ইসরায়েল ইরানের প্রতিরক্ষা ও পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। জবাবে ইরান তেল আবিবকে আক্রমণ করেছে। ৭৮ জন নিহত এবং ৩২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সর্বশেষ খবর: ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নতুন মোড় নিয়েছে। ইসরায়েল শুক্রবার ইরানের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ (Operation Rising Lion) শুরু করেছে, যার অধীনে তেহরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর এবং পারমাণবিক কর্মসূচির সাথে সম্পর্কিত স্থানগুলিতে একের পর এক কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) দাবি করেছে যে এই হামলার উদ্দেশ্য ইরানের বর্ধিত পারমাণবিক হুমকি দূর করা।
ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পে সরাসরি আঘাত
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মতে, এই অভিযানের সময় তারা ইরানের SPND প্রকল্প, অর্থাৎ সেই বিভাগকেও লক্ষ্য করেছে যা দেশের পারমাণবিক বোমা সম্পর্কিত তথ্য গোপন করার এবং তা উন্নত করার কাজে নিযুক্ত। এছাড়াও আরও অনেক বৈজ্ঞানিক ও সামরিক প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইরানের প্রতিক্রিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
এই হামলার অবিলম্বে পর ইরানও প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। ইরানের সেনাবাহিনী ইসরায়েলের দুটি প্রধান শহর – তেল আবিব ও জেরুজালেম – কে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ডের মতে, তারা ইসরায়েলের শক্তি অবকাঠামো (Energy Infrastructure) এবং যুদ্ধবিমানকে জ্বালানী সরবরাহকারী ইউনিটগুলিকে লক্ষ্য করেছে।
ইসরায়েলের শহরগুলিতে নেমে এসেছে নীরবতা
ইরানের এই প্রতিশোধমূলক হামলার পর ইসরায়েলের অনেক এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে। বিশেষ করে তেল আবিব ও জেরুজালেমের মতো বড় শহরগুলিতে সাধারণ জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। নিয়মিত এয়ার সাইরেন বাজছে এবং মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে।
তেহরানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, তেল উৎপাদন ব্যাহত
ইরানের দাবি, ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাজধানী তেহরানের শাহারান তেল ডিপো গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশের একটি তেল পরিশোধনাগারকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, যার ফলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব দক্ষিণ পারস অঞ্চলের তেল উৎপাদনে পড়েছে, যা অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এখন পর্যন্ত ৭৮ জনের মৃত্যু, ৩২০ জনেরও বেশি আহত
জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন যে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ৩২০ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ইরানের অনেক উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, পারমাণবিক বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদ রয়েছেন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবাণী
এই সম্পূর্ণ অভিযান নিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু বলেছেন যে ইরান ধীরে ধীরে ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। এমতাবস্থায় আর চুপ করে থাকা সম্ভব ছিল না। তিনি বলেছেন, “অপারেশন রাইজিং লায়ন ততক্ষণ চলতে থাকবে যতক্ষণ না এই হুমকি সম্পূর্ণভাবে দূর হয়।” পাশাপাশি নেতানিয়াহু সতর্ক করে দিয়েছেন যে আগামী দিনগুলিতে ইরানকে আরও কঠোর ফলাফল ভোগ করতে হবে।
"যা ঘটেছে, তা শুধুমাত্র শুরু" – নেতানিয়াহু
বেনজামিন নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে বলেছেন যে এখন পর্যন্ত যা ঘটেছে তা শুধুমাত্র শুরু। তিনি বলেছেন, “আমরা আয়াতুল্লাহ শাসনের প্রতিটি স্থানকে লক্ষ্যবস্তু করব যা ইসরায়েলের জন্য হুমকি হতে পারে। আগামী সময়ে ইরানকে এমন সব কিছু ভোগ করতে হবে যার কল্পনাও তারা করতে পারেনি।”
আমেরিকার ভূমিকা ও ট্রাম্পের প্রস্তাব
এই সংকটের মধ্যে আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে পারমাণবিক চুক্তিতে ফিরে আসার পরামর্শ দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন যে পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আগে ইরানকে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তি (Nuclear Deal) করতে হবে যাতে অঞ্চলে স্থায়িত্ব ফিরে আসে।
