মেরঠে সৌরভ হত্যাকাণ্ড: প্রেমিকের সাথে ১১ দিন গোপনে থাকার পর স্বামীর নৃশংস হত্যা

🎧 Listen in Audio
0:00

সৌরভ হত্যাকাণ্ডে প্রতিদিনই নতুন নতুন তথ্য উঠে আসছে, যা ঘটনাকে আরও জটিল করে তুলছে। এই সনসনীখেল হত্যাকাণ্ডে এবার নতুন তথ্য সামনে এসেছে—মুস্কান ৫ বছর আগে তার স্বামী ও মেয়েকে ছেড়ে ১১ দিন ধরে প্রেমিক সাহিলের সাথে গোপনে সময় কাটিয়েছিল।

মেরঠ: শহরকে কাঁপিয়ে তোলা সৌরভ হত্যাকাণ্ডে পুলিশ নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে। বাল্যবন্ধু সাহিল ও মুস্কানের সম্পর্ক প্রথমে প্রেমে পরিণত হয়, পরে ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে। পুলিশ তদন্তে জানা গেছে, মুস্কানের স্বামী সৌরভকে পথ থেকে সরানোর জন্য সাহিল ও মুস্কান নির্মম হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।

প্রেম ও বিশ্বাসঘাতকতার গল্প

সাহিল ও মুস্কানের বন্ধুত্ব ছিল বাল্যকাল থেকে, কিন্তু বিবাহের পরও সেই সম্পর্ক শেষ হয়নি। ২০২১ সালে মুস্কান সাহিলের সাথে থাকার পরিকল্পনা করে এবং তার স্বামী সৌরভ ও মেয়ে পিহুকে ছেড়ে মেরঠ থেকে পালিয়ে যায়। দুজনে গুরুগ্রামে গোপনে থাকছিল, কিন্তু সৌরভ পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে, যার পর ১১ দিন পর পুলিশ তাদের খুঁজে পায়। তখন বাধ্য হয়ে মুস্কান সৌরভের কাছে ফিরে আসে, কিন্তু সাহিলের সাথে দেখা করা চালিয়ে যায়।

সৌরভ মুস্কান ও সাহিলের সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছিল। সে মুস্কানের উপর সাহিল থেকে দূরে থাকার চাপ প্রয়োগ করেছিল, কিন্তু সেই সম্পর্ক শেষ হয়নি। ৩ মার্চ মুস্কান তার মেয়ে পিহুকে মায়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় এবং তারপর সাহিলের সাথে মিলে সৌরভকে হত্যা করে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, সৌরভের উপর ১০টির বেশি ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল, কিন্তু তার গলা কাটা না হওয়া পর্যন্ত সে জীবিত ছিল। হত্যার পর লাশের টুকরো করে ড্রামে ভরে সিমেন্ট ও রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে সেটাকে সিল করে দেওয়া হয়।

পুলিশ তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য পাওয়া গেছে

পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি ছুরি, ড্রাম, মেঝে পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্য এবং দুই আসামীর মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে। এই মোবাইল থেকে হোয়াটসঅ্যাপ ও স্ন্যাপচ্যাটের আলাপের স্ক্রিনশট নেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে তাদের মধ্যে ষড়যন্ত্রের পর্দা উন্মোচিত হয়েছে। সৌরভের ভাই রাহুল ওরফে ববলু দাবি করেছেন, এই হত্যাকাণ্ডে শুধুমাত্র মুস্কান ও সাহিল নয়, তাদের পরিবারের লোকজনও জড়িত।

তার অভিযোগ, সৌরভ প্রতি মাসে লন্ডন থেকে টাকা পাঠাত, যার মাধ্যমে মুস্কানের পরিবারের খরচ চলত। এমনকি সৌরভের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এখনও ৬ লক্ষ টাকা জমা আছে, যা মুস্কানের পরিবারের জন্য একটি বড় কারণ হতে পারে। মেরঠ এসএসপি বিপিন তাদা বলেছেন, এই মামলা ‘এসআর কেস’ হিসেবে দায়ের করা হয়েছে, অর্থাৎ আসামীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ নজরদারি ও তদারকি চালিয়ে যাবে। তিনি বলেছেন, সব প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হবে এবং আসামীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।

সৌরভের ভাই ববলু বলেছেন, যতক্ষণ না মুস্কান ও সাহিলকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা শান্তি পাবেন না। তিনি বলেছেন, সৌরভের হত্যা একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল এবং এর পিছনে অনেকে জড়িত থাকতে পারে। এখন পুরো পরিবারের দৃষ্টি আদালতের রায়ের উপর নির্ভরশীল।

Leave a comment