জাপানের নৌবাহিনীতে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেলগানের সফল পরীক্ষা

🎧 Listen in Audio
0:00

সম্প্রতি জাপান তাদের নৌবাহিনীর পরীক্ষামূলক জাহাজ JS Asuka-তে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেলগান (Electromagnetic Railgun) এর সফল সমুদ্র পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এই পরীক্ষাটি কেবলমাত্র প্রযুক্তিগত দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কৌশলগত পরিস্থিতিকেও প্রভাবিত করতে পারে।

জাপানের রেলগান: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো জাপান তাদের প্রতিরক্ষা নীতিতে একটি বৃহৎ ও আক্রমণাত্মক প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি জাপান তাদের নৌবাহিনীর পরীক্ষামূলক জাহাজ JS Asuka-তে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেলগান (Electromagnetic Railgun) এর সফল সমুদ্র পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এই পরীক্ষাটি কেবলমাত্র প্রযুক্তিগত সাফল্য নয়, এটি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কৌশলগত ভারসাম্যকেও প্রভাবিত করতে পারে।

রেলগান একটি উন্নত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক অস্ত্র ব্যবস্থা, যা প্রচলিত কামানের বিপরীতে বারুদ বা বিস্ফোরক ব্যবহার করে না। এর পরিবর্তে এটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শক্তির মাধ্যমে প্রজেক্টাইলকে ২,৫০০ মিটার/সেকেন্ড (প্রায় ৫,৬০০ মাইল/ঘন্টা) গতিতে ছোঁড়ে। এই গতি শব্দের গতির চেয়ে ৬.৫ গুণ বেশি।

প্রজেক্টাইলের ওজন প্রায় ৩২০ গ্রাম এবং এটি এত তীব্র গতিতে ছোঁড়া হয় যে হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র, দ্রুতগতির ড্রোন এবং জেট বিমানকেও নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তু করা সম্ভব। রেলগানের মোট দৈর্ঘ্য ২০ ফুট এবং ওজন প্রায় ৮ টন।

কী রেলগান?

রেলগান একটি অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থা যা প্রচলিত কামানের মতো বিস্ফোরক ব্যবহার করে না, বরং ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বলের মাধ্যমে প্রজেক্টাইলকে অত্যন্ত উচ্চ গতিতে ছোঁড়ে। এই ব্যবস্থায় ৪০ মিমি স্টিল প্রজেক্টাইল প্রায় ২,৫০০ মিটার/সেকেন্ড (≈ ৫,৬০০ মাইল/ঘন্টা) গতিতে ছোঁড়া হয়, যা শব্দের গতির চেয়ে ৬.৫ গুণ বেশি। এর দৈর্ঘ্য ২০ ফুট এবং ওজন প্রায় ৮ টন।

JS Asuka-তে পরীক্ষা

JS Asuka, জাপান মেরিটাইম সেল্ফ-ডিফেন্স ফোর্স (JMSDF) এর একটি পরীক্ষামূলক জাহাজ, যা বিশেষভাবে নতুন ব্যবস্থা এবং ক্ষমতার পরীক্ষার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এই জাহাজে রেলগানের পরীক্ষা অক্টোবর ২০২৩ সালে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে প্রজেক্টাইলকে বিভিন্ন কোণ থেকে সমুদ্রে ছোঁড়া হয়েছে। এই পরীক্ষাটি বিশ্বে প্রথমবারের মতো কোনও দেশ কর্তৃক সমুদ্রগামী জাহাজ থেকে রেলগান পরীক্ষা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে।

রেলগানের উচ্চ গতি এবং নির্ভুলতা এটিকে হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং দ্রুতগতির যুদ্ধবিমান লক্ষ্যবস্তু করতে সক্ষম করে। এছাড়াও, এই ব্যবস্থা বিস্ফোরক প্রোপেল্যান্টের প্রয়োজনীয়তা দূর করে, যার ফলে যুদ্ধজাহাজের সুরক্ষা বৃদ্ধি পায় এবং পরিচালন খরচ কমে। জাপানের এই প্রযুক্তি চীন এবং উত্তর কোরিয়ার হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতার জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

বিশ্বব্যাপী দৃষ্টিকোণ

আমেরিকাও রেলগান প্রকল্পে কাজ শুরু করেছিল, কিন্তু ২০২১ সালে উচ্চ ব্যয় এবং সীমিত আগ্রহের কারণে এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। চীনও এই প্রযুক্তিতে কাজ করছে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাদের সাফল্য হয়নি। জাপানের এই সাফল্য তাদেরকে বিশ্বব্যাপী সামরিক প্রযুক্তির প্রতিযোগিতায় একটি নির্ণায়ক লিড দিতে পারে।

জাপানের পরিকল্পনা হল ভবিষ্যতে তাদের ১৩DDX ধ্বংসকারী জাহাজে এই রেলগান প্রযুক্তি স্থাপন করা। এছাড়াও, জাপান ফ্রান্স এবং জার্মানির সাথে রেলগান প্রযুক্তিতে সহযোগিতা করার চুক্তি করেছে, যা এই উন্নত ক্ষমতার দ্রুত স্থাপন নিশ্চিত করবে।

Leave a comment