ওয়াক্ফ সংশোধনী আইনকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টে তিন দিনব্যাপী বিতর্কের পর আদালত অন্তর্বর্তীীকালীন আদেশ স্থগিত রেখেছে। কেন্দ্র আইনটির সমর্থনে যুক্তি দিয়েছে, আর আবেদনকারীরা তাকে অসংবিধানবান বলে অভিহিত করেছে।
নয়া দিল্লি – দেশে আবারও ওয়াক্ফ আইনকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তীব্র হয়ে উঠেছে। ওয়াক্ফ সংশোধনী আইন (Waqf Amendment Act)-কে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা আবেদনগুলির ওপর সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শেষ হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে অন্তর্বর্তীীকালীন রায় স্থগিত রেখেছে। এখন সমগ্র দেশের দৃষ্টি আদালতের সিদ্ধান্তের দিকে।
তিন দিনব্যাপী তীব্র বিতর্ক
এই গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি প্রধান বিচারপতি (CJI) বি আর গাভাই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মশীহের বেঞ্চ করেছেন। তিন দিনব্যাপী এই শুনানিতে আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কপিল সিব্বল, রাজীব ধবন এবং অভিষেক মনু সিংভি তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেছেন, অন্যদিকে কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা যুক্তি উপস্থাপন করেছেন।
কেন্দ্র সরকার আদালতে ওয়াক্ফ সংশোধনী আইনের দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে বলেছে যে, এটি সংবিধানসম্মত এবং কোনও অবৈধতা নেই। এর বিপরীতে আবেদনকারীরা আইনটিকে অসংবিধানবান বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে, এটি সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলের মাধ্যম হতে পারে।
কেন্দ্রের অবস্থান – ওয়াক্ফের ধারণা ধর্মনিরপেক্ষ
সরকারের পক্ষে উপস্থিত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতে বলেছেন যে, ওয়াক্ফের ধারণা ধর্মনিরপেক্ষ (Secular Concept) ধারণার উপর ভিত্তি করে এবং এর মৌলিক কাঠামোকে আদালতের অন্তর্বর্তীীকালীন আদেশ দিয়ে থামানো যাবে না। তিনি আরও বলেছেন যে, সংসদ কর্তৃক গৃহীত যেকোনও আইন, যতক্ষণ না তাকে অসংবিধানবান বলে ঘোষণা করা হয়, ততক্ষণ সংবিধানসম্মততার অনুমান (Presumption of Constitutionality) থাকে। তাই আদালতের উচিত তাতে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা থেকে বিরত থাকা।
আবেদনকারীদের আপত্তি – অ-ন্যায়িক পদ্ধতিতে দখল সম্ভব
ওয়াক্ফ সংশোধনী আইনকে চ্যালেঞ্জ করে আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কপিল সিব্বল আইনটির প্রতি গুরুতর আপত্তি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, এই আইন অ-ন্যায়িক পদ্ধতি (Non-Judicial Process)র মাধ্যমে সম্পত্তির উপর ওয়াক্ফ দাবি করার পথ সুগম করে।
সিব্বল যুক্তি দিয়েছেন যে, যদি এই আইন এইভাবে কার্যকর হয়, তাহলে সরকারকে এমন ক্ষমতা দেওয়া হবে যার দ্বারা যেকোনও সম্পত্তিকে ওয়াক্ফ ঘোষণা করা যাবে এবং আসল মালিককে ন্যায়িক প্রক্রিয়া ছাড়াই তার জমি থেকে বহিষ্কার করা যাবে।
তিনটি বিষয়ে অন্তর্বর্তীীকালীন আদেশের দাবি
আবেদনকারীরা এই মামলার বর্তমান পর্যায়ে তিনটি প্রধান বিষয়ের উপর অন্তর্বর্তীীকালীন সাহায্য (interim relief) অর্থাৎ অন্তর্বর্তীীকালীন আদেশের দাবি করেছেন:
প্রথম – আদালতের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে যে, তারা ওয়াক্ফ, ব্যবহারকারী কর্তৃক ওয়াক্ফ, অথবা দলিলের ভিত্তিতে ঘোষিত সম্পত্তিগুলি অ-অনুমোদিত (De-notify) করার ক্ষমতা স্থগিত রাখুক।
দ্বিতীয় – রাজ্য ওয়াক্ফ বোর্ড এবং Central Waqf Council-এর গঠন নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে, যাতে দাবি করা হয়েছে যে, এই প্রতিষ্ঠানে শুধুমাত্র মুসলমান নয়, অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনকেও অন্তর্ভুক্ত করা হোক, অথবা পদাধিকারী সদস্যদের সংখ্যা সীমাবদ্ধ করা হোক।
তৃতীয় – সেই বিতর্কিত ধারাটির বিরুদ্ধেও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, যার মতে, যদি জেলা কালেক্টর পরীক্ষা করে দেখে যে, জমি সরকারী কিনা, তাহলে তাকে ওয়াক্ফ সম্পত্তি বলে গণ্য করা হবে না। আবেদনকারীরা এটিকে সম্পত্তি অধিকারের বিরুদ্ধে বলে উল্লেখ করেছেন।
১,৩৩২ পৃষ্ঠার জবাব দাখিল
কেন্দ্র সরকার আদালতে ১,৩৩২ পৃষ্ঠার হলফনামা দাখিল করে তাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। এতে আইনের সংবিধানসম্মততা এবং প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। সরকার স্পষ্ট করে বলেছে যে, এই আইন জনস্বার্থে এবং এটিকে থামিয়ে রাখা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সামাজিক দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করবে।