উত্তরপ্রদেশে ২০২৬-২৭ সালে জাতিগত জনগণনা, ৪.৫ লক্ষ কর্মী মোতায়েন। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, উপজাতির সংখ্যা গণনায় চ্যালেঞ্জ। দুই ধাপে ঘর ও ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
উত্তরপ্রদেশে জাতিগত জনগণনা: দেশে আবারও জনগণনার প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে, এবং এবার তাতে জাতি ও উপজাতির বিস্তারিত তথ্যও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। উত্তরপ্রদেশে (উ.প্র.) এই বিশাল কাজের জন্য ৪.৫০ লক্ষের বেশি কর্মীকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু, এবারের জনগণনায় কিছু নতুন চ্যালেঞ্জও দেখা দিচ্ছে, বিশেষ করে উপজাতির সংখ্যা সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে। আসুন, এই প্রক্রিয়াটি সহজ ভাষায় বুঝে নেওয়া যাক এবং জেনে নেওয়া যাক এটি উ.প্র.-র জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ।
জাতিগত জনগণনা কী এবং কেন হচ্ছে?
জনগণনা প্রতি দশ বছর অন্তর হয়, যাতে দেশের জনসংখ্যা, তাদের জীবনযাত্রা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হয়। শেষবার এটি ২০১১ সালে হয়েছিল, এবং ২০২১ সালে হওয়া জনগণনা করোনা মহামারীর কারণে স্থগিত করা হয়েছিল। এখন কেন্দ্রীয় সরকার ২০২৬-২৭ সালে এটি দুটি ধাপে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এবারের বিশেষ ব্যাপার হলো, জনগণনায় প্রথমবারের মতো জাতি এবং তাদের উপজাতির তথ্যও নেওয়া হবে। উ.প্র. -র মতো বৃহৎ রাজ্যে এই কাজ সহজ হবে না, কারণ এখানে অনেক জাতি এবং উপজাতি আছে, যাদের সঠিক বিবরণ সংগ্রহ করা একটি চ্যালেঞ্জ। এই প্রক্রিয়া থেকে সরকারকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নীতি তৈরিতে সাহায্য পাবে।
দুই ধাপে হবে জনগণনা
জনগণনাকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ঘরের সংখ্যা গণনা করা হবে এবং দ্বিতীয় ধাপে ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। উ.প্র. সহ সমতল ভূমির রাজ্যগুলিতে প্রথম ধাপ মে-জুন ২০২৬ সালে শুরু হবে। এতে প্রতিটি ঘরের অবস্থা, বিদ্যুৎ, পানি, শৌচালয়ের মতো মৌলিক সুযোগ-সুবিধার বিবরণ নেওয়া হবে। এই কাজ প্রায় ৩০ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত চলবে।
দ্বিতীয় ধাপ জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী ২০২৭ সালে হবে, যেখানে প্রতিটি ব্যক্তির বয়স, পেশা, কর্মসংস্থান এবং জাতির তথ্য লিপিবদ্ধ করা হবে। বিশেষ ব্যাপার হলো, এবার তথ্য সরাসরি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে প্রবেশ করা হবে। এতে কাগজপত্রের কাজ কমবে এবং তথ্যের নির্ভুলতা বৃদ্ধি পাবে।
উ.প্র.তে কত বড় এই কাজ?
উ.প্র. দেশের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য, যেখানে ১.০৪ লক্ষ গ্রাম এবং ৭৮৩টি নগরপালিকা রয়েছে। এই সব জায়গায় জনগণনার কাজ হবে। এর জন্য ৪.৫০ লক্ষের বেশি কর্মী নিয়োগ করা হবে, যার মধ্যে সরকারি কর্মচারী, স্থানীয় निकायের লোক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা রয়েছে। প্রতিটি গ্রাম এবং নগরপালিকাকে একটি ‘চার্জ’ হিসেবে ধরা হবে এবং সেখানে একজন চার্জ অফিসারের তত্ত্বাবধানে কাজ হবে।
কিছু গ্রাম, যাদের জনসংখ্যা ৫,০০০ এর বেশি এবং যেখানে ৭৫% মানুষ কৃষিকাজ ছাড়া অন্যান্য কাজ করে, তাদের ‘জনগণনা নগর’ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হবে। এতে শহুরে ও গ্রামীণ এলাকার সঠিক সনাক্তকরণ সম্ভব হবে।
উপজাতির সংখ্যা গণনায় কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে?
এবারের জনগণনায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো উপজাতির তথ্য সংগ্রহ করা। এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র অনুসূচিত জাতি (SC) এবং অনুসূচিত জনজাতি (ST) -এর তথ্য নেওয়া হতো। কিন্তু এখন সাধারণ বর্গ, OBC এবং অন্যান্য জাতির উপজাতির তথ্যও নেওয়া হবে। উ.প্র.-তে অনেক সম্প্রদায় তাদের নামের আগে বিভিন্ন উপাধি বা উপনাম ব্যবহার করে, যার কোনও সরকারি রেকর্ড নেই।
উদাহরণস্বরূপ, সাধারণ বর্গে অনেক উপজাতি আছে যাদের কোনও স্পষ্ট দলিল নেই। মানুষ কখনও কখনও তাদের নামের আগে উপাধি পরিবর্তন করে, যার ফলে সঠিক তথ্য লিপিবদ্ধ করা কঠিন হতে পারে। সরকারকে এই তথ্য সঠিকভাবে সংগ্রহের জন্য বিশেষ কৌশল তৈরি করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপ কীভাবে কাজ পরিবর্তন করবে?
এবারের জনগণনায় প্রযুক্তির বড় ভূমিকা থাকবে। প্রথমবারের মতো তথ্য সরাসরি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে প্রবেশ করা হবে। এতে কাগজপত্রের প্রক্রিয়ায় সময় সাশ্রয় হবে এবং ভুলের সম্ভাবনাও কমে যাবে। কর্মীদের পূর্বে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে যাতে তারা এই অ্যাপ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে।
এছাড়াও, গ্রাম এবং শহরের মানচিত্র তৈরি করা হবে যাতে প্রতিটি এলাকার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়। এই প্রযুক্তি কেবল প্রক্রিয়াটিকে দ্রুত করবে না, তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতাও বাড়াবে।
কখন এবং কীভাবে কাজ শুরু হবে?
পাহাড়ি রাজ্যগুলিতে জনগণনা ১ অক্টোবর ২০২৬ থেকে শুরু হবে, অন্যদিকে উ.প্র.-র মতো সমতল ভূমির রাজ্যগুলিতে এটি ১ মার্চ ২০২৭ থেকে শুরু হবে। কিন্তু প্রস্তুতি ২০২৬ সালের শুরু থেকেই শুরু হয়ে যাবে। প্রথমে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, তারপর গ্রাম ও শহরের মানচিত্র তৈরি করা হবে। এরপর মাঠে গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হবে। সরকার এটাও নিশ্চিত করেছে যে, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৬ পর্যন্ত কোন নতুন निकाय বা তহশিল গঠন করা হবে না, যাতে জনগণনার প্রক্রিয়ায় কোনও বাধা না আসে।