১২শ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা বার্ষিক ১৫,০০০ টাকা সাহায্য পাবেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৭ লক্ষেরও বেশি ছাত্রছাত্রী উপকৃত হবে।
আন্দ্রপ্রদেশ: শিক্ষার উন্নয়নে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ আন্দ্রপ্রদেশের নতুন এনডিএ সরকার স্কুল শিক্ষাকে শক্তিশালী করার এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারগুলিকে সাহায্য করার জন্য একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পের উদ্বোধন করেছে। ‘তল্লিকী বন্দনম’ নামে এই প্রকল্পের অধীনে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা প্রতি বছর ১৫,০০০ টাকা আর্থিক সাহায্য পাবেন। এই প্রকল্পটি ১২ জুন ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়েছে। এর সুবিধা সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলে পড়ুয়া লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী পাবে।
প্রকল্পের রূপরেখা এবং অর্থ বিতরণ
‘তল্লিকী বন্দনম’ প্রকল্পের অধীনে ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৩,০০০ টাকা সরাসরি ব্যাংক হস্তান্তর (DBT) এর মাধ্যমে পাঠানো হবে। বাকি ২০০০ টাকা সংশ্লিষ্ট স্কুলের অবকাঠামো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সুযোগ-সুবিধা উন্নয়নে ব্যয় করা হবে। এই অর্থ স্কুলে টয়লেট, পানীয় জল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্য ব্যবহার করা হবে।
৬৭ লক্ষেরও বেশি ছাত্রছাত্রী উপকৃত হবে সরকারি তথ্য অনুসারে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের প্রায় ৬৭.২৭ লক্ষ ছাত্রছাত্রী উপকৃত হবে। এই প্রকল্পটি কেবলমাত্র সরকারি স্কুল নয়, বেসরকারি স্বীকৃত স্কুলে পড়ুয়া যোগ্য ছাত্রছাত্রীদেরও অন্তর্ভুক্ত করবে।
সরকারের উদ্দেশ্য এবং দৃষ্টিভঙ্গি
এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হল শিক্ষাকে সর্বসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং দারিদ্র্যের কারণে স্কুল ত্যাগকারী শিশুদের সংখ্যা কমানো। এছাড়াও, এই প্রকল্প শিক্ষায় সমতা এবং সমावेशীতা বৃদ্ধি করে। এটি শিশুদের শিক্ষায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে এবং অভিভাবকদের আর্থিকভাবে স্বস্তি দেবে।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি এবং ‘সুপার সিক্স’ এজেন্ডা
মুখ্যমন্ত্রী এন. চন্দ্রাবাবু নায়ডু বিধানসভা নির্বাচনের সময় ‘সুপার সিক্স’ প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে এই প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সরকার এটিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছে যে তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে।
বাজেট এবং অর্থায়ন
রাজ্য সরকার এই প্রকল্পের জন্য মোট ৯,৪০৭ কোটি টাকার বাজেট নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ৮,৭৪৫ কোটি টাকা সরাসরি যোগ্য ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার ৫ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করেছে।
কোন ছাত্রছাত্রীরা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে?
- প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য কিছু যোগ্যতা শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
- আবেদনকারীকে আন্দ্রপ্রদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- ছাত্রছাত্রীকে ১ম থেকে ১২শ শ্রেণীতে ভর্তি হতে হবে।
- পরিবারকে দারিদ্র্যসীমার নিচে (BPL) জীবনযাপন করতে হবে।
- নগর এলাকায় মাসিক আয় ১২,০০০ টাকা এবং গ্রামীণ এলাকায় ১০,০০০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।
- পরিবারের কাছে রেশন কার্ড থাকা আবশ্যক।
- উপকৃত হওয়া পরিবারের কাছে তিন একরের কম জলসেচিত জমি, ১০ একরের কম শুষ্ক জমি অথবা মোট ১০ একরের কম কৃষি জমি থাকতে হবে।
- গত এক বছরে পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহার ৩০০ ইউনিটের কম হতে হবে।
কিভাবে আবেদন করবেন?
সরকার শীঘ্রই এই প্রকল্পের জন্য একটি পোর্টাল চালু করবে, যেখানে যোগ্য অভিভাবকরা আবেদন করতে পারবেন। আবেদন প্রক্রিয়ায় আধার কার্ড, রেশন কার্ড, আয়ের সনদ এবং স্কুলের প্রমাণপত্রের মতো নথিপত্রের প্রয়োজন হবে। আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনে হবে, যাতে কাউকে অফিসের চক্কর কাটতে না হয়।
বেসরকারি স্কুলগুলিকেও সুবিধা পাবে
এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি কেবলমাত্র সরকারি স্কুলগুলিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আন্দ্রপ্রদেশের স্বীকৃত বেসরকারি স্কুলে পড়ুয়া যোগ্য ছাত্রছাত্রীরাও এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী হতে পারবে। এটি শিক্ষার মান এবং সমावेशীতা উভয় ক্ষেত্রেই উন্নতি সাধন করবে।
স্কুল উন্নয়নেও অবদান
স্কুলগুলিতে পাঠানো ২০০০ টাকা স্কুলের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা শক্তিশালী করার জন্য ব্যবহার করা হবে। এটি সরকারি স্কুলগুলিতে শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করবে এবং ছাত্রছাত্রীরা আরও ভালো পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারবে।