সুপ্রিম কোর্টের গুরুত্বপূর্ণ রায়: গণধর্ষণে যৌথ উদ্দেশ্য থাকলে সকলেই দোষী

🎧 Listen in Audio
0:00

সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে বলেছে যে, যদি গণধর্ষণে অপরাধ করার যৌথ উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে অপরাধে জড়িত সকলেই দোষী হবে, এমনকি যদি কোনও অভিযুক্ত নিজেই কোনও যৌন কাজ না করে থাকে।

Penetrative Act: সুপ্রিম কোর্ট গণধর্ষণের মামলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক মন্তব্য করেছে, যেখানে তারা বলেছে যে, যদি কোনও গণধর্ষণে অভিযুক্তরা যৌথ উদ্দেশ্যে অপরাধে জড়িত থাকে, তাহলে একজন অভিযুক্ত কর্তৃক সম্পাদিত যৌন অপরাধ (penetrative act) এর জন্য সমস্ত অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে, তারা নিজেরাই সেই অপরাধে অংশগ্রহণ করেছে কি না তার উপর নির্ভর করে না। এই রায় গণধর্ষণের দোষীদের বিরুদ্ধে দেওয়া সাজা বহাল রেখেছে এবং বিচার প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় তুলে ধরেছে।

সুপ্রিম কোর্টের গুরুত্বপূর্ণ রায়

সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় অভিযুক্তদের আবেদন খারিজ করে গণধর্ষণের দোষীদের সাজা বহাল রেখেছে। আদালত স্পষ্ট করে বলেছে যে, যদি কোনও অপরাধ যৌথ উদ্দেশ্য (common intention) এর অধীনে সম্পাদিত হয়, তাহলে তাতে জড়িত সকলেই দোষী হবে, এমনকি যদি একজন অভিযুক্তই যৌন আক্রমণ করে থাকে। আদালতের মতে, অভিযোগকারী পক্ষকে প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই যে প্রতিটি অভিযুক্ত ব্যক্তিগতভাবে যৌন আক্রমণে অংশগ্রহণ করেছে।

আদালত ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা 376(2)(g) উল্লেখ করে এই রায় দিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, যদি গণধর্ষণের মামলা হয় তাহলে একজন অভিযুক্ত কর্তৃক সম্পাদিত কাজের ভিত্তিতে সকল অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে। এর অর্থ হল, যদি অভিযুক্তরা সম্মিলিতভাবে এই অপরাধটি করে থাকে এবং তাদের মধ্যে যৌথ উদ্দেশ্য ছিল, তাহলে তাদের সকলকে সমানভাবে দোষী বলে গণ্য করা হবে।

মধ্যপ্রদেশের কটনি মামলা: ২০০৪ সালের ঘটনা

এই মামলা মধ্যপ্রদেশের কটনি জেলার সাথে যুক্ত, যা ২৬ এপ্রিল ২০০৪ সালে ঘটেছিল। ভুক্তভোগী একটা বিবাহে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে তাকে অপহরণ করা হয় এবং তাকে বন্দি করে গণধর্ষণ করা হয়। ভুক্তভোগীর অভিযোগ ছিল যে অভিযুক্তরা তাকে জোর করে অপহরণ করে এবং কারাগারে বন্দি করে তার সাথে যৌন আক্রমণ করে। এই মামলায় দুইজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

২৫ মে ২০০৫ সালে সেসন কোর্ট এই দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ এবং অন্যান্য গুরুতর ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছিল। পরে, উচ্চ আদালত তাদের সাজা নিশ্চিত করে। এর পরে এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছে, যেখানে আদালত তাদের রায়ে অভিযুক্তদের আবেদন খারিজ করে এবং তাদের সাজা বহাল রাখে।

গণধর্ষণে 'কমন ইন্টেনশন'-এর গুরুত্ব

সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল 'কমন ইন্টেনশন' (যৌথ উদ্দেশ্য) এর গুরুত্ব। আদালত বলেছে যে, যদি কোনও অপরাধ যৌথ উদ্দেশ্যে সম্পাদিত হয়, তাহলে সেই মামলায় সকল অভিযুক্তকে একই রকম দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে। এই ধরনের রায় থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, গণধর্ষণের মামলায় একজন অভিযুক্ত কর্তৃক সম্পাদিত যৌন আক্রমণের জন্য সকল অভিযুক্ত সমানভাবে দায়ী হবে।

আদালত এই মামলায় অভিযোগকারী পক্ষের যুক্তি গ্রহণ করেছে যে, অভিযুক্তদের পরিকল্পিতভাবে এই অপরাধটি সম্পাদন করা তাদের যৌথ উদ্দেশ্য এবং ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে, এবং সেইজন্য সকল অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করা হবে।

আদালত আবেদন খারিজ করেছে

সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় অভিযুক্তদের আবেদন খারিজ করে বলেছে যে, মামলার সাক্ষ্য এবং ঘটনাবলী থেকে এটা স্পষ্ট যে, ভুক্তভোগীকে অপহরণ করা হয়েছে, তাকে ভুলভাবে বন্দি করা হয়েছে এবং তার সাথে যৌন আক্রমণ করা হয়েছে। এই সকল তথ্য ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা 376(2)(g) এর উপাদানগুলিকে পূর্ণ করে।

আদালত বলেছে যে, শুধুমাত্র এটা প্রমাণ করা যে অভিযুক্ত যৌন কাজ করেছে, তা প্রয়োজন নয়, বরং এটা দেখা প্রয়োজন যে, অপরাধটি সম্পাদনের সময় কি অভিযুক্ত যৌথ উদ্দেশ্যে অপরাধ করেছে। এই রায় থেকে এটা প্রমাণিত হয় যে, গণধর্ষণে সকল অভিযুক্ত একই রকম দোষী হয়, এমনকি যদি তাদের মধ্যে একজনই অপরাধটি করে থাকে।

সুপ্রিম কোর্টের এই রায় কেন গুরুত্বপূর্ণ?

সুপ্রিম কোর্টের এই রায় কেবলমাত্র বিচারিক দৃষ্টিকোণ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি সমাজে বর্ধমান গণধর্ষণ এবং ধর্ষণের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তাও। যৌথ উদ্দেশ্যের নীতি এইভাবে প্রয়োগ করা অপরাধীদের তাদের কাজের জন্য আরও দায়ী করে তোলে, এবং এটি নিশ্চিত করে যে অপরাধীদের তাদের অপরাধের জন্য সমানভাবে শাস্তি দেওয়া হবে।

এই রায় সেইসব মামলার জন্যও একটি নির্দেশিকা, যেখানে অপরাধীরা তাদের ভূমিকা কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করে এবং দাবি করে যে তারা সরাসরি অপরাধে অংশগ্রহণ করেনি। এমন পরিস্থিতিতে, আদালতের এই রায় নিশ্চিত করে যে, যদি তারা মিলেমিশে অপরাধ করে থাকে তাহলে সকল অভিযুক্তকে সমানভাবে শাস্তি দেওয়া হবে।

Leave a comment