ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রার ভিডিওতে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি একটি বিশেষ ধরণের প্যাটার্ন খুঁজে পেয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকার তথ্য, আইএসআই মডিউল এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণগুলি তদন্তের আওতায় রয়েছে।
জ্যোতি মালহোত্রা: ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রা সংক্রান্ত ঘটনা এখন আরও গুরুতর হয়ে উঠছে। হরিয়ানা পুলিশ, এনআইএ এবং আইবি-র যৌথ দলের তদন্তে এমন অনেক তথ্য উঠে এসেছে যা কেবলমাত্র জাতীয় নিরাপত্তার দিক থেকে উদ্বেগের কারণ নয়, বরং একটি আন্তর্জাতিক গুপ্তচরবৃত্তির দিকেও ইঙ্গিত করে।
সূত্রমতে, তদন্তকারী সংস্থাগুলি জ্যোতি মালহোত্রার তৈরি ভিডিওতে একটি বিশেষ ধরণের প্যাটার্ন খুঁজে পেয়েছে। জ্যোতির অধিকাংশ ভিডিও ধর্মীয় স্থানকেন্দ্রিক বলে দাবি করা হলেও, তাতে ধর্মীয় তথ্য কম এবং সীমান্তবর্তী এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিস্তারিত তথ্য বেশি দেখা গেছে। এই প্যাটার্নটি একটি গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয়।
ভিডিওতে সীমান্তবর্তী এলাকার নিরাপত্তার উপর ফোকাস
তদন্তে সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, জ্যোতি মালহোত্রার ভিডিওতে ধর্মীয় স্থানগুলির চেয়ে সীমান্ত এলাকার কর্মকাণ্ডকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত, ভারত-আফগানিস্তান সীমান্তের মতো সংবেদনশীল এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর মোতায়েন, চেকপোস্ট এবং চলাচলকে হাইলাইট করা হয়েছে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এটি কোন সাধারণ ট্রাভেল ভ্লগিং ছিল না, বরং সীমান্তবর্তী এলাকার নিরাপত্তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছিল। এছাড়াও, আফগানিস্তান সম্পর্কিত একটি ব্লগেও একই প্যাটার্ন দেখা গেছে।
আইএসআই মডিউলের সাথে যুক্ত থাকার সন্দেহ
তদন্তের সময় দেখা গেছে যে, জ্যোতির কর্মকাণ্ড পাকিস্তানের গোপন সংস্থা আইএসআই-এর সাথে যুক্ত একটি বড় মডিউলের অংশ হতে পারে। এই মডিউলের উদ্দেশ্য ছিল সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গোপন তথ্য সংগ্রহ করা এবং ভারতের ভুল ছবি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উপস্থাপন করা।
জানা গেছে, এই নেটওয়ার্কে বেশিরভাগ এমন লোক জড়িত ছিল যারা ফ্রিল্যান্স, স্বাধীন সাংবাদিক বা ইউটিউবারের ভূমিকায় ছিলেন। জ্যোতির উপরও সন্দেহ রয়েছে যে, তিনি এই নেটওয়ার্কের জন্য কাজ করছিলেন।
জেরায় অনেক তথ্য লুকানোর চেষ্টা, বিভ্রান্ত করার চেষ্টা
যৌথ তদন্ত দল জ্যোতি মালহোত্রাকে কয়েক ঘন্টা জেরা করেছে। এই সময় তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লুকানোর চেষ্টা করেছেন এবং তদন্তকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টাও করেছেন।
তদন্তে এই বিষয়টিও উঠে এসেছে যে, জ্যোতি পাকিস্তানী অপারেটিভ দানিশের সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে মিথ্যা বলেছেন। জ্যোতির মোবাইল থেকে কিছু এমন অ্যাপ পাওয়া গেছে যার চ্যাট ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিজে থেকেই ডিলিট হয়ে যায়। এতে সন্দেহ আরও গভীর হয়েছে।
ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে ডিভাইস
জ্যোতির দুটি মোবাইল ফোন এবং একটি ল্যাপটপ ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে যাতে ডিলিট করা ডেটা পুনরুদ্ধার করা যায়। জানা প্রয়োজন কাদের সাথে তিনি তথ্য ভাগ করেছেন এবং কোন কোন সংবেদনশীল ভিজ্যুয়াল পাঠিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক ভ্রমণও প্রশ্নের মুখে
তদন্তকারী সংস্থাগুলি এখন জ্যোতির আন্তর্জাতিক ভ্রমণগুলিরও পর্যালোচনা শুরু করেছে। তিনি পাকিস্তান, চীন, বাংলাদেশ, নেপাল, থাইল্যান্ড, দুবাই, ইন্দোনেশিয়া এবং ভুটান ভ্রমণ করেছেন। বিশেষ করে পাকিস্তান ও চীন ভ্রমণ নিয়ে সংস্থাগুলি গভীর নজর রাখছে।
জ্যোতি ১৭ মে ২০১৪ সালে পাকিস্তান বৈশাখী উৎসব কভার করতে গিয়েছিলেন। তবে উৎসব শেষ হওয়ার পরও তিনি ২০ দিন অতিরিক্ত সেখানেই থেকেছিলেন, যা সন্দেহের বিষয়। ফিরে আসার এক মাসের মধ্যেই তিনি চীন ভ্রমণ করেছিলেন। এখন সংস্থাগুলি জানার চেষ্টা করছে, পাকিস্তানেই কি চীন ভ্রমণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল?