উত্তরপ্রদেশের ক্যাবিনেট রাজ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। হালদিराम উদ্যোগসহ মোট ১০টি বিনিয়োগ প্রস্তাবকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যা রাজ্যের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আরও শক্তিশালী করবে।
UP ক্যাবিনেট বৈঠক: উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার তাদের সাম্প্রতিক ক্যাবিনেট বৈঠকে রাজ্যের উন্নয়ন ও কল্যাণের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই বৈঠকে মোট ১১টি প্রস্তাবে আলোচনা হয়, যার মধ্যে ১০টি প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। বৈঠকে অগ্নিবীরদের পুলিশ নিয়োগে ২০% অনুভূমিক সংরক্ষণ দেওয়ার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়াও নয়ডায় হালদিराम স্ন্যাক্সের ৬৬২ কোটি টাকার বৃহৎ বিনিয়োগ প্রকল্পকেও সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও রাজ্যে জনবিতরণ ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণ, পর্যটন খাতে উদ্ভাবন এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি সংক্রান্ত আরও অনেক প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে।
অগ্নিবীরদের পুলিশ নিয়োগে ২০% সংরক্ষণ এবং বয়সসীমায় ছাড়
উত্তরপ্রদেশ সরকার অগ্নিবীরদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ক্যাবিনেট সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে অগ্নিবীররা পুলিশ নিয়োগে ২০% অনুভূমিক সংরক্ষণ পাবে। এই সংরক্ষণ সকল শ্রেণীর – SC, ST, OBC এবং সাধারণ – ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। এছাড়াও অগ্নিবীরদের নিয়োগের বয়সসীমায় তিন বছরের ছাড় দেওয়া হবে।
অন্যান্য রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সুরক্ষা বাহিনীর তুলনায় এটি উত্তরপ্রদেশের একটি আলাদা উদ্যোগ, যেখানে সাধারণত অগ্নিবীরদের মাত্র ১০% পর্যন্ত সংরক্ষণ দেওয়া হয়। এই পদক্ষেপ অগ্নিবীরদের সামাজিক-অর্থনৈতিক সবলীকরণের জন্য একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র অগ্নিবীরদের চাকরি পেতে সাহায্য করবে না, বরং সমাজে তাদের সম্মান ও স্বীকৃতিও লাভ করবে।
হালদিराम-এর বৃহৎ প্রকল্প অনুমোদিত
ক্যাবিনেট বৈঠকে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব পাস করা হয়। নয়ডায় স্থাপিত হালদিराम স্ন্যাক্সের ৬৬২ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই বিনিয়োগ কেবলমাত্র কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে না, বরং রাজ্যের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতেও অবদান রাখবে। এছাড়াও আরও পাঁচটি কোম্পানিকে আর্থিক প্রণোদনার সুবিধা দেওয়া হবে।
উদ্যোগমন্ত্রী নন্দী এই সময় বলেন যে ‘ইনভেস্ট উত্তরপ্রদেশ’ -এর অধীনে এ পর্যন্ত যত প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, সেগুলি এখন বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং বিরোধী দলের অভিযোগেরও জবাব পাওয়া যাচ্ছে। সোনভদ্রে অবস্থিত ACC সহ মোট ছয়টি কোম্পানির প্রস্তাবেও সম্মতি সৃষ্টি হয়েছে, যা রাজ্যের শিল্প উন্নয়নে আরও গতি দেবে। এই সমস্ত পদক্ষেপের ফলে উত্তরপ্রদেশে শিল্প বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত হবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।
জনবিতরণ ব্যবস্থা সুদৃঢ় করার জন্য ২০০০ অন্নপূর্ণা ভবন
সাধারণ মানুষকে যথাযথ ও সাশ্রয়ী মূল্যে রেশন সরবরাহ করার জন্য সরকার ব্যাপক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে। রাজ্যের প্রতিটি জেলায় কমপক্ষে ৭৫টি অন্নপূর্ণা ভবন তৈরি করা হবে, যেখান থেকে সুবিধাভোগীরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে রেশন পাবেন। বর্তমানে দুই হাজার অন্নপূর্ণা ভবনের নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। অর্থমন্ত্রী সুরেশ খান্না জানান, এই প্রকল্প রাজ্যের খাদ্য সুরক্ষাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং দরিদ্র পরিবারের কাছে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে।
পর্যটন খাত পেতে চলেছে নতুন আকার
পর্যটন বিভাগ রাজ্যে ক্ষুদ্র পরিসরে পর্যটন আবাসন সুবিধা বৃদ্ধির জন্য ‘হোম স্টে লজ’ -এর অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব রেখেছিল, যা ক্যাবিনেট অনুমোদন করেছে। এখন উত্তরপ্রদেশে এক থেকে ছয়টি কক্ষবিশিষ্ট হোম স্টে লজ তৈরি করা যাবে। এই হোম স্টে লজ-এর অনুমতি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (DM) এবং পুলিশ অধীক্ষক/উপ পুলিশ অধীক্ষক (SP/SSP) দেবেন।
এই উদ্যোগ রাজ্যের গ্রামীণ ও ছোট শহরগুলিতে পর্যটন বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এতে স্থানীয় লোকেরা অতিরিক্ত আয়ের উৎস পাবে এবং পর্যটকরা সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক আবাসনের বিকল্প পাবেন।
যোগী সরকারের সমগ্র উন্নয়নমূলক দৃষ্টিভঙ্গি
এই সিদ্ধান্তগুলির মাধ্যমে যোগী আদিত্যনাথ সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে রাজ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর উন্নয়নের জন্যও অব্যাহত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। অগ্নিবীরদের চাকরিতে সংরক্ষণ এবং বয়সসীমায় ছাড় দেওয়ার পদক্ষেপ তার জীবন্ত উদাহরণ। এর সাথে সাথে, শিল্পকে উৎসাহিত করা, জনবিতরণ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং পর্যটন সম্প্রসারণের দিকে নেওয়া এই সিদ্ধান্তগুলি উত্তরপ্রদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।