২৬/১১ মুম্বই সন্ত্রাসবাদী হামলার একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তাহাওয়ুর হুসেন রানার বিরুদ্ধে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA) তাদের তদন্ত আরও জোরদার করেছে। সম্প্রতি রানার কণ্ঠস্বর ও লেখার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যা হামলা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণের সাথে মিলিয়ে দেখা হবে।
নয়াদিল্লি: জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA) শনিবার ২৬/১১ মুম্বই সন্ত্রাসবাদী হামলার অভিযুক্ত তাহাওয়ুর হুসেন রানার কণ্ঠস্বর ও হস্তাক্ষরের নমুনা সংগ্রহ করেছে। কণ্ঠস্বরের নমুনা NIA-এর সদর দপ্তরে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে রেকর্ড করা হয়েছে, আর হস্তাক্ষরের নমুনা দিল্লির পটিয়ালা হাউস আদালতে বিচারকের সামনে নেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় রানাকে তার নাম, ঠিকানা, A থেকে Z পর্যন্ত বর্ণ এবং ১ থেকে ১০ পর্যন্ত সংখ্যা লিখতে বলা হয়েছিল। এই নমুনার মোট পাঁচটি কপি তৈরি করা হয়েছে।
NIA সূত্রের মতে, কণ্ঠস্বরের নমুনা সেই লাইভ রেকর্ডিংয়ের সাথে মিলিয়ে দেখার জন্য নেওয়া হয়েছে যা ইতোমধ্যে আমেরিকান আদালতে উপস্থিত রয়েছে। কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের সময় NIA দলের সাথে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরাও উপস্থিত ছিলেন। যদিও তাহাওয়ুর হুসেন রানা তদন্তে তেমন সহযোগিতা করছেন না, তবুও তিনি নমুনা দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন না। প্রথমে তিনি নমুনার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, কিন্তু পরে সম্মতি জানিয়ে নমুনা দিয়েছেন।
দুটি আলাদা স্থানে নমুনা সংগ্রহ
NIA রানার কণ্ঠস্বরের নমুনা তাদের সদর দপ্তরে সংগ্রহ করেছে, যেখানে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে তাকে তার পুরানো বক্তৃতা এবং কল রেকর্ডিংগুলি পুনরাবৃত্তি করতে বলা হয়েছিল। অন্যদিকে, হস্তাক্ষরের নমুনা দিল্লির পটিয়ালা হাউস আদালতে সংগ্রহ করা হয়েছে, যেখানে রানাকে A থেকে Z পর্যন্ত এবং ১ থেকে ১০ পর্যন্ত ইংরেজিতে লিখতে বলা হয়েছিল। তার নাম এবং ঠিকানাও লিখতে বলা হয়েছিল এবং এগুলি সব পাঁচবার পুনরাবৃত্তি করে পাঁচটি কপি তৈরি করা হয়েছিল।
NIA সূত্রের মতে, এই সমস্ত নমুনা আমেরিকান তদন্ত সংস্থার কাছে জমা রানার অডিও রেকর্ডিং এবং নথিপত্রগুলির সাথে ফরেনসিক মিলনের জন্য পাঠানো হবে। যদি এদের মধ্যে মিল পাওয়া যায়, তবে এটি রানার ভূমিকাকে আরও দৃঢ় করবে।
বিরোধ ছাড়াই নমুনা প্রদান, তদন্তে সীমিত সহযোগিতা
যদিও তাহাওয়ুর রানা তদন্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছেন না, তবুও কণ্ঠস্বর ও হস্তাক্ষরের নমুনা দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি কোনো প্রতিরোধ দেখাননি। প্রাথমিকভাবে তিনি এই প্রক্রিয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, কিন্তু পরে তদন্ত সংস্থার অনুরোধে তিনি নমুনা দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। বিশেষ ব্যাপার হলো, রানা এই নমুনাগুলি ইংরেজিতে দিয়েছেন, কারণ NIA-এর কাছে উপলব্ধ নথিপত্র এবং রেকর্ডিংগুলিও ইংরেজিতে।
পরবর্তী পদক্ষেপ: লাই ডিটেক্টর এবং পলিগ্রাফ পরীক্ষা?
তদন্ত সংস্থার সূত্রের মতে, তাহাওয়ুর রানার লাই ডিটেক্টর এবং পলিগ্রাফ পরীক্ষাও করা হতে পারে। কিন্তু এই পরীক্ষা তখনই সম্ভব হবে যখন রানাকে বিচারিক হেফাজতে তিহার জেলে পাঠানো হবে। NIA ইতোমধ্যেই তাকে ৩০ দিনের পুলিশ হেফাজতে রেখেছে। প্রথমে ১৮ দিন এবং তারপর ১২ দিনের হেফাজতের সাথে। এখন আইনগতভাবে তার হেফাজতের সময় বাড়ানো যাবে না।
আমেরিকা থেকে প্রত্যর্পণের পর ভারতে শক্তিশালী পদক্ষেপ
উল্লেখ্য, তাহাওয়ুর রানাকে আমেরিকা থেকে প্রত্যর্পণের মাধ্যমে ভারতে আনা হয়েছে, যেখানে তার উপর ২৬/১১ হামলার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার গুরুতর অভিযোগ আছে। রানা পাকিস্তানি-আমেরিকান সন্ত্রাসবাদী ডেভিড কোলম্যান হেডলীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। হেডলি ইতোমধ্যেই এই হামলায় তার জড়িত থাকা স্বীকার করেছেন এবং রানার নামও উল্লেখ করেছেন।
এখন যখন রানার কণ্ঠস্বর ও হস্তাক্ষরের নমুনা সংস্থার কাছে আছে, তদন্তে একটি দৃঢ় ভিত্তি পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এই প্রযুক্তিগত প্রমাণ যদি হামলা সংক্রান্ত অন্যান্য উপকরণের সাথে মিল খায়, তবে রানার জন্য শাস্তির পথ আরও কাছে চলে আসতে পারে।