২০২৫ সালের ১১ই জুন ভারত-শ্রীলঙ্কা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ঘটনা ঘটে। শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল বি.কে.জি.এম. লাসান্থা রোদ্রিগো ভারতের তিনটি প্রতিরক্ষা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে দ্বিপাক্ষিক সামরিক সহযোগিতা আরও জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেন।
শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর কমান্ডারের ভারত সফর: দক্ষিণ এশিয়ার পরিবর্তিত কৌশলগত পরিস্থিতি এবং পাকিস্তানের সাথে বর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল বি.কে.জি.এম. লাসান্থা রোদ্রিগো'র ভারত সফর কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। জেনারেল রোদ্রিগো ১১ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ভারতের আনুষ্ঠানিক সফরে ছিলেন এবং এই সময় তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর প্রধানদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। উভয় দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে নতুন দিক দানের জন্য বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সফরের শুরু: শহীদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি
লেফটেন্যান্ট জেনারেল রোদ্রিগো'র সফরের শুরু হয়েছিল জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদ ভারতীয় সৈন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে। এরপর তাকে সাউথ ব্লক লনে আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনারও দেওয়া হয়, যা এই সফরের মর্যাদা প্রদর্শন করে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, এই সফর ভারত এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী এবং গভীর করার প্রতীক।
তিনটি সেনাবাহিনীর প্রধানদের সাথে আলাপ
শ্রীলঙ্কান সেনাপ্রধান প্রথমে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এনএস রাজা সুব্রমণ্যের সাথে দীর্ঘ এবং গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। এই আলোচনায় আঞ্চলিক সুরক্ষা, সন্ত্রাসবাদবিরোধী কৌশল এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এরপর তিনি ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ কে ত্রিপাঠী এবং ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এ পি সিংহের সাথেও সাক্ষাৎ করেন।
এই বৈঠকগুলিতে বিশেষ করে সমুদ্র সুরক্ষা, যৌথ অনুশীলন এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি কর্মসূচীতে জোর দেওয়া হয়েছিল। নৌবাহিনী সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে স্পষ্ট করা হয়েছিল যে উভয় দেশ সমুদ্র থেকে উদ্ভূত সাধারণ বিপদ মোকাবেলায় একত্রে কাজ করবে।
‘অপারেশন সিন্দুর’ সম্পর্কে তথ্য প্রদান
ভারতের পক্ষ থেকে জেনারেল রোদ্রিগোকে ‘অপারেশন সিন্দুর’ সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়েছিল, যা ভারতের আঞ্চলিক সমুদ্র সুরক্ষার কৌশলের সাথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন। এর মাধ্যমে তাকে ভারতের সামগ্রিক সুরক্ষা দৃষ্টিভঙ্গি, হিন্দ মহাসাগর অঞ্চলে কৌশলগত উপস্থিতি এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত করা হয়েছিল।
এই সফর এমন সময়ে হচ্ছে যখন ভারতের পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক ও কৌশলগত উত্তেজনার অবস্থা বিরাজ করছে। পাকিস্তান কর্তৃক সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থন প্রদান, এলওসি-তে অনুপ্রবেশ এবং আঞ্চলিক অস্থিরতার কারণে ভারতকে তার বন্ধু দেশগুলির সাথে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। শ্রীলঙ্কা ভারতের সমুদ্র উপকূলবর্তী এবং ঐতিহ্যগত বন্ধু দেশ। এই পরিস্থিতিতে উভয় দেশের মধ্যে সাধারণ সমুদ্র স্বার্থ, মাদক চোরাচালান, জাল নোটের কারবার এবং চীনের বর্ধমান সামরিক উপস্থিতি ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন।
কৌশলগত অংশীদারিত্বে নতুন গতি
ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সামরিক সহযোগিতা ইতিমধ্যেই স্থির ছিল, কিন্তু এখন তাকে কৌশলগত গভীরতা দেওয়া হচ্ছে। জেনারেল রোদ্রিগো'র এই সফরে যৌথ প্রশিক্ষণ অভিযান, সামরিক আদান-প্রদান কর্মসূচী এবং সরবরাহ শৃঙ্খল সহায়তায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভারত আগেও শ্রীলঙ্কাকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, গাড়ি এবং প্রশিক্ষণ সহায়তা দিয়েছে।
১৪ জুন জেনারেল রোদ্রিগো ভারতীয় সামরিক একাডেমি (আইএমএ), দেহরাডুনে অনুষ্ঠিত পাসিং আউট প্যারেডের রিভিউয়িং অফিসার হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন। এটি ভারতের পক্ষ থেকে শ্রীলঙ্কাকে সম্মান প্রদান এবং সামরিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার ইঙ্গিত।
