তিব্বতে চীনের বিশাল বাঁধ: ভারতের জন্য ‘জল বোমা’র আশঙ্কা

🎧 Listen in Audio
0:00

চীন কর্তৃক তিব্বতে ইয়ারলুং ত্সাংপো নদীর উপর নির্মিত হচ্ছে বিশাল বাঁধ নিয়ে ভারতে উদ্বেগের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে। অরুণাচল প্রদেশের বিজেপি সাংসদ তাপির গাও এটিকে ‘ওয়াটার বোম্ব’ (জল বোমা) বলে আখ্যায়িত করে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, যদি চীন এই বাঁধ থেকে পানি ছেড়ে দেয়, তাহলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারত ও বাংলাদেশের মতো নিম্নাঞ্চলীয় দেশগুলি ধ্বংসাত্মক বন্যার মুখোমুখি হতে পারে।

চীন ওয়াটার বোম্ব: অরুণাচল প্রদেশের বিজেপি সাংসদ তাপির গাও চীনের দ্বারা বিশ্বের সর্ববৃহৎ বাঁধ নির্মাণের ঘোষণা প্রসঙ্গে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি এটিকে কেবলমাত্র একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নয়, বরং ‘জল বোমা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন, যা ভবিষ্যতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারত ও বাংলাদেশের মতো নিম্নাঞ্চলে প্রচণ্ড ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করতে পারে।

গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে বক্তৃতা করতে গিয়ে তাপির গাও বলেন, ‘চীন যে বাঁধ তৈরি করছে, তা ৬০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হবে, কিন্তু এটি কেবলমাত্র একটি শক্তি প্রকল্প নয়, এটি একটি কৌশলগত জল অস্ত্রও।’ তিনি ২০০০ সালের জুন মাসের ধ্বংসাত্মক বন্যার উদাহরণ দিয়ে দাবি করেন যে, সেই সময় চীন থেকে পানি ছেড়ে দেওয়ার ফলেই সিয়াং নদীতে বন্যা দেখা দিয়েছিল, যার ফলে অরুণাচল প্রদেশের অনেক সেতু ভেঙে পড়েছিল।

চীনের কৌশল এবং ভারতের চ্যালেঞ্জ

বাঁধটি মেডোগ কাউন্টিতে নির্মিত হচ্ছে, যেখান থেকে ইয়ারলুং ত্সাংপো নদী ভারতে সিয়াং এবং অসমে ব্রহ্মপুত্র নামে প্রবেশ করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্পটি কেবলমাত্র জলবিদ্যুৎ নয়, বরং আঞ্চলিক জল নিয়ন্ত্রণের দিকে চীনের একটি বড় পদক্ষেপ। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী থাইল্যান্ডে বসবাসকারী সুইডিশ সাংবাদিক বার্তিল লিন্টার বলেন, তিব্বতী মালভূমিতে চীনের নিয়ন্ত্রণ কেবলমাত্র স্থলে নয়, এশিয়ার বৃহৎ নদীগুলির উপর আধিপত্য স্থাপনের কৌশলের অংশ।

পারদর্শিতার অভাব এবং বৈজ্ঞানিক উদ্বেগ

আইআইটি গুয়াহাটির অধ্যাপক অনামিকা বরুয়া সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ভারতের কাছে এখনও চীনের প্রস্তাবিত বাঁধের প্রভাবের মূল্যায়ন করার জন্য যথেষ্ট তথ্য নেই এবং বৈজ্ঞানিক সম্পদও নেই। তিনি বলেন, চীন কোন তথ্য ভাগ করছে না। আমরা অনুমানও করতে পারছি না যে যদি এই বাঁধ ভেঙে পড়ে বা পানি ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে এর প্রভাব কী হবে।

ভারতের বিকল্পগুলি কী?

সাংসদ তাপির গাও পরামর্শ দিয়েছেন যে, ভারতকে সিয়াং নদীর উপর নিজেই একটি বাঁধ তৈরি করা উচিত, যাতে জরুরি অবস্থায় পানির চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পাশাপাশি তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করেছেন যে, চীনের সাথে এই বিষয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে গভীর আলোচনা করা উচিত। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরাও দাবি করেছেন যে, ভারতকে চীনের সাথে একটি জল-বণ্টন চুক্তি করার দিকে উদ্যোগী হওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে সংঘাতের আশঙ্কা এড়ানো যায়।

ব্রহ্মপুত্রের জলের লড়াইয়ের ঝুঁকি বেড়েছে

ব্রহ্মপুত্র বোর্ডের চেয়ারম্যান ডঃ রণবীর সিং সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ভারতের জল সমৃদ্ধ এলাকার মধ্যে একটি, কিন্তু চীনের এই প্রকল্পের ফলে তার জল ভারসাম্যেও ঝুঁকি দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, যদি সময়মতো বৈজ্ঞানিক ও কূটনৈতিক সমাধান না বের করা হয়, তাহলে এটি এশিয়ার সবচেয়ে গুরুতর জল সংকটের সূচনা হতে পারে।

Leave a comment