পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার মোথাবাড়িতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর ইন্টারনেট বন্ধ, ৩৪ জন গ্রেফতার। হাইকোর্ট রিপোর্ট তলব করেছে, পুলিশ মোতায়েন। ঈদ-রামনবমীকে মাথায় রেখে ধারা ১৪৪ জারি করা হয়নি।
মোথাবাড়ি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা: পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার মোথাবাড়ি অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর প্রশাসন নিরাপত্তা জোরদার করেছে। ইন্টারনেট সেবা এখনও বন্ধ রয়েছে এবং ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গত ২৭ মার্চ হিন্দুদের বাড়িঘর, দোকানপাট এবং গাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট এবং হিংসার ঘটনার পর পুলিশ এখন পর্যন্ত ৩৪ জন দাঙ্গাবাজকে গ্রেফতার করেছে।
হাইকোর্ট রিপোর্ট চেয়েছে
কলকাতা হাইকোর্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্টকে ৩ এপ্রিলের মধ্যে হিংসার সাথে সম্পর্কিত বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আদালত রাজ্য প্রশাসনকে সতর্ক করে বলেছে যে, ঘটনার সংবেদনশীলতা বিবেচনা করে সতর্কতার সাথে কাজ করতে হবে এবং হিংসা-পীড়িতদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
স্থানীয় বিধায়ক এবং প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
মন্ত্রী এবং স্থানীয় TMC বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা বিভিন্ন সম্প্রদায় এবং গোষ্ঠীর সাথে শান্তি বৈঠক করেছি, এবং বৈঠক বেশ ইতিবাচক হয়েছে। আমরা আশা করছি পরিস্থিতি শীঘ্রই স্বাভাবিক হবে।” প্রশাসন এটাও স্পষ্ট করেছে যে, আসন্ন রামনবমী এবং ঈদকে মাথায় রেখে ধারা ১৪৪ জারি করা হয়নি, কিন্তু জনসমাগম হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রশাসন নিরাপত্তা জোরদার করেছে, পুলিশের সতর্ক নজরদারি
রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ এবং র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (RAF)-এর তিনটি কোম্পানি কালিয়াচক ব্লকের সংবেদনশীল এলাকায় অবিরাম গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ মহানির্দেশক রাজেশ যাদব জানিয়েছেন, পুলিশ বাহিনী বাজারসহ সমগ্র এলাকায় নজরদারি করছে এবং দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় পুলিশের বার্তা
মালদা পুলিশ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘X’ -এ পোস্ট করে জানিয়েছে যে, অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান এবং গ্রেফতারি চলছে। এছাড়াও, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সংবেদনশীল এলাকায় পুলিশ পিকেট দেওয়া হয়েছে এবং মোবাইল ইউনিটকে সতর্ক রাখা হয়েছে।
২৪ ঘণ্টা চলছে পুলিশের গাড়ি চালানো
জেলা পুলিশের মতে, সমগ্র এলাকায় ২৪ ঘণ্টা গাড়ি চালানো হচ্ছে এবং কোনও সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের উপর তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত এই হিংসার সাথে সম্পর্কিত ছয়টি মামলা রুজু হয়েছে এবং মোট ৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং পুলিশের কঠোর নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয়দের বক্তব্য
স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বুধবার সন্ধ্যায় একটি ধর্মীয় মিছিলের সময় একটি পূজাস্থলের পাশ দিয়ে যাওয়ার পর পরিস্থিতি অবনতি হয়। এরপর দাঙ্গাবাজরা অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর এবং মানুষের উপর হামলা চালায়। এই সময় অনেক দোকানপাট এবং গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
নাগপুরেও সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল
উল্লেখ্য, এর আগে ১৭ মার্চ মহারাষ্ট্রের নাগপুরেও ব্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল। সেসময় একটি ধর্মীয় গ্রন্থের অবমাননার অপপ্রচার ছড়িয়ে পড়ার পর শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় পথর ছোড়া এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল। পুলিশ এই হিংসায় ১১০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেফতার করেছিল, যার মধ্যে মূল অভিযুক্ত ফহিম খানও ছিল।