ভারত পাকিস্তানের মুরিদ এয়ারবেসকে লক্ষ্য করে আঘাত হানে, প্রতিশোধমূলক আঘাতে এয়ারবেসটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপগ্রহ চিত্রে ৩ মিটার প্রশস্ত গর্ত এবং কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো দেখা গেছে।
মুরিদ এয়ারবেস: সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে ভারত পাকিস্তানের ১১ টি এয়ারবেসে প্রতিশোধমূলক আঘাত হানে। এই আঘাতে পাকিস্তানের সবচেয়ে নিরাপদ এয়ারবেস মুরিদ (Murid Air Base) কেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির প্রমাণ সম্প্রতি গোয়েন্দা গবেষক ডেমিয়ান সাইমন কর্তৃক প্রকাশিত উচ্চ-রেজোলিউশনের উপগ্রহ চিত্র থেকে পাওয়া গেছে। আসুন বিস্তারিত জেনে নেই এই আঘাতে এয়ারবেসটিতে কী ক্ষতি হয়েছে এবং এর সাথে জড়িত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা
গত কয়েক মাস ধরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্তে বর্ধমান সামরিক উত্তেজনা উভয় দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে সতর্ক করে তুলেছে। পূর্বে পাহালগামে সংঘটিত সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ (Pahalgam Terror Attack) উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। এর পর ভারত কর্তৃক অপারেশন সিন্দুর (Operation Sindoor) এর অধীনে পরিচালিত প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের পর পাকিস্তানও ভারতীয় অঞ্চলে আকাশপথে আক্রমণের চেষ্টা করেছিল, যা ব্যর্থ হয়।
এই সময় ভারত পাকিস্তানের ১১ টি এয়ারবেসকে লক্ষ্য করে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এর মধ্যে মুরিদ এয়ারবেসে আঘাত হানা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে কারণ এটি পাকিস্তানের সবচেয়ে নিরাপদ এয়ারবেস হিসেবে বিবেচিত হয়।
মুরিদ এয়ারবেস: পাকিস্তানের প্রধান ও নিরাপদ এয়ারবেস
মুরিদ এয়ারবেস পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের চকওয়াল জেলায় অবস্থিত। জম্মু-কাশ্মীরের LOC থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই এয়ারবেস পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর নিরাপত্তার জন্য দ্বিগুণ বाउন্ডারি, বহু নজরদারি টাওয়ার এবং প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এই এয়ারবেস শুধুমাত্র বিমান চালানোর কেন্দ্র নয়, সৈন্য ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম সঞ্চয়ের জন্যও ব্যবহৃত হয়। নিরাপত্তার দিক থেকে এটি বোমা হামলা ও আক্রমণ সহ্য করতে সক্ষম বলে মনে করা হয়।
উপগ্রহ চিত্রে ক্ষতির উন্মোচন
গোয়েন্দা গবেষক ডেমিয়ান সাইমন ১৬ এপ্রিল এবং ১০ মে'র উচ্চ-রেজোলিউশনের উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে ভারতের আক্রমণে হওয়া ক্ষতি সুন্দরভাবে চিহ্নিত করেছেন। ১৬ এপ্রিলের চিত্রে এয়ারবেসের ভবন সম্পূর্ণ নিরাপদ ও অক্ষত দেখা যায়, অন্যদিকে ১০ মে'র চিত্রে স্পষ্ট দেখা যায় যে ছাদের একটি অংশ ভেঙে ভেতরে পড়ে গেছে এবং বাইরের দেওয়ালগুলিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এয়ারবেসের ভেতরে প্রায় ৩০ মিটার দূরত্বে প্রায় ৩ মিটার প্রশস্ত একটি গর্ত তৈরি হয়েছে, যা এই আঘাতের তীব্রতার ইঙ্গিত দেয়। মানবহীন আকাশযান (ড্রোন) এর হ্যাঙ্গারের কাছেও কাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। এই চিত্রগুলি এই বিষয়টির নিশ্চিত করে যে ভারতীয় আঘাত পাকিস্তানের এই দুর্গের মতো শক্তিশালী এয়ারবেসকেও দুর্বল করেছে।
এই আঘাত কেন বিশেষ?
ডেমিয়ান সাইমনের মতে, এই আঘাত মুরিদ এয়ারবেসের সবচেয়ে নিরাপদ অংশে হয়েছে, যা সাধারণত দ্বিগুণ নিরাপত্তা বाउন্ডারি, নজরদারি টাওয়ার এবং কঠোর নিরাপত্তার কারণে বোমা হামলা ও আক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকে। এর ভেতরে একটি অপারেশন সেল্টারও আছে, যা বিশেষ সরঞ্জাম ও কর্মীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
ভারতের এই আক্রমণের সামরিক
ভারত কর্তৃক পরিচালিত এই পদক্ষেপ সামরিকভাবে একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি শুধুমাত্র পাকিস্তানের সামরিক অবকাঠামোকে দুর্বল করে না, সীমান্তে উত্তেজনা কমাতেও একটি শক্তিশালী বার্তা।
এই আঘাতের পর উভয় দেশের মধ্যে বর্তমানে যুদ্ধবিরতি চলছে, তবে উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান। ভারত এই আঘাতের মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছে যে তার প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ দ্রুত ও কার্যকর হতে পারে।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া ও বর্তমান অবস্থা
পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী এখনও পর্যন্ত এই আঘাতের আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো স্বীকৃতি দেয়নি, তবে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এই আঘাতকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছে।
পাকিস্তানে এই আঘাত নিয়ে উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে এবং নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে ভারতে এই আঘাতকে একটি শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে।