মথুরা বিবাদে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট রাধারাণীকে পক্ষভুক্ত করার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। আদালত বলেছে, পুরাণ আইনি সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য করা যাবে না।
কৃষ্ণ জন্মভূমি মামলা: মথুরার শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি ও শাহী ঈদগাহ মসজিদ বিবাদে ইলাহাবাদ হাইকোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রীনা এন সিংহের সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে, যেখানে দেবী শ্রীরাধারাণীকে বিবাদে পক্ষভুক্ত করার দাবি করা হয়েছিল। আদালত তার রায়ে বলেছে, শুধুমাত্র পুরাণের ভিত্তিতে রাধারাণীকে পক্ষভুক্ত করা যাবে না, কারণ পৌরাণিক গ্রন্থে উল্লেখিত ঘটনাগুলি শ্রুতি-প্রতিষ্ঠিত কথার উপর ভিত্তি করে, যা সরাসরি সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য করা যায় না।
হাইকোর্ট স্পষ্ট করে বলেছে যে, পৌরাণিক গ্রন্থে বর্ণিত কাহিনী ও ঘটনাগুলি সাধারণত কথামূলক, সরাসরি প্রমাণের উপর নয়। তাই এগুলিকে আদালতে আইনি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। আদালত আরও বলেছে, যদি কাউকে পক্ষভুক্ত করা হয়, তাহলে তার জমি সংক্রান্ত দৃঢ় নথিভুক্ত প্রমাণ থাকতে হবে, শুধুমাত্র পৌরাণিক কাহিনীর উপর ভিত্তি করে দাবি নয়।
আবেদনের দাবি কী ছিল?
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রীনা এন সিংহ আবেদন দাখিল করে বলেছিলেন যে, শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি ও ঈদগাহ মসজিদ বিবাদে রাধারাণীকেও পক্ষভুক্ত করা উচিত। তার দাবি ছিল, পুরাণ ও গ্রন্থে রাধারাণীকে ভগবান কৃষ্ণের আত্মা ও প্রথম পত্নী বলা হয়েছে। ব্রহ্মার দ্বারা শ্রীকৃষ্ণ ও রাধারাণীর বিবাহের কথাও বলা হয়েছে। তার যুক্তি ছিল, মথুরার জন্মভূমিতে রাধারাণীরও ঠিক ততটাই অধিকার আছে যতটুকু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের।
রীনা এন সিংহ যুক্তি দিয়েছিলেন যে, ১৩.৩৭ একর বিরোধী জমিতে যেখানে শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি ও শাহী ঈদগাহ মসজিদ অবস্থিত, সেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রাধারাণী উভয়েই বিরাজমান, তাই রাধারাণীকেও পক্ষভুক্ত করা উচিত।
আদালতের যুক্তি ও পুরাণের উপর মন্তব্য
হাইকোর্ট তার রায়ে স্পষ্ট করে বলেছে যে, পৌরাণিক তথ্য, চিত্রণ ও কাহিনীগুলি গ্রাফিক প্রতিনিধিত্ব, যা কোনো ঘটনার সরাসরি সাক্ষ্য নয়। এগুলিকে ঐতিহাসিক নথি বা আইনি ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। আদালত আরও বলেছে যে, কোনো ব্যক্তি বা দেবদেবীকে কোনো বিবাদে পক্ষভুক্ত করার জন্য সরাসরি ও দৃঢ় প্রমাণ প্রয়োজন।
শুধুমাত্র পৌরাণিক গ্রন্থে লেখা কাহিনীর উপর ভিত্তি করে এই দাবি করা যাবে না যে, রাধারাণীকে বিবাদে পক্ষভুক্ত করা উচিত।
আদালতের রায়ের পর বিবাদ ও প্রতিক্রিয়া
হাইকোর্টের এই রায়ের পর বিবাদ ও বিতর্ক শুরু হয়েছে। আবেদনকারী আইনজীবী রীনা এন সিংহ রায়ের সাথে অসম্মতি জানিয়ে বলেছেন যে, অযোধ্যা মামলায়ও পুরাণ ও গ্রন্থকে ভিত্তি করেই রায় দেওয়া হয়েছিল। তার বক্তব্য, তিনি হাইকোর্টের এই রায় সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করবেন।
অন্যদিকে, অনেক সাধু ও ধর্মীয় সংগঠনও হাইকোর্টের রায়ের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। নিরঞ্জনী আখড়ার পীঠাধিশ্বর আচার্য মহামণ্ডলেশ্বর স্বামী কৈলাশানন্দ গিরি বলেছেন, পুরাণে লেখা কথাগুলি শুধু কাহিনী নয়, বরং প্রামাণিক ইতিহাস। তিনি বলেছেন, আদালতের সম্মান করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য, কিন্তু এই রায়ের সাথে সম্মত হওয়া যাবে না।