সুপ্রিম কোর্ট ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের কিছু ধারার সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা একটি রিট আবেদনে কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিশ জারি করেছে। এই মামলার শুনানি প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ করছে।
ওয়াকফ আইন: সুপ্রিম কোর্ট ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের কিছু ধারার সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনে কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিশ জারি করেছে। এই মামলাটি এখন ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা অন্যান্য অনুরূপ রিট আবেদনের সাথে যুক্ত হয়েছে। প্রধান বিচারপতি বি. আর. গাভাইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আবেদনকারী কর্তৃক আইনটি চ্যালেঞ্জ করার ক্ষেত্রে বিলম্বের বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
সুপ্রিম কোর্টে ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইন সংক্রান্ত চলমান শুনানি
১৯৯৫ সালের ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনের ধারাগুলিকে কেন্দ্র করে সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে জবাব চেয়েছে। রিট আবেদনের শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি বি. আর. গাভাই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মসিহের বেঞ্চ আইনটি চ্যালেঞ্জ করার ক্ষেত্রে হওয়া বিলম্বের বিষয়ে কঠোর মন্তব্য করেছে। আবেদনকারীর আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায় জানিয়েছেন যে আবেদনে ২০১৩ সালের সংশোধনীও চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে।
এর জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ২০১৩ সালের সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করতেও ১২ বছর হয়ে গেছে এবং এই বিলম্বের কারণে মামলা খারিজ হতে পারে। এর জবাবে আইনজীবী যুক্তি দিয়েছেন যে সুপ্রিম কোর্ট ইতিমধ্যেই ১৯৯১ সালের পূজা স্থল আইন এবং ১৯৯২ সালের জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন আইনকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা আবেদনের শুনানি করছে, তাই মামলাটি অনেকদিন ধরে চলছে।
আবেদনকারীর যুক্তি: আইনে ধর্মীয় বৈষম্য রয়েছে
আবেদনকারী ২০১৩ সালের সংশোধনী দ্বারা সংশোধিত ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনের কিছু ধারার সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই আইন ভারতের সংবিধানের ১৪ (সমতা অধিকার), ১৫ (বৈষম্য নিষেধ), ২১ (জীবন ও স্বাধীনতা অধিকার), ২৫ (ধর্মীয় স্বাধীনতা), ২৬ ও ২৭ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।
আবেদনে মূলত যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে ওয়াকফ আইন কেবলমাত্র মুসলমানদের ধর্মীয় সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণ করে, অন্যদিকে দেশের অন্যান্য ধর্মের কোনও ধর্মীয় সম্পত্তির জন্য এমন কোনও আলাদা আইন নেই। এতে আইনটি ধর্মীয় ভিত্তিতে বৈষম্যমূলক হয়ে উঠেছে। আবেদনকারী আরও বলেছেন, এই আইন মুসলমানদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে, যা সংবিধানের সমতার নীতির পরিপন্থী এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার লঙ্ঘন করে। আইনের এই প্রকৃতি দেশে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সমতার নীতিকে দুর্বল করে তোলে।
ওয়াকফ আইনের গুরুত্ব ও বিতর্ক
১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইন মুসলিম ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন। এই আইন মুসলমানদের ধর্মীয় ও দাতব্য সম্পত্তির দেখভাল ও সুরক্ষার জন্য একটি আইনি কাঠামো সরবরাহ করে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এটি বিতর্কিত, কারণ অন্যান্য ধর্মের ধর্মীয় সম্পত্তির জন্য এমন কোনও বিশেষ আইন নেই।
ওয়াকফ সম্পত্তি মুসলিম সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আইনের অধীনে এই সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা ওয়াকফ বোর্ডের মাধ্যমে করা হয়, যা সরকারের তত্ত্বাবধানে কাজ করে। তবে এই ব্যবস্থার উপর অভিযোগ রয়েছে যে কখনও কখনও সম্পত্তির দুর্ব্যবহার হয় বা ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতির ঘটনা ঘটে।
সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান ও পরবর্তী পদক্ষেপ
প্রধান বিচারপতি বি. আর. গাভাইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রিট আবেদনের শুনানি করে বিলম্বের ব্যাপারে কঠোর সতর্কতা জারি করেছে এবং বলেছে, আবেদনকারী যদি দ্রুত যুক্তি উপস্থাপন না করে তাহলে মামলা খারিজ হতে পারে। আদালত রিট আবেদনটিকে ১৯৯৫ সালের আইনকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা অন্যান্য অনুরূপ রিট আবেদনের সাথে যুক্ত করেছে, যাতে মামলার শুনানি একসাথে হতে পারে এবং বিষয়টির সম্পূর্ণ নিষ্পত্তি হতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের এই শুনানি ভারতে ধর্মীয় সম্পত্তি আইনের ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করতে পারে। যদি আদালত আইনের কিছু ধারাকে অসংবিধানিক ঘোষণা করে, তাহলে তাতে কেবলমাত্র মুসলমানদের ধর্মীয় সম্পত্তির ব্যবস্থাপনার ব্যবস্থা পরিবর্তিত হবে না, বরং অন্যান্য ধর্মের জন্যও একই রকম আইন তৈরির দাবী বাড়তে পারে।