যমুনা নদী পরিষ্কারে দিল্লি সরকারের ব্যাপক পদক্ষেপ

🎧 Listen in Audio
0:00

দিল্লি সরকার যমুনা নদীর পরিষ্কারের জন্য বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২২টি প্রধান নালায় ড্রোন সার্ভে করা হবে। পাশাপাশি, ৩৬০টি নালায় যাচাই এবং ৬৭টি স্থানে জলের গুণমান পরীক্ষা করা হবে।

দিল্লি সংবাদ: দিল্লি সরকার যমুনা নদীর পরিষ্কারের জন্য মিশন মোডে কাজ শুরু করেছে। জাতীয় স্বচ্ছ গঙ্গা মিশন এবং দিল্লি জল বোর্ডের সহযোগিতায় ২২টি বড় নালায় ড্রোন সার্ভে করার পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি, মোট ৩৬০টি নালায় পুনরায় যাচাই, ৬৭টি স্থানে দূষণ পরীক্ষা এবং জল প্রবাহ পরিমাপের প্রক্রিয়াও শুরু করা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হল যমুনাকে পুনরায় প্রাণবন্ত করা।

যমুনা পরিষ্কারের জন্য দিল্লি সরকারের বড় মিশন

জাতীয় রাজধানী দিল্লির জীবনরেখা বলা যমুনা নদী কয়েক দশক ধরে দূষণের কবলে আছে। এখন দিল্লি সরকার এটিকে পুনরায় পরিষ্কার এবং প্রবাহমান করার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে। এই দিকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে সরকার যমুনায় মিশে যাওয়া ২২টি বড় নালায় ড্রোন সার্ভে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর সাথে সাথে মোট ৩৬০টি ছোট-বড় নালায় পুনরায় যাচাই (verification)ও করা হবে।

এই কাজটি জাতীয় স্বচ্ছ গঙ্গা মিশন (NMCG), দিল্লি জল বোর্ড (DJB) এবং কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB)-এর সহযোগিতায় করা হবে। এর মাধ্যমে সরকার বুঝতে পারবে যে যমুনায় কতটা এবং কোথা থেকে দূষিত জল প্রবাহিত হচ্ছে।

নজফগড় এবং শাহদরা ড্রেনের বিশেষ ড্রোন সার্ভে

এই পরিকল্পনার অধীনে প্রথমে দিল্লির দুটি বৃহত্তম ড্রেন—নজফগড় এবং শাহদরা—এর ড্রোন সার্ভে করা হবে। এই সার্ভে জাতীয় স্বচ্ছ গঙ্গা মিশন আগস্ট ২০২৫-এর মধ্যে সম্পন্ন করবে। এই দুটি নালাই যমুনায় সর্বাধিক পরিমাণে বর্জ্য এবং নোংরা পানি ছেড়ে দেয়। এদের গঠন, জল প্রবাহ এবং দূষণের মাত্রা পুরোপুরি পরিমাপ করা হবে।

বাকি ২০টি বড় নালায় সার্ভে করবে দিল্লি জল বোর্ড

যেখানে দুটি ড্রেনের সার্ভে কেন্দ্রীয় সংস্থা করবে, সেখানে বাকি ২০টি বড় নালায় সার্ভে দিল্লি জল বোর্ডের দায়িত্বে থাকবে। এই সার্ভে ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে করা হবে যাতে প্রতিটি নালায় গঠন, তার ইনলেট এবং আউটলেট স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। এর পরেই যমুনায় নোংরা জল প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা তৈরি করা সম্ভব হবে।

৩৬০টি নালা এবং উপ-নালার পুনরায় যাচাই

দিল্লিতে মোট ৩৬০টি ছোট-বড় নালা আছে যা কোনো না কোনোভাবে যমুনায় মিশে যায়। এখন এগুলোর সবগুলির পুনরায় যাচাই করা হবে যাতে নিশ্চিত করা যায় কোন নালা থেকে কতটা দূষিত জল যমুনায় যাচ্ছে। এই কাজটি কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (CPCB) করবে।

এতটুকুই নয়, এই নালগুলিতে মিশে যাওয়া উপ-নালার (sub-drains) সংখ্যা, অবস্থান এবং গঠনও খুঁজে বের করা হবে। এতে একটি ব্যাপক দূষণ মানচিত্র তৈরি করা যাবে।

৬৭টি প্রধান স্থানে দূষণ পরীক্ষা হবে

যমুনায় দূষণ পর্যবেক্ষণের জন্য ৬৭টি প্রধান স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এই স্থানগুলিতে নিয়মিত জলের নমুনা নিয়ে ল্যাবে পরীক্ষা করা হবে। এই কাজটি জুলাই ২০২৫-এর মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

এই পরীক্ষার প্রক্রিয়া বছরে দুইবার হবে, এবং এর জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে তৈরি করা হবে। এই স্থানগুলো নির্বাচন করা হয়েছে কারণ এখানে দূষণের মাত্রা ক্রমাগত বেশি পাওয়া গেছে।

জল প্রবাহ পরিমাপের দায়িত্ব WAPCOS-কে দেওয়া হয়েছে

নাল এবং উপ-নালিতে জল প্রবাহ পরিমাপের কাজ আন্তর্জাতিক পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান WAPCOS-কে দেওয়া হয়েছে। এই কাজ জুলাই ২০২৫-এর মধ্যে সম্পন্ন হবে। এর মাধ্যমে জানা যাবে কোন নালা থেকে কত পানি এবং কী ধরণের বর্জ্য যমুনায় পড়ছে।

৬৭টি স্থানে দূষণ পরিমাপ যন্ত্র বসানো হবে

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড ৪৬টি স্থান এবং দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটি ২১টি স্থান চিহ্নিত করেছে যেখানে দূষণ পরিমাপ যন্ত্র (Monitoring Devices) বসানো হবে। এই যন্ত্র থেকে রিয়েল টাইম ডেটা পাওয়া যাবে, যার ফলে দূষণের মাত্রায় কোনও পরিবর্তন দ্রুত বোঝা যাবে।

কেন্দ্রীয় গৃহ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত

এই সম্পূর্ণ মিশনের রূপরেখা কেন্দ্রীয় গৃহ মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে নির্ধারিত হয়েছিল। বৈঠকে যমুনাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় স্থাপন এবং কাজগুলি মিশন মোডে করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। দিল্লি সরকার এই সিদ্ধান্তগুলি দ্রুত বাস্তবায়ন শুরু করেছে।

Leave a comment