বাংলাদেশের সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদাকে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জনতা তাকে জুতা-পেটা ও ডিম ছোড়ে আক্রমণ করেছে। মামলাটি বিএনপি দায়ের করেছিল।
বাংলাদেশ: সাবেক নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার গ্রেপ্তার বাংলাদেশের রাজনীতিতে তীব্র আন্দোলন সৃষ্টি করেছে। তার উপর নির্বাচনে অনিয়মের গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে, যার ফলে তাকে জনতার ক্ষোভের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এই ঘটনা শুধুমাত্র রাজনৈতিক মহলেই নয়, সাধারণ জনগণের মাঝেও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
গ্রেপ্তারের পূর্বে জনসম্মুখে পিটুনি
ঢাকায় কেএম নুরুল হুদাকে জনতা জনসম্মুখে ঘিরে ধরে জুতা-পেটা করে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কিভাবে মানুষ তাকে জুতার মালা পরিয়েছে এবং ডিম মেরেছে। পরিস্থিতি এতটা জটিল হয়ে পড়েছিল যে, ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হওয়ার পরেও জনতার ক্ষোভ কমেনি। এই আক্রমণ সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে সরকারকেও দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে নিশ্চিতকরণ
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মোহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, একটি মামলায় কেএম নুরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দল বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) দায়ের করেছে। এই মামলায় মোট ১৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও রয়েছে।
নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, হাসিনা সরকারের আমলে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচন জনগণের জনাঞ্চল ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই সমস্ত নির্বাচনে হাসিনার দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। বিএনপির অভিযোগ, এই নির্বাচনে নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা ছিল না এবং কেএম নুরুল হুদা নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবে সরকারের পক্ষ নিয়েছিলেন।
প্রথমবারের মতো নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনের অনুযায়ী, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি প্রথমবারের মতো যখন কোন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও এই ঘটনাকে অভূতপূর্ব বলে উল্লেখ করেছেন। এটি একটি ইঙ্গিত যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জবাবদিহিতার দাবি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উত্তরা উত্তর পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, তিনি খবর পেয়েছিলেন যে, হুদাকে জনতা ঘিরে ধরেছে। তৎক্ষণাৎ একটি দল ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় এবং তাকে আটক করা হয়। পরে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং তদন্ত শুরু করা হয়।
সরকারের প্রতিক্রিয়া এবং পরিস্থিতির সংবেদনশীলতা
মুখ্য উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই ঘটনার পর রাতের অর্ধেকের দিকে এক বিবৃতি জারি করে। তারা জনগণকে সংযমী থাকার এবং আইনগত প্রক্রিয়া মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা এ কথাও বলেছেন যে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।