তেজ প্রতাপ যাদবের জয়চন্দ্ বিবাদে বিহারের রাজনীতিতে তোলপাড়। বিজেপি, জেডিইউ এবং আরজেডি নেতাদের মধ্যে অভিযোগ-প্রত্যভিযোগের ধারাবাহিকতা অব্যাহত। তেজ প্রতাপ দলের ভেতরে জয়চন্দ্ থাকার কথা বলেছেন।
বিহার রাজনীতি: বিহারের রাজনীতিতে এই সময় একটি শব্দ বারবার আলোচনায় রয়েছে: ‘জয়চন্দ্’। এই শব্দকে কেন্দ্র করেই রাজনৈতিক বক্তব্য এবং অভিযোগ-প্রত্যভিযোগের নতুন ধারা শুরু হয়েছে। আরজেডি নেতা তেজ প্রতাপ যাদবের সাম্প্রতিক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলি এই বিষয়টিকে আরও উস্কে দিয়েছে। বিজেপি, জেডিইউ এবং আরজেডির ভেতরে অভিযোগের ধারা চলছে, যার ফলে বিহারের রাজনীতিতে নতুন মোড় এসেছে।
তেজ প্রতাপ যাদবের বড় অভিযোগ: জয়চন্দ্ দলের ভেতরেও আছে
তেজ প্রতাপ যাদব তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মাধ্যমে দলের কিছু নেতার উপর জয়চন্দ্ হওয়ার অভিযোগ এনেছেন। তিনি লিখেছেন যে, তার ভাই তেজস্বী যাদবকে তাকে আলাদা করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তেজ প্রতাপ বলেছেন, ‘‘আমার অর্জুনকে আমার থেকে আলাদা করার স্বপ্ন দেখা ওরা, তোমরা কখনো তোমাদের ষড়যন্ত্রে সফল হতে পারবে না।’’ তিনি এটাও বলেছেন যে, জয়চন্দ্ সর্বত্র আছে, দলের ভেতরেও এবং বাইরেও।
তেজ প্রতাপ তার মা-বাবা লालু যাদব এবং রাবড়ী দেবীকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন যে, তারা-ই তার আসল জগৎ। তিনি লিখেছেন যে, কিছু লোভী মানুষ তার মা-বাবা এবং দলের মধ্যে ফাটল ফেলার চেষ্টা করছে। তার এই বক্তব্য দলের ভেতরে চলমান অভ্যন্তরীণ টানাপড়েনের দিকে ইঙ্গিত করছে।
বিজেপি প্রশ্ন তুলেছে: বিহারের আসল জয়চন্দ্ কে?
তেজ প্রতাপের জয়চন্দ্ বক্তব্যের পর বিজেপি এই বিষয়টি আঁকড়ে ধরেছে। বিজেপি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টার প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেছে যে, বিহারের আসল জয়চন্দ্ কে? রাজ্য সভাপতি সম্রাট চৌধুরী বলেছেন যে, জয়প্রকাশ নারায়ণ এবং কারপুরী ঠাকুরের আদর্শের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে কংগ্রেসের কোলে বসা ব্যক্তিই আসল জয়চন্দ্। তিনি লालু যাদবের নাম না নিয়ে তাঁর উপর আক্রমণ করেছেন।
বিজেপি সরাসরি এই প্রশ্ন তুলেছে যে, কি বিহারের ধ্বংসের জন্য দায়ী নেতা-ই আসল জয়চন্দ্। বিজেপির পোস্টার এবং নেতাদের বক্তব্য এই বিতর্ককে আরও তীব্র করে তুলেছে।
জেডিইউও আক্রমণ করেছে
জেডিইউও এই সমগ্র বিতর্কে রাজনৈতিক সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছে। দল তাদের আনুষ্ঠানিক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে লিখেছে যে, সমাজবাদী আন্দোলনের নেতাদের প্রতারণা করে কংগ্রেসের সাথে মিলে বিহারকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া আসল জয়চন্দ্ কে জানে না এমন কে আছে? জেডিইউর এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তারাও এই বিষয়টিকে উসকে দেওয়ার পিছনে পড়ে থাকতে চায় না।
তেজ প্রতাপ যাদব বনাম সংজয় যাদব: আরজেডিতে অভ্যন্তরীণ সংঘাত?
বিহারের রাজনীতির जानকাররা মনে করেন যে, তেজ প্রতাপ যাদবের ইঙ্গিত আরজেডির রাজ্যসভা সাংসদ সংজয় যাদবের দিকে। তেজ প্রতাপ এবং সংজয় যাদবের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনা চলে আসছে। সংজয় যাদবকে তেজস্বী যাদবের খুব কাছের মানুষ বলে মনে করা হয়। এই অবস্থায় তেজ প্রতাপের বারবার জয়চন্দ্ শব্দ ব্যবহার কোনো কোনোভাবে এই অভ্যন্তরীণ টানাপড়েনের দিকেই ইঙ্গিত করে।
তেজ প্রতাপ যাদবের বহিষ্কার: একটি নতুন বিতর্ক
উল্লেখ্য যে, তেজ প্রতাপ যাদবকে সম্প্রতি আরজেডি থেকে ছয় বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এর কারণ ছিল তার ব্যক্তিগত জীবন সংক্রান্ত বিতর্ক, যেখানে তিনি অনুষ্কা যাদবের সাথে তার कथিত সম্পর্কের কথা প্রকাশ করেছিলেন। দলের জ্যেষ্ঠ নেতা আব্দুল বারী সিদ্দিকী তাঁর বহিষ্কারের চিঠি জারি করেছিলেন। লालু যাদব এটিকে সামাজিক এবং পারিবারিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে বলেছিলেন।
জিতেন্দ্রনাথ মাঁঝীর তীব্র আক্রমণ
এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্রনাথ মাঁঝীও তাঁর মতামত দিয়েছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে লিখেছেন যে, বিহারে দলিত, পিছিয়ে পড়া এবং বঞ্চিতদের গণহত্যা করা আসল জয়চন্দ্ কে ছিল, তা সকলেই জানে। তিনি বলেছেন যে, সকলেই চিনে তাদেরকে যারা সেই সময় বিহারের ক্ষমতার শীর্ষে ছিলেন এবং যারা বিহারকে জঙ্গল রাজ্যে ঠেলে দিয়েছিলেন।