চীন বাংলাদেশের লালমনিহাট এয়ারবেসের প্রতি নজর রেখেছে, যা ভারতের সংবেদনশীল চিকেন নেকের কাছে অবস্থিত। এতে ভারতের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। ভারতকে কূটনৈতিক ও সামরিক পর্যায়ে সতর্ক থাকতে হবে।
ভারত বনাম চীন: চীন আবারও দক্ষিণ এশিয়ায় তার কূটকৌশল বৃদ্ধি করছে। বিশেষ করে ভারতের অত্যন্ত সংবেদনশীল এলাকা ‘চিকেন নেক’এর কাছে অবস্থিত বাংলাদেশের লালমনিহাট এয়ারবেসের প্রতি তার নজর রয়েছে। এই এয়ারবেসটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্মিত এবং সিলিগুড়ি করিডোরের কাছে অবস্থিত। চিকেন নেক হলো ভারতকে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সাথে সংযুক্ত করার মাত্র ২০ কিলোমিটার চওড়া একটি পথ, যা নিরাপত্তার দিক থেকে ‘ভারতের প্রাণ’ বলে বিবেচিত।
চীনের এই কার্যকলাপে ভারতের উদ্বেগ বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক, কারণ চীনের প্রভাব এখানে বৃদ্ধি পেলে এটি ভারতের জন্য কৌশলগতভাবে বড় ঝুঁকি হয়ে উঠতে পারে।
লালমনিহাট এয়ারবেস কেন বিশেষ?
লালমনিহাট এয়ারবেসের নিজস্ব একটি বিশেষ পরিচয় রয়েছে। এই এয়ারবেসটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্মিত হয়েছিল এবং বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। ২০১৮ সালে চীন এই এয়ারবেস নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল এবং ভারতে এ খবরে হইচই পড়ে গিয়েছিল। সে সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের প্রস্তাবের স্পষ্টভাবে বিরোধিতা করেছিলেন।
এই এয়ারবেসের অবস্থান সিলিগুড়ি করিডোরের খুব কাছে। সিলিগুড়ি করিডোর বা চিকেন নেক হলো ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সাথে সংযুক্ত করার একটি সংকীর্ণ ভূমি, যা মাত্র ২০ কিলোমিটার চওড়া। এই পথে কোনও ধরণের ঝুঁকি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হতে পারে।
চীনের কৌশলগত উদ্দেশ্য এবং ভারতের উদ্বেগ
চীনের উদ্দেশ্য হতে পারে বাংলাদেশের মাধ্যমে এই এয়ারবেস ব্যবহার করে ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ফাঁকি দেওয়া। চীন ক্রমাগত বাংলাদেশের সাথে তার সম্পর্ক মজবুত করছে, যা ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
যদিও ২০১৯ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে একটি এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তবে চীনের ঋণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। সে সময় করোনা মহামারীর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ ধীরগতি সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু এখন চীন আবার বাংলাদেশের সাথে তার সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা ত্বরান্বিত করেছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং চীনের বর্ধমান প্রভাব
সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, যার প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুস। ইউনুস পদ গ্রহণের পরপরই চীন সফর করেন এবং উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক মজবুত করার ব্যাপারে আলোচনা করেন। এই পদক্ষেপে ভারতে প্রশ্ন উঠেছে যে বাংলাদেশ কি চীনের প্রভাবের মধ্যে পড়ছে।
ভারতের জন্য এটি বড় ঝুঁকি হতে পারে কারণ বাংলাদেশের সাথে বর্ধমান ঘনিষ্ঠতা চীনকে ভারতের কৌশলগত স্বার্থ দখল করতে পারে। বিশেষ করে সিলিগুড়ি করিডোরের মতো সংবেদনশীল এলাকায় চীনের হস্তক্ষেপ ভারতের নিরাপত্তাকে দুর্বল করে তুলতে পারে।
ভারতের জন্য কী কী চ্যালেঞ্জ?
চিকেন নেকের ভূগোল ভারতের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এখান থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের বাকি দেশের সাথে যোগাযোগ রয়েছে। যদি চীন বাংলাদেশের লালমনিহাট এয়ারবেস ব্যবহার করে, তাহলে ভারত সামরিক ও অর্থনৈতিক উভয় পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তদুপরি, চীনের বর্ধমান উপস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের আধিপত্যকেও চ্যালেঞ্জ করছে। ভারতকে তার কূটনীতি ও সামরিক কৌশল উভয়কেই শক্তিশালী করতে হবে যাতে চীনের বর্ধমান কার্যকলাপের মোকাবেলা করা যায়।