মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল: ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে উত্তেজনা বৃদ্ধি

🎧 Listen in Audio
0:00

বাংলাদেশ মিরসরাইয়ে ভারতের অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রকল্প প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রকল্পটি স্থগিত হয়েছে। এর ফলে দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা বেড়েছে। ভারতও বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে।

বাংলাদেশ: ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক সবসময়ই বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক ছিল, কিন্তু সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু বিষয় বিরোধের সৃষ্টি করেছে। এসব বিষয়ের মধ্যে মিরসরাইয়ে ভারতের অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে বিতর্ক অন্যতম। বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (BIDA) চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর এই প্রকল্প নিয়ে দেওয়া বক্তব্য ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন একটা তিক্ততা তৈরি করছে বলে মনে হচ্ছে।

মিরসরাইয়ে ভারতের অর্থনৈতিক অঞ্চল নয়, বাংলাদেশের দাবি

বাংলাদেশের কর্মকর্তা আশিক চৌধুরী স্পষ্ট করে বলেছেন যে মিরসরাইয়ে ভারতের কোন অর্থনৈতিক অঞ্চল নেই। তাঁর মতে, এই পরিকল্পনা কেবল কাগজে-কলমেই আছে, বাস্তবে এর কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। ২০২০ সালে ভারত মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরীতে ৯০০ একর জমিতে মৌলিক অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১১৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছিল, এই ঘটনার পরই এ বক্তব্য এসেছে।

তবে, এখন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই প্রকল্পের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে। আশিক চৌধুরী বলেছেন যে প্রকল্পের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল ৩৩,০০০ একর জমির উপর, যা পরে ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ একরে নামিয়ে আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন যে তাঁদের এত বড় জমি প্রয়োজন নেই এবং বাকি জমি নিয়ে ধাপে ধাপে সিদ্ধান্ত নেবেন।

মোহাম্মদ ইউনূস সরকার ক্ষমতায় আসার পর উন্নয়ন কাজ বন্ধ

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের আগস্টে মোহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মিরসরাই প্রকল্পে কোনো উন্নয়ন কাজ হয়নি। বাংলাদেশের এই নীতি ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশিক চৌধুরী স্পষ্ট করে বলেছেন যে এই প্রকল্প এখন সম্পূর্ণরূপে স্থগিত এবং এখন এর কোনো কাজ চলছে না।

চট্টগ্রাম বন্দরের কৌশলগত গুরুত্ব ও বাংলাদেশের অবস্থান

চট্টগ্রাম বন্দর সমগ্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। আশিক চৌধুরী বলেছেন যে এই বন্দর কেবল বাংলাদেশের জন্যই নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য, নেপাল ও ভুটানের জন্যও এটি একটি প্রধান সংযোগস্থল। তাই এই বন্দর ও এর আশপাশের এলাকার সঠিক ব্যবহার করা জরুরি।

কিন্তু বাংলাদেশের এই নতুন নীতি ভারতের সাথে সম্পর্কে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ সরকার এখন ভারতের মিরসরাই প্রকল্পের প্রতি মনোভাব বদলে দিয়েছে, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্ভাবনা সীমিত হচ্ছে।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণসমূহ

সম্প্রতি কয়েক মাসে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে বেশ কিছু বিরোধ দেখা দিয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুতে মোহাম্মদ ইউনূস উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য নিয়ে চীনের সমর্থনমূলক মন্তব্য করেছিলেন, যার ফলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। এরপর ভারত বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে।

ভারত বাংলাদেশ থেকে রেডিমেড গার্মেন্টস, কার্বোনেটেড ড্রিংকস, স্ন্যাকস, কাপড় ও সুতির সুতা ইত্যাদি পণ্য ভারতীয় স্থলবন্দরের মাধ্যমে আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ ভারত থেকে সুতার আমদানি স্থলপথে বন্ধ করে দিয়েছে। এই দুটি পদক্ষেপ ব্যবসায়িক সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছে এবং দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

বাংলাদেশ নিজের পায়ে কুঠার মেরেছে

বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্তকে কিছু বিশ্লেষক নিজের পায়ে কুঠার মারার সাথে তুলনা করেছেন। কারণ মিরসরাই প্রকল্প ভারত ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং এটি বাংলাদেশের শিল্প উন্নয়নে সাহায্য করত। পাশাপাশি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ও প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে ব্যবসায়ও বৃদ্ধি পেত।

Leave a comment