ভারতের ‘সমুদ্রযান’: ২০২৬ সালে গভীর সমুদ্রে মানববাহী অভিযানের যাত্রা শুরু

🎧 Listen in Audio
0:00

জাতীয় সমুদ্র প্রযুক্তি সংস্থান (এনআইওটি)-এর পরিচালক বালাজী রামকৃষ্ণন মঙ্গলবার জানিয়েছেন যে, গভীর সমুদ্রে পাঠানো মানববাহী সাবমেরিন ২০২৬ সালের শেষের মধ্যে যাত্রা শুরু করতে পারে।

নয়াদিল্লি: ভারত বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির দিকে আরও একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিতে চলেছে। এতদিন পর্যন্ত মহাকাশে পতাকা উত্তোলনকারী ভারতের দৃষ্টি এখন গভীর সমুদ্রের রহস্য উন্মোচনে কেন্দ্রীভূত। 'সমুদ্রযান' নামক এই মিশন হবে দেশের প্রথম মানববাহী গভীর সমুদ্র অভিযান, যা সমুদ্রের পৃষ্ঠ থেকে ৬০০০ মিটার (৬ কিলোমিটার) নিচে গিয়ে অদেখা জগতের খোঁজ করবে।

জাতীয় সমুদ্র প্রযুক্তি সংস্থান (NIOT) কর্তৃক স্বদেশী প্রযুক্তি দিয়ে এই অভিযান তৈরি করা হয়েছে এবং পৃথিবী বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ২০২৬ সালের শেষের মধ্যে এটি উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা রয়েছে। সংস্থার পরিচালক ডঃ বালাজী রামকৃষ্ণন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মানুষ যাবে মহাসাগরের গভীরে

সমুদ্রযানের মাধ্যমে তিনজন বিজ্ঞানীকে গভীর সমুদ্র ভ্রমণে পাঠানো হবে, যেখানে তারা সমুদ্রের গঠন, জীববৈচিত্র্য, খনিজ এবং পুষ্টিকর জলবায়ুতন্ত্রের অধ্যয়ন করবেন। এটি একটি ২৫ টন ভারী, চতুর্থ প্রজন্মের সাবমার্সিবল (সাবমেরিন), যার নির্মাণে অত্যাধুনিক টাইটানিয়াম হাল (পাত্র) ব্যবহার করা হয়েছে। এর নকশা অত্যধিক জলচাপ এবং তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা রাখে।

মিশনের বৈশিষ্ট্য

  • ৬০০০ মিটার গভীরে মানুষ পাঠানোর ক্ষমতা
  • সাবমেরিনে তিনজন বিজ্ঞানী থাকবেন
  • ৮ ঘন্টা সমুদ্রের ভেতরে অভিযান চলবে (৪ ঘন্টা ভেতরে যাওয়া এবং ৪ ঘন্টা বের হওয়া)
  • উচ্চ চাপ এবং অন্ধকার পরিবেশেও কাজ করার ক্ষমতা
  • নমুনা সংগ্রহ, জীববৈচিত্র্য শনাক্তকরণ এবং খনিজ মূল্যায়ন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করবে

ভারত পাবে বিশ্ব সমুদ্র বিজ্ঞানে নতুন মাইলফলক

ডঃ রামকৃষ্ণনের মতে, এই মিশন ভারতের সমুদ্র বিজ্ঞান এবং গভীর সমুদ্র গবেষণায় বিপ্লব সাধন করতে পারে। এতদিন পর্যন্ত গভীর সমুদ্রের অন্বেষণ আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স এবং চীন সহ সীমিত দেশের কাজ ছিল। ভারতের এই প্রচেষ্টা গভীর সমুদ্র গবেষণার বিশ্ব মঞ্চে তাকে সशক্তভাবে উপস্থাপন করবে। সমুদ্রযানের পূর্ণ উৎক্ষেপণের আগে ৫০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে পাঠানো হবে। এই পরীক্ষা চলতি বছরের শেষের মধ্যে করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এর সফলতার পর পরবর্তী ধাপ হবে ৬০০০ মিটার গভীরে মানুষ পাঠানো। 'সমুদ্রযান' মিশনের পাশাপাশি ভারত গভীর সমুদ্রে ইলেকট্রনিক নজরদারির মাছ ধরার খাঁচা ব্যবস্থাও উদ্ভাবন করেছে। এই প্রযুক্তি রিয়েল টাইমে মাছের বৃদ্ধি, জীববৈচিত্র্য এবং জলের গুণমান পরিমাপ করতে সক্ষম। এই উদ্যোগ ভারতের সমুদ্র খাদ্য নিরাপত্তাকে নতুন দিশা দেবে এবং নীল অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই মিশন?

  • সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের মূল্যায়ন: গভীরে লুকিয়ে থাকা অনন্য প্রজাতির শনাক্তকরণ করা সম্ভব হবে।
  • খনিজ সম্পদের অন্বেষণ: সমুদ্রের তলদেশে থাকা মূল্যবান ধাতু ও খনিজ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যাবে।
  • জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষণ: সমুদ্রের গভীর স্তর থেকে পরিবেশে ঘটে যাওয়া পরিবর্তন বোঝার জন্য সাহায্য পাওয়া যাবে।
  • সমুদ্র পর্যটন এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে অবদান: ভবিষ্যতে গভীর সমুদ্র পর্যটন এবং কৌশলগত কৌশলে এই জ্ঞান সহায়ক হতে পারে।

‘সমুদ্রযান’ শুধু একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নয়, বরং এটি ভারতের বিশ্ব বিজ্ঞানে নতুন পরিচয় সৃষ্টির দিকে একটি অনন্য প্রচেষ্টা। যেমন চন্দ্রযান ও গগনযান ভারতকে মহাকাশ ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে, তেমনি ‘সমুদ্রযান’ আমাদের মহাসাগরের গভীরে লুকিয়ে থাকা সম্ভাবনার সাথে যুক্ত করবে।

Leave a comment