কেরলের ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচন: কংগ্রেসের জন্য এক অগ্নিপরীক্ষা

🎧 Listen in Audio
0:00

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন কংগ্রেসের জন্য কেরলের রাজনীতিতে এক বিরাট পরীক্ষা হতে চলেছে। রাজ্যে ঐতিহ্যগতভাবে শক্তিশালী অবস্থানে থাকা কংগ্রেসকে এবার সিপিএম এবং বিজেপি উভয়ের কাছ থেকেই তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

নতুন দিল্লি: কেরলের রাজনীতিতে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন কংগ্রেসের জন্য এক বিরাট পরীক্ষা হতে চলেছে। রাজ্যে ঐতিহ্যগতভাবে শক্তিশালী অবস্থানে থাকা কংগ্রেসকে এবার সিপিএম এবং বিজেপি উভয়ের কাছ থেকেই তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে কংগ্রেসের ঐতিহ্যগত ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা তীব্রতর হয়ে উঠেছে।

বিজেপি এবং সিপিএম-এর দ্বৈত আক্রমণ

কেরলে বিজেপি এবং সিপিএম কংগ্রেসকে দুর্বল করার জন্য আলাদা আলাদা কৌশল অবলম্বন করেছে। যেখানে বিজেপি হিন্দু এবং খ্রিস্টান ভোটারদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে, সেখানে সিপিএম কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সমর্থকদের মধ্যে তাদের আধিপত্য আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। ২০২১ সালে ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয়বার বিধানসভা নির্বাচন জিতে সিপিএম কেরলে নির্বাচনী চক্র ভেঙে দিয়েছিল।

এখন দল তাদের কৌশল পরিবর্তন করে হিন্দু ভোটারদের শক্তিশালী করার দিকে অগ্রসর হয়েছে। সিপিএম-এর চেষ্টা হল বিজেপির প্রভাব কমিয়ে তাদের ঐতিহ্যগত সমর্থকদের কংগ্রেসের পক্ষে যাওয়া থেকে বিরত রাখা। এইজন্য সিপিএম হিন্দু ভোটারদের, বিশেষ করে এঝাভা সম্প্রদায়কে আকর্ষণ করার প্রচারণা তীব্রতর করেছে।

বিজেপির বর্ধিত প্রভাব

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ত্রিশুর আসন জিতে বিজেপি ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা কেরলের রাজনীতিতে একটি বড় শক্তি হিসাবে উঠে আসছে। বিজেপি এখন খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে তাদের দলে আনার জন্য সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করছে। সম্প্রতি দল তিনজন খ্রিস্টান নেতাকে জেলা সভাপতি করে নিয়োগ করে এই বার্তা দিয়েছে যে বিজেপি এখন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যেও তাদের আধিপত্য স্থাপন করছে। এছাড়াও, বিজেপির হিন্দুত্ব এজেন্ডার বিরুদ্ধে দলিত এবং অনগ্রসর সম্প্রদায়দের একত্রিত করার সিপিএম-এর চেষ্টা কংগ্রেসের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

কংগ্রেসের জন্য সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধির প্রয়োজন

কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দূর করা এবং তাদের ঐতিহ্যগত ভোটারদের ধরে রাখা। ২০২১ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর কংগ্রেসকে আত্মমূল্যায়ন করার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু দল এখনও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে বলে মনে হয় না। কেরলে কংগ্রেসের আরেকটি ধাক্কা লেগেছিল যখন তাদের ঐতিহ্যগত মিত্র কেরল কংগ্রেস (এম) বামফ্রন্টের সাথে জোটবদ্ধ হয়েছিল।

এর ফলে কংগ্রেসের খ্রিস্টান ভোটারদের উপর প্রভাব পড়েছে। বিজেপিও এই ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। এই অবস্থায় কংগ্রেসকে এই সম্প্রদায়ের আস্থা ধরে রাখার জন্য নতুন কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে হবে। কংগ্রেসের মিত্র ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লীগ (আইইউএমএল)ও এখন নতুন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।

সিপিএম মুসলিম সম্প্রদায়কে আকর্ষণ করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে, যার ফলে আইইউএমএল-এর অবস্থান দুর্বল হতে পারে। যদি সিপিএম এতে সফল হয়, তাহলে এটি কংগ্রেসের জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে।

২০২৬ বিধানসভা নির্বাচন কংগ্রেসের জন্য অগ্নিপরীক্ষা

২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন কংগ্রেসের জন্য কেবলমাত্র একটি নির্বাচনী লড়াই নয়, বরং অস্তিত্বের লড়াই। যদি দল তাদের ঐতিহ্যগত ভোটারদের একত্রিত রাখতে না পারে, তাহলে কেরলে তাদের শক্তিশালী অবস্থান হারানোর ঝুঁকি রয়েছে। কংগ্রেসকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দূর করে সংগঠিতভাবে নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও, দলকে তাদের সামাজিক ভিত্তি শক্তিশালী করার জন্য কার্যকর নীতি তৈরি করতে হবে।

কেরলে কংগ্রেসের আর বেশি সময় নেই। যদি দল সঠিক কৌশল অবলম্বন না করে, তাহলে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে। বিজেপি এবং সিপিএম-এর দ্বৈত কৌশল কংগ্রেসের সমস্যা বৃদ্ধি করেছে, এবং এখন দলকে তাদের জনসমর্থন রক্ষার জন্য কার্যকর কৌশলের উপর কাজ করতে হবে।

Leave a comment