প্রয়াগরাজ কুম্ভমেলায় ভিড়ের ঘটনায় ৩০ তীর্থযাত্রীর মৃত্যু: প্রশাসনের ব্যর্থতা ও কারণগুলি

🎧 Listen in Audio
0:00

প্রয়াগরাজ মহাকুম্ভে ছোটখাটো ভিড়ের ঘটনায় ৩০ জন তীর্থযাত্রীর মৃত্যু, ৯০ জনেরও বেশি আহত। সতর্কতা সত্ত্বেও ব্যর্থ হল প্রস্তুতি। দুর্ঘটনার পেছনে কী ছিল প্রধান কারণ? পুরো তথ্য জেনে নিন।

মহাকুম্ভে ভিড়ের ঘটনা: মৌনী আমাবস্যার অমৃত স্নানের জন্য কোটি কোটি তীর্থযাত্রী প্রয়াগরাজে এসেছিলেন। ব্রহ্মমুহূর্তে সংগম নোজে অত্যধিক ভিড় জমে যায়, যার ফলে ছোটখাটো ভিড়ের ঘটনা ঘটে। এই দুর্ঘটনায় ৩০ জন তীর্থযাত্রীর মৃত্যু হয়, এবং ৯০ জনেরও বেশি আহত হয়। প্রশাসনের সতর্কতা সত্ত্বেও এমন পরিস্থিতি কেন তৈরি হল? আসুন জেনে নেই দুর্ঘটনার ৬টি বড় কারণ।

১- সংগম নোজের দিকে পাঠানো তীর্থযাত্রীরা

মহাকুম্ভে ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশাসন হোল্ডিং এরিয়া তৈরি করেছিল, কিন্তু সম্ভবত সেগুলির সঠিক ব্যবহার হয়নি। রাতে স্নান না হওয়ার কারণে তীর্থযাত্রীরা বিভিন্ন স্থানে বসে ছিলেন, কিন্তু রাত ৮ টার পর তাদের সংগমের দিকে পাঠানো শুরু হয়। এর ফলে রাত ৯ টা থেকেই অত্যধিক ভিড় জমে এবং ছোটখাটো ভিড়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়।

২- প্রশাসনের একমুখী পরিকল্পনা কাজ করেনি

প্রশাসন একমুখী পরিকল্পনা তৈরি করেছিল, যেখানে তীর্থযাত্রীদের একই দিকে যাওয়ার এবং অন্য দিক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু সংগম উপরিপথেই ভিড় বাড়তে থাকে এবং অক্ষয়বট পথ দিয়ে তীর্থযাত্রীরা বের হয়নি। এর ফলে একই পথে অত্যধিক চাপ পড়ে এবং ছোটখাটো ভিড়ের ঘটনা ঘটে।

৩- পান্টুন সেতুগুলি বন্ধ রাখাও বড় ভুল হয়েছে

তীর্থযাত্রীদের জন্য ৩০টি পান্টুন সেতু তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু এর মধ্যে ১০টির বেশি সেতু সবসময় বন্ধ রাখা হয়েছিল। এর ফলে ঝুঁসি থেকে আসা তীর্থযাত্রীদের কয়েক কিলোমিটার পথ পায়চারি করতে হয়েছিল। ক্লান্তির কারণে তারা সংগম নোজে বসে পড়ে, যার ফলে ভিড় আরও বেড়ে যায় এবং ছোটখাটো ভিড়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়।

৪- প্রধান পথগুলিতে ব্যারিকেডিংয়ের ফলে সমস্যা বেড়েছে

প্রশাসন কুম্ভ এলাকায় অনেক সড়ক চওড়া করেছে, কিন্তু তার মধ্যে কিছু সড়ক বন্ধ রাখা হয়েছে। তদুপরি অনেক পথে ব্যারিকেডিং করা হয়েছে, যার ফলে তীর্থযাত্রীদের ক্রমাগত চলতে হয়েছে। ক্লান্তির কারণে তারা সংগম তীরে বসে পড়ে এবং সময়মতো বের হতে পারেনি, যার ফলে ভিড় বাড়তে থাকে।

৫- নিরাপত্তাবাহিনীর ক্যাম্প অনেক দূরে ছিল

সিআইএসএফের ক্যাম্প সেক্টর-১০ তে ছিল, কিন্তু অন্যান্য সেক্টরে স্থাপন করা হয়নি। ছোটখাটো ভিড়ের ঘটনা ঘটলে সিআইএসএফকে ডাকা হয়, কিন্তু ভিড় অত্যধিক হওয়ার কারণে নিরাপত্তাবাহিনীকে সেক্টর-৩ তে পৌঁছাতে অনেক সময় লেগে যায়। যদি প্রতিটি সেক্টরে নিরাপত্তাবাহিনীর ক্যাম্প থাকত, তাহলে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা যেত।

৬- তীর্থযাত্রীদের রাত ৮ টা থেকে পাঠানো ভুল হয়েছে

মৌনী আমাবস্যা স্নানের জন্য তীর্থযাত্রীরা সংগম তীরের কাছে তাড়াতাড়ি পৌঁছে যান এবং সেখানেই থাকেন। প্রশাসনকে সংগমের কাছে আরও ব্যবস্থা করার কথা ছিল। যদি তীর্থযাত্রীদের রাত ৮ টার পরিবর্তে রাত ২ টার পর সংগমের দিকে পাঠানো হত, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকত।

মেলা কর্মকর্তা ও ডিআইজি কী বলেছেন?

মেলা কর্মকর্তা বিজয় কিরণ আনন্দ এবং ডিআইজি वैभव कृष्ण-এর মতে, রাত ১ থেকে ২ টার মধ্যে ভিড় দ্রুত বেড়ে যায়। আখড়ার ব্যারিকেডিং ভেঙে পড়ে এবং তীর্থযাত্রীরা হুড়োহুড়িতে একজনের উপর আরেকজন চড়ে যায়। এই কারণে অনেকেই পিষ্ট হয়ে মারা যায়। প্রশাসন অবিলম্বে গ্রিন করিডর তৈরি করে এবং অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে আহতদের হাসপাতালে পাঠায়, কিন্তু ৩০ জন তীর্থযাত্রীর প্রাণ বাঁচানো যায়নি।

প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে

- এই দুর্ঘটনার পর প্রশাসন অনেক পরিবর্তন এনেছে:

- মেলা এলাকা সম্পূর্ণ নো-ভেহিকেল জোন ঘোষণা করা হয়েছে।

- ভিভিআইপি পাস বাতিল করা হয়েছে।

- একমুখী রুটের কঠোরভাবে পালন করা হচ্ছে।

- প্রতিবেশী জেলা থেকে আসা যানবাহনকে সীমান্তেই থামানো হচ্ছে।

- গাড়ি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

Leave a comment